বৈরি আবহাওয়ার সঙ্গে বিদ্যুৎ এর যেন এক অদ্ভুত বৈরিতা। বিরূপ আবহাওয়ায় যেমন প্রাণ ফেরে প্রকৃতিতে তেমনি কিছুটা অদ্ভুত নিয়মে মানবজীবন থেকে নিভে যায় কৃত্রিম লন্ঠন ‘বিদ্যুৎ’। বিদ্যুৎ নির্ভর স্মার্ট জীবন যেন মুহুর্তেই রং হারায়। ব্যাটারী চার্জশূন্য মহামূল্যবান মোবাইল কিংবা ল্যাপটপ হয়ে পরে মূল্যহীন।
গতকাল থেকে শুরু হওয়া প্রকৃতির বিরুপ আচরণের ছাপ পড়েছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) হলে থাকা শিক্ষার্থীদের মাঝে। দু'দিন ধরে বিদ্যুৎ এর এমন ছিনিমিনি খেলায় বেকায়দায় এই ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা। ফোন, ল্যাপটপ কিংবা পাওয়ার ব্যাংক সবকিছুই দেউলিয়া! এমন পরিস্থিতিতে দৈনন্দিন জীবনের সবচেয়ে ব্যবহৃত ফোনটি চার্জ দিতে শিক্ষার্থীদের সহায় শিবরাত্রির সলতে হিসেবে ভূমিকা রাখা ছাত্র-শিক্ষক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র (টিএসসিসি)।
গতকাল থেকেই টিএসসিসি’র প্রায় প্রতিটা বৈদ্যুতিক পয়েন্টে মাল্টিপ্লাগ যোগে ফোন চার্জ দিতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের। হলে বিদ্যুৎ না থাকার কারণেই হঠাৎই টিএসসিসি হয়ে উঠে শিক্ষার্থীদের উপলক্ষ-বিহীন মেলবন্ধনের পটভূমি। এছাড়াও ফোন চার্জে বসিয়ে অলস সময়টুকু অনেকেই পার করেন আড্ডায় কিংবা কার্ড খেলে। এমন অনাকাঙ্ক্ষিত আড্ডাকে ক্যাম্পাস লাইফ এর অন্যতম সেরা স্মৃতির তালিকা বলছেন আড্ডা পিপাসু বেশকিছু শিক্ষার্থী।
চার্জ দিতে আসা ইমরান বলেন, আসলে একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাত থেকে বিদ্যুত না থাকাটা দুর্ভাগ্যের। আমরা এখন ২০২৪ সালে আছি যেখানে ডিজিটাল ডিভাইস ছাড়া একমুহূর্তও সম্ভব না। হলে বিদ্যুৎ না থাকায় ফোন, ল্যাপটপ সব কিছুর চার্জ শেষ। মনে হচ্ছে পুরো দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন। তাই এখানে আসলাম চার্জ দিতে।
অপর শিক্ষার্থী আরিফ বলেন, প্রাকৃতিক দূর্যোগে বিদ্যুৎ বিভ্রাট হতেই পারে তাই বলে যে সারাদিনেও বিদ্যুৎ আসবে না বা জেনারেটর দেওয়া যাবে এমনটা তো হওয়ার কথা না। বিদ্যুৎ না থাকায় অনেক কাজ করতে পারছি না। আমার এসাইনমেন্ট রেডি করতে হবে কিন্তু ল্যাপটপের চার্জ না থাকাও সেটার কাজও করতে পারছিলাম না। রিপোর্টার্স ইউনিটির পেজে দেখলাম টিএসসিতে জেনারেটরের লাইন আছে। তাই চার্জ দিতে এসেছি।
বিদ্যুৎ না থাকার দায়টা আমাদের না উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রকৌশলী এ কে এম শরীফ উদ্দিন বলেন, ‘ক্যাম্পাসের সঞ্চালন লাইনের কোন ত্রুটি নেই। ক্যাম্পাসের বাইরে একজায়গায় ঝড়ে গাছের ডাল পড়ে ৩৩ কেভি লাইনের তার পুড়ে ছিড়ে গেছে। গতকাল রাতে মূল তারের পাশ দিয়ে ঝুলন্ত আরেকটি তার দিয়ে সংযোগ দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল কিন্তু অত্যন্ত ঝুকিপূর্ণ হওয়ায় বন্ধ রাখা হয়েছে। আবহাওয়া একটু ভালো হলেই মেরামত শুরু হবে।
এইচএ