প্রতি বছর ২৫ নভেম্বর বিশ্বব্যাপী নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস হিসেবে পালন করা হয়। এই দিনটি নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে সচেতনতা সৃষ্টি এবং প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করার জন্য পালিত হয়। ১৯৮১ সালে প্রথমবার এই দিনটি পালন শুরু হয় যা পরে ১৯৯৯ সালে জাতিসংঘ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়।
এই দিনটি মূলত ১৯৬০ সালে ডোমিনিকান রিপাবলিকের মিরাবাল বোনদের হত্যার স্মরণে পালিত হয়। তারা সামরিক একনায়ক রাফায়েল ত্রুজিলোর শাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করছিলেন। তাদের সাহসিকতা এবং আত্মত্যাগ নারীর অধিকারের প্রতীক হয়ে উঠেছে।
১৯৬০ সালের ২৫ নভেম্বর ডোমিনিকান রিপাবলিকের তিন বোন প্যাট্রিয়া, মিনেরভা, এবং মারিয়া তেরেসা মিরাবালকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। তারা স্বৈরাচারী শাসক রাফায়েল ত্রুজিলোর বিরোধিতা করছিলেন। মিরাবাল বোনেরা তাদের সাহসী ভূমিকার কারণে দেশজুড়ে প্রতিরোধের প্রতীক হয়ে ওঠেন।
এই ঘটনার মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে নারীদের প্রতি সহিংসতা এবং নিপীড়নের বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরির প্রয়োজনীয়তা জোরালো হয়। ১৯৮১ সালে লাতিন আমেরিকা এবং ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের নারীবাদী কর্মীরা প্রথম ২৫ নভেম্বরকে নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন।
নারীর প্রতি সহিংসতা আজও একটি বৈশ্বিক সমস্যা। এটি একাধিক রূপে দেখা যায়, যেমন: পারিবারিক সহিংসতা, যৌন হয়রানি ও ধর্ষণ, মানবপাচার, বাল্যবিবাহ, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক বৈষম্য। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বে প্রতি তিনজন নারীর মধ্যে একজন জীবনে অন্তত একবার শারীরিক বা যৌন নির্যাতনের শিকার হন।
বাংলাদেশে নারী নির্যাতন একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক সমস্যা। যদিও বিভিন্ন সময়ে আইন প্রণয়ন এবং সচেতনতা বৃদ্ধির চেষ্টা হয়েছে, তারপরও ধর্ষণ, যৌতুক, এবং বাল্যবিবাহের মতো ঘটনা ঘটছে।
পুলিশের জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এর তথ্য মতে, চলতি বছর জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ফোন কলের ভিত্তিতে ৯ হাজার ৭১৪টি স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে নির্যাতনের ঘটনার সেবা প্রদান করা হয়। এ সময় ৮৩৯ জন নারীকে হত্যাজনিত ফোন কল পাওয়া যায়। গত ১০ মাসে ৯৯৯-এ ১ হাজার ৭৯টি নারী নির্যাতন বিষয়ক সেবা দেওয়া হয়। এমন পরিস্থিতিতে ‘নারী-কন্যার সুরক্ষা করি, সহিংসতামুক্ত বিশ্ব গড়ি’ স্লোগানকে প্রতিপাদ্য করে পালিত হচ্ছে নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস। আজ থেকেই নানা আয়োজনের মধ্যে দিয়ে ১৫ দিনব্যাপী পালন করা হবে নারী নির্যাতন পক্ষ।
এবি