ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফলে বর্তমানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের প্রেক্ষাপটে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) অর্থে নির্মিত প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃত্ব চসিককে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে সংবাদ সম্মেলনে করেছে চট্টগ্রামের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি’র শিক্ষার্থীরা।
শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বিকাল ৪টায় প্রেসক্লাবে এম এ খালেক মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয়কে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ও তাঁর পরিবারমুক্ত করার দাবি তোলেন তারা। এ সময় শিক্ষার্থীরা অতি দ্রুত সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ড গঠনসহ সাত দফা দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা জানান, রাষ্ট্রের অর্থে নির্মিত প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্রের কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে। একইসাথে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিপক্ষে যারা প্রত্যক্ষভাবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর নির্বিচারে নিন্দনীয় হামলা চালিয়েছে তাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পুনর্বাসনে যে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে তা অনতিবিলম্বে বন্ধ করার দাবি জানান তারা।
সংবাদ সম্মেলনে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী বাইত উল্লাহ বায়াত বলেন, ‘ছাত্র আন্দোলনে যারা বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে আমরা তাদের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছি। একইসাথে স্বৈরাচারের দোসরদের পদত্যাগ করতে হবে।
ছাত্র আন্দোলনের যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে ভাড়া করা চিহ্নিত ছাত্রলীগের গুণ্ডাদের নিয়ে সমাবেশ ও প্রকাশ্যে হত্যার হুমকি ও ছাত্র আন্দোলনে আমাদের ৭ জন যোদ্ধাকে বহিষ্কারের ভয়ভীতির তীব্র নিন্দা জানাই। একই সঙ্গে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রকৃত মালিককে স্থানান্তর করে অতি দ্রুত ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করতে হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীদের উত্থাপিত ৭ দফা দাবি গুলো হলো—
১) অতি দ্রুত সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদ গঠন করতে হবে।২) বিগত সময়ের অবৈধ নিয়োগসহ সকল অনিয়ম ও দুর্নীতির নিরপেক্ষ সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।৩) জমি সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তি পূর্বক স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণে অতি দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
৪) শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে ইউজিসি আইন ২০১০ অনুসরণ করে নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে।৫) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিপক্ষে যারা প্রত্যক্ষভাবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর নির্বিচারে নিন্দনীয় হামলা চালিয়েছে তাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পুনর্বাসনে যে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে তা অনতিবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।৬) সংস্কারপন্থী ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে অবস্থানকারী শিক্ষার্থীদের প্রবেশ নিষিদ্ধকারী এবং হত্যার হুমকিদাতাদের চিন্তিত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৭) শিক্ষার্থীদের প্রবেশ নিষিদ্ধকারী এবং হত্যার হুমকিদাতাদের চিন্তিত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আইন বিভাগের শিক্ষার্থী মুসফিক, বায়াত, মাওয়াজ, ব্যবসায় অনুষদের ফারহাদ, হাসান ইকবাল, আইনান তাজরিয়ান, জুনায়েদ আসাদসহ বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
উল্লেখ্য, ২০০১ সালের ৫ ডিসেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন ও অনুমতি চেয়ে আবেদন করে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। পরবর্তীতে ২০০২ সালের ২১ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার অনুমোদন পায় সংস্থাটি। সেসময় মেয়র ছিলেন এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী।
ফলে পদাধিকার বলে ২০১০ সাল পর্যন্ত টানা আট বছর তিনি প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন। ২০১০ সালের মেয়র নির্বাচনে বিএনপি নেতা এম মনজুর আলমের কাছে পরাজয়ের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান পদ হারান মহিউদ্দিন চৌধুরী। কিন্তু সেসময় মেয়র মনজুর আলম চসিকের সাধারণ সভায় মহিউদ্দিন চৌধুরীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টির সদস্য হিসেবে মনোনীত করেন।
২০১৫ সালের মেয়র নির্বাচনে জয়ী হন আওয়ামী লীগ নেতা আ জ ম নাছির উদ্দীন। তারই ধারাবাহিকতায় তৎকালীন চসিক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনকে ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান সম্বোধন করে ২০১৫ সালের ১৪ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘাটতি পদগুলো পূরণে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে চিঠি দেয়। এরপরই মূলত মহিউদ্দিন চৌধুরীর পরিবারের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃত্ব নিয়ে দ্বন্দ্ব তৈরি হয় চসিকের। কারণ নাছিরের সঙ্গে মহিউদ্দিনের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিরোধ ছিল পুরনো।
পরবর্তীতে ২০১৯ সালে শিক্ষা উপমন্ত্রীর দায়িত্ব পান মহিউদ্দিনপুত্র নওফেল।
এইচএ