ঈমান ও আমল জান্নাতে যাওয়ার সহজ ও সাধারণ সূত্র। তবে, নবীজির ঘোষণা অনুযায়ী নির্দিষ্ট কিছু আমল জান্নাতে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবে। এ প্রসঙ্গে এক হাদিসে এসেছে, আবু আইয়ুব (রা.) বলেন, এক ব্যক্তি নবী (স.)-এর খেদমতে হাজির হয়ে আরজ করল, আমাকে এমন একটি আমলের কথা বলে দিন, যে আমল আমাকে জান্নাতের কাছে পৌঁছে দেবে এবং জাহান্নাম থেকে দূরে রাখবে।
রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, তুমি আল্লাহর ইবাদত করবে, তাঁর সঙ্গে কোনো কিছু শরিক করবে না, নামাজ কায়েম করবে, জাকাত দেবে এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখবে। সে ব্যক্তি চলে গেলে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, তাকে যে আমলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তা দৃঢ়তার সাথে পালন করলে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (সহিহ মুসলিম: ১৪)
উল্লেখিত হাদিসে দেখা যাচ্ছে, নামাজ ও জাকাত আদায় এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখাই অনন্ত সুখের জান্নাত লাভের উপায় হয়ে যাবে। কেবল শর্ত হলো- তা হতে হবে শিরকমুক্ত। যারা ইবাদত করে আবার আল্লাহর সঙ্গে শরিকও করে, তাদের জান্নাতে যাওয়ার কোনো গ্যারান্টি নেই। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর সঙ্গে শরিক করার অপরাধ ক্ষমা করবেন না। আর এটি ছাড়া সব গুনাহ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করবেন।’ (সুরা নিসা: ৪৭)
অন্য হাদিসে মহানবী (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর ইবাদত করে এবং তাঁর সঙ্গে শরিক করে না, যে নামাজ আদায় করে, জাকাত দেয় এবং কবিরা থেকে বেঁচে থাকে, তার পুরস্কার জান্নাত।’ (সুনানে নাসায়ি: ৪০০৯)
এই হাদিসেও একই ঘোষণা। শিরকমুক্ত অবস্থায় নামাজ ও জাকাত আদায় এবং কবিরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকলে জান্নাত। মূলত যারা আল্লাহর সঙ্গে শরিক করে না, আল্লাহ তাদের ক্ষমা করে দেবেন। হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে আদম সন্তান, তুমি যদি পৃথিবী পরিমাণ গুনাহ নিয়ে আমার কাছে আসো এবং আমার সঙ্গে কোনো কিছুকে শরিক না করে থাকো, তাহলে আমিও সমপরিমাণ ক্ষমা নিয়ে তোমার কাছে আসব।’ (সুনানে তিরমিজি: ৩৫৪০)
শিরক হলো ঈমানের পরিপন্থী। শিরক ও ঈমান একসঙ্গে চলে না। বড় শিরকে লিপ্ত হলে ঈমান চলে যায়। কিছু ছোট শিরক রয়েছে, সেগুলো থেকেও মুক্ত থাকা মুমিনের কর্তব্য। সবরকম শিরক থেকে মুক্ত থেকে আল্লাহর ইবাদত করলে নবীজির হাদিস অনুযায়ী বেশি আমলেরও দরকার হবে না। আরেক হাদিসে নবীজি (স.) বলেছেন, ‘তোমার ঈমানকে খাঁটি করো, অল্প আমলই নাজাতের জন্য যথেষ্ট।’ (বায়হাকি, শুআবুল ঈমান: ৬৪৪৩)
অতএব, যারা আল্লাহর পুরস্কার লাভে ধন্য হতে চান, তাদের শিরকমুক্ত ইবাদত অবশ্য করণীয়। আল্লাহ তাআলার ভালোবাসা শুধু তাদের জন্য। আল্লাহ তাআলা কেবল তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার আকাঙ্ক্ষা করে সে যেন নেক আমল করে এবং তার প্রতিপালকের ইবাদতে কাউকে শরিক না করে।’ (সুরা কাহাফ: ১১০)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে শিরকমুক্ত জীবন যাপনের তাওফিক দান করুন। শিরকমুক্ত ইবাদত-বন্দেগি করার তাওফিক দান করুন। আমিন।