সুস্থ জীবনের জন্য হৃদপিণ্ড সুস্থ রাখা জরুরি। একটুখানি অবহেলা যেমন হার্টের বড় ক্ষতি করতে পারে, তেমনি সংশয়ে ফেলে দিতে পারে আপনার জীবনকেই। তাই সুস্থ জীবনের হার্ট ভালো রাখার পদ্ধতিগুলো মেনে চলা উচিত। হার্ট ভালো রাখতে কী কী করতে পারেন, আসুন জেনে নেওয়া যাক:
সঠিক খাদ্যাভ্যাস মেনে চলা:
সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও খাদ্য উপাদান হৃদযন্ত্র ভালো রাখার শ্রেষ্ঠ উপায়।
হৃৎবান্ধব খাদ্যাভ্যাস হলো সঠিক পুষ্টি গ্রহণের প্রথম পদক্ষেপ। যুক্তরাষ্টের মিনোসটার ইউনিভার্সিটি অব রচেস্টরের মায়ো ক্লিনিকের মতে, খাদ্য তালিকায় বেশি করে শাকসবজি, ফল, শস্যদানা রাখা হৃদপিণ্ড সুস্থ থাকার অন্যতম শর্ত। এছড়া স্বাস্থ্যকর চর্বি যেমন অলিভ অয়েল, বাদাম এবং সামুদ্রিক মাছ খাওয়া হার্টের জন্য উপকারী। লাল মাংস, প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং অতিরিক্ত লবণ পরিহার করা উচিত।
পর্যাপ্ত ব্যায়াম:
অ্যামেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের পরামর্শ অনুযায়ী, সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট মাঝারি মাত্রার ব্যায়াম, যেমন হাঁটাহাঁটি, সাইকেল চালানো বা সাঁতার, হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। এর মাধ্যমে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং কোলেস্টেরল কমে যায়।
ধূমপান ত্যাগ:
ধূমপান হার্টের জন্য অন্যতম ক্ষতিকর অভ্যাস। ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজশনের মতে, ধূমপান হৃদরোগের প্রধান ঝুঁকি।ধূমপান বন্ধ করলে ধীরে ধীরে রক্তচাপ ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমে আসে এবং শ্বাসপ্রশ্বাসের গুণগত মান উন্নত হয়।
মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করা:
অতিরিক্ত মানসিক চাপ হার্টের ওপর নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করে। হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুলের এক গবেষণায় দেখা গেছে, যোগব্যায়াম এবং নিয়মিত বিশ্রাম মানসিক চাপ কমিয়ে হার্টকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ হার্টের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, তাই মানসিক শান্তি বজায় রাখা জরুরি।
পর্যাপ্ত ঘুম:
সুস্থ হার্টের জন্য রাতে পর্যাপ্ত ঘুম অত্যন্ত জরুরি।
ন্যাশনাল স্লিপ ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিরাতে অন্তত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। ঘুমের অভাব উচ্চ রক্তচাপ হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ে।
নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা করা:
উচ্চ রক্তচাপ নিঃশব্দে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিংস বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা করা এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা হার্ট ভালো রাখার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে স্বাস্থ্যকর খাদ্য ও ব্যায়াম অপরিহার্য।
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা:
অতিরিক্ত ওজন হৃদযন্ত্রকে ওপর অতিরিক্ত চাপে রাখে। ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে। যুক্তরাষ্ট্রের ক্লেভল্যান্ড ক্লিনিকের তথ্য অনুযায়ী, নিয়মিত ব্যায়াম এবং সঠিক খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা সহজ। এর ফরে হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়।
অ্যালকোহল নিয়ন্ত্রণ:
অতিরিক্ত অ্যালকোহল গ্রহণ হৃদযন্ত্রের ক্ষতি করতে পারে। অতিরিক্ত অ্যালকোহল হার্টের পেশির দুর্বলতা এবং উচ্চ রক্তচাপের কারণ হতে পারে। তাই অ্যালকোহল গ্রহণ কমিয়ে দেওয়া বা একেবারেই বন্ধ করার পক্ষে মত দেন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞরা।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ:
ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগের মধ্যে সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। আমেরিকান ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বেশি। সঠিক খাদ্যাভ্যাস, ব্যায়াম এবং ওষুধের মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা হার্ট ভালো রাখার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হার্ট ভালো রাখতে হলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ রাখুন। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরিামর্শ নিন।
নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা:
প্রতি বছর বা নির্দিষ্ট সময় অন্তর হার্টের জন্য প্রয়োজনীয় পরীক্ষাগুলি করা উচিত, যেমন কোলেস্টেরল পরীক্ষা, ইসিজি ইত্যাদি। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা আপনার হৃদযন্ত্রের অবস্থা সম্পর্কে আপনি ওয়াকিবহাল থাকবনে, সমস্যার শুরুতেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারবেন।
সুতরাং হার্ট ভালো রাখতে হলে স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা, খাদ্যাভ্যাস এবং নিয়মিত শারীরিক চর্চা মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংস্থাগুলোর এই সুপারিশগুলো হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে।
সূত্র: জন হপকিংস মেডিসিন
এফএস