অ্যালোভেরা বহুজীবি ভেষজ উদ্ভিদ। দেখতে অনেকটা আনারস গাছের মত। এর পাতাগুলি পুরু, দুধারে করাতের মত কাঁটা এবং ভেতরে জেলের মতো পিচ্ছিল শাঁস থাকে। অ্যালোভেরার জেল বা আঠালো পদার্থ ময়েশ্চারাইজার হিসেবে লোশন বা ক্রিমে মিলিয়ে দেয়া হয়। অনেক সময় রূপচর্চা কিংবা ক্ষতের চিকিৎসায় সরাসরিও ব্যবহার করা হয় এ জেল। বিশটি অ্যামিনো অ্যাসিড ও নানা ধরনের ভিটামিন রয়েছে অ্যালোভেরা জেলে। তাই ত্বক ও চুল পরিচর্যার পাশাপাশি স্বাস্থ্যরক্ষাতেও এটি অনন্য।
অ্যালোভেরার পুষ্টিগুণ ক্যাপসুল ও ট্যাবলেট হিসেবে পাওয়া যায়। তবে একেবারে তাজা অ্যালোভেরা হাতের কাছে পেতে চাইলে বাসার ছাদে বা বারান্দায় টবে লাগিয়ে দিন ঘৃতকুমারী গাছ। অ্যালোভেরা গাছ থেকে জেল সংগ্রহ করে টিউবে ভরে অনেকদিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়। এখন অবশ্য গাছের পাতা ছেঁচে নেওয়া কিংবা সরাসরি জেল সংগ্রহ করার প্রয়োজন নেই তেমন। সুদৃশ্য বোতল বা প্যাকেটেই পাওয়া যায় অ্যালোভেরার সবটুকু গুণ। অ্যালোভেরা জেলের পাশাপাশি শ্যাম্পু, কন্ডিশনার, ক্রিম, তেল, লোশনসহ নানা কসমেটিকস রয়েছে বাজারে।
ত্বকের যত্নে অ্যালোভেরার ব্যবহার
বাইরে থেকে এসে মুখ ঠান্ডা পানি দিয়ে পরিষ্কার করে নিন। এরপর ম্যাসাজ ক্রিম দিয়ে হালকা হাতে কিছুক্ষণ ম্যাসাজ করুন। এবার স্ক্রাব দিয়ে ত্বকের ওপর জমে থাকা মরা কোষ ও ময়লা পরিষ্কার করে মুখ ভালো করে মুছে অ্যালোভেরা প্যাক লাগান। নিমিষেই স্নিগ্ধ হয়ে যাবে ত্বক।
রোদে পুড়ে ত্বক তামাটে হয়ে গেলে অ্যালোভেরা লোশন ব্যবহার করতে পারেন। সবচেয়ে ভালো হয় অ্যালোভেরা জেল সরাসরি ত্বকে লাগাতে পারলে। এটি সানবার্ন থেকে রেহাই দেবে অতি দ্রুত।
মুখের ত্বকে প্রতিদিন দুইবার অ্যালোভেরা লাগালে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে উজ্জ্বল হয়ে উঠবে ত্বক। গোলাপজল ও অ্যালোভেরা একসঙ্গে মিশিয়ে মুখে লাগালেও ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বাড়বে।
অ্যালোভেরা মেছতা দূর করে। আঙুলের ডগায় খানিকটা জেল নিয়ে দাগের উপর ধীরে ধীরে ম্যাসাজ করুন। সারা রাত লাগিয়ে রেখে পরদিন সকালে ধুয়ে ফেলুন। এভাবে কয়েক সপ্তাহ লাগালে মেছতার দাগ কমে যাবে। এছাড়া অ্যালোভেরা, মধু ও শসা একসঙ্গে মিশিয়ে পেস্ট করে মুখে লাগালে মেছতা দূর হওয়ার পাশাপাশি সতেজ হয়ে উঠবে ত্বক। অ্যালোভেরা ও গাজর সেদ্ধ পেস্ট করে লাগালেও উপকার পাবেন।
ত্বকের বলিরেখা দূর করার জন্য অ্যালোভেরার রস উপকারী। এজন্য শুকনো কমলালেবুর খোসার গুঁড়ো, চালের গুঁড়ো, মধু ও তুলসি পাতার মিশ্রণের সঙ্গে অ্যালোভেরা মিশিয়ে প্যাক তৈরি করুন। ত্বকে লাগিয়ে রাখুন কিছুক্ষণ। শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা পানির ঝাপটায় ধুয়ে ফেলুন।
ত্বক সতেজ রাখার জন্য নিয়মিত অ্যালোভেরার প্যাক লাগাতে পারেন। দুই চামচ অ্যালোভেরার রসের সঙ্গে একটি ডিমের সাদা অংশ এবং এক চামচ লেবুর রস মিশিয়ে ভালোভাবে প্যাক তৈরি করুন। পুরো মুখে লাগান, শুকিয়ে এলে হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
৩ টেবিল চামচ অ্যালোভেরার রস ও ১ টেবিল চামচ অ্যালোভেরা জেলের সঙ্গে ২ ফোঁটা ল্যাভেন্ডার অয়েল মিশিয়ে ব্লেন্ড করুন। মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে রাখুন ৫ থেকে ১০ মিনিট। তারপর হালকা গরম পানিতে ধুয়ে ময়েশ্চারাইজার লাগান। নিয়মিত করলে সুস্থ থাকবে ত্বক।
ব্রণের দাগ দূর করার জন্য অ্যালোভেরা খুবই কার্যকরী। অ্যালোভেরার রসের সঙ্গে মুলতানি মাটি ও চন্দন পাউডার মিশিয়ে মুখে লাগান। ব্রণের দাগ চলে যাবে।
শুষ্ক ত্বকে খুব সহজেই রুক্ষতার ছাপ পড়ে। এ ধরনের ত্বকের যত্নে নিয়মিত অ্যালোভেরার জেল লাগাতে পারেন। বাসায় বসে তৈরি করে নিতে পারেন অ্যালোভেরার প্যাক। এজন্য দুধ অথবা ক্রিমের সঙ্গে ডাল ও বাদাম গুঁড়ো, মৌরি, তুলসী পাতা, গোলাপের পাপড়ি দিন। মিশ্রণে পরিমাণ মতো অ্যালোভেরার রস মিশিয়ে ত্বকে লাগান।
স্ক্রাব হিসেবে অ্যালোভেরা ব্যবহার করতে পারেন। বিশেষ করে শুষ্ক ত্বকের জন্য এটি খুবই কার্যকর। অ্যালোভেরার সঙ্গে দুধ, মসুর ডালের গুঁড়া, তুলসী পাতা, চন্দন ও গোলাপের পাপড়ি মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। মিশ্রণটি দিয়ে ঘষে ঘষে ত্বক পরিষ্কার করুন। মরা কোষ উঠে স্নিগ্ধ হবে ত্বক।
চুলের যত্নে অ্যালোভেরার ব্যবহার
চুলের যত্নে যারা বেশি সময় ব্যয় করতে পারেন না তাদের জন্য চটজলদি সমাধান এনে দিতে পারে অ্যালোভেরা। অ্যালোভেরা জেল মাথার তালুতে ম্যাসাজ করুন। ২ ঘণ্টা রেখে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত করলে চুল পড়া বন্ধ হওয়ার পাশাপাশি নতুন চুল গজাবে।
চুলের সুস্থতায় অ্যালোভেরার শ্যাম্পু ব্যবহার করতে পারেন। কিছু মাইল্ড বা হারবাল শ্যাম্পু অ্যালোভেরা সমৃদ্ধ থাকে। চাইলে সাধারণ শ্যাম্পুতে খানিকটা অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে হারবাল শ্যাম্পু বানিয়ে নিতে পারেন।
চুল পরিষ্কার করতে শ্যাম্পুর বদলে অ্যালোভেরা হেয়ার প্যাক ব্যবহার করা যায়। নারিকেল তেল, লেবুর রস ও নারিকেলের দুধের সঙ্গে অ্যালোভেরা মিশিয়ে ব্যবহার করুন। চুল সতেজ থাকবে
প্রতিদিন যে পরিমাণ শ্যাম্পু ব্যবহার করেন তার অর্ধেক অংশ কমিয়ে সেটা অ্যালোভেরা জেল দিয়ে পূরণ করে নিন। চুল রুক্ষ হবে না সহজে
চুল সুস্থ রাখতে নিয়মিত তেল ব্যবহার প্রয়োজন। নারিকেল বা জলপাই তেলের সঙ্গে অ্যালোভেরা মিশিয়ে চুলে লাগালে পারেন। চাইলে ঘরে বসেও বানিয়ে নিতে পারেন অ্যালোভেরা হেয়ার অয়েল। চার ভাগের একভাগ অ্যালোভেরা জেলের সঙ্গে ভেজিটেবল অয়েল মিক্স করুন। তারপর মিশ্রণটি ১০ মিনিট গরম করে ঠান্ডা করে নিন। শুষ্ক জায়গায় সংরক্ষণ করুন। এটি নিয়মিত ব্যবহার করলে খুশকি দূর হবে ও চুল পড়া কমবে। এছাড়া খুশকি দূর করতে লেবুর রস ও নারিকেল তেলের সঙ্গে অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে চুলের গোড়ায় লাগাতে পারেন।
চুলের ঝলমলে ভাব বাড়াতে কন্ডিশনার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন অ্যালোভেরা। অনেক সময় রোদ ও ধুলাবালিতে চুল রুক্ষ হয়ে যায়। দুর্বল হয়ে মাঝখান থেকে ভেঙে পড়ে। শ্যাম্পু করার পর নিয়মিত অ্যালোভেরা কন্ডিশনার ব্যবহার করলে মুক্তি পাবেন এ সমস্যা থেকে। বাজার থেকে না কিনে ঘরে বসে বানিয়ে নিতে পারেন কন্ডিশনার। এজন্য গামলার পানিতে একটি লেবুর রস মেশান। পাঁচ ফোটা নারিকেল তেল কিংবা তিলের তেলের সঙ্গে অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে কন্ডিশনার হিসেবে ব্যবহার করুন।
এমআর