চা বিশ্বব্যাপী অত্যন্ত জনপ্রিয় পানীয়। গরম চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে দিন শুরু হয় অনেকেরই। আমাদের দেশে রং চা এবং দুধ চা দুটোই জনপ্রিয়। তবে স্বাস্থ্যসচেতন অনেকেই তাদের পছন্দ বদলেছে। বন্ধুদের সঙ্গে হোক কিংবা অফিসে কাজের বিরতিতে, হাতে উঠেছে গ্রিন টি-র কাপ। ক্যাফেতে গিয়ে কফির বদলে অর্ডার হয় ভিন্ন স্বাদের স্বাস্থ্যকর চা।
চলুন জেনে নেওয়া যাক ভেষজ চায়েন গুণাগুন---
পুদিনা চা: বদহজমের সমস্যায় ভুগছেন? পুদিনা পাতার চা খান। পানি গরম করে তাতে কুচি কুচি করে কয়েকটা পুদিনা পাতা কেটে মিনিট ১৫ ঢাকা দিয়ে রাখুন। পাতা কেটে দিলে পুদিনার গন্ধটা পুরোটাই পাবেন। নিশ্বাসের দুর্গন্ধ এড়াতেও খেতে পারেন পুদিনা চা। এই চা খেলে নিমেষেই দূর হয়ে যাবে শারীরিক ও মানসিক ক্লান্তি। সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, একটানা কাজ করার জন্য মনঃসংযোগ বাড়াতেও সহায়তা করে এই চা।
দারুচিনি চা: শরীর থেকে অতিরিক্ত মেদ ঝরাতে চান? তাহলে এই পানীয়টি আপনাকে খেতেই হবে। একটি পাত্রে পানি গরম করে দারচিনি গুঁড়া, লেবুর রস ও মধু মিশিয়ে নিন। তারপর এই চা ছেঁকে খান। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট, যা বিভিন্ন রোগ থেকে শরীরকে বাঁচাতে সহায়তা করে। ঋতুস্রাবের সময় পেটে ব্যথা হলে তা থেকেও আরাম মিলবে এই চা খেলে।
তুলসী চা: ঠান্ডা-গরমের মৌসুমে সর্দিকাশি লেগেই থাকে। তবে যদি রোজ এক কাপ করে তুলসী চা খেতে পারেন, তাহলে ঠান্ডা লাগার আশঙ্কা কিন্তু অনেকটাই কমবে। একটি পাত্রে পানি গরম করে তাতে তুলসী পাতা ফুটিয়ে নিন। তারপর মধু ও লেবু মিশিয়ে নিলেই তৈরি তুলসী চা। লেবুতে থাকা ভিটামিন সি শরীরের রোগ প্রতিরোধ শক্তি বাড়াতে সহায়তা করে। ডায়াবেটিসের সমস্যা থাকলে নিয়মিত তুলসী চা খান, এটি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে।
লবঙ্গ চা: বয়সীদের জন্য লবঙ্গ চা খুবই উপকারী। প্রথমে পরিমাণ মতো লবঙ্গ নিয়ে বেঁটে নিতে হবে। তারপর সেই লবঙ্গের গুঁড়ো এক কাপ জলে মিশিয়ে কম করে ৫-১০ মিনিট ফোটাতে হবে। যখন দেখবেন জলটা ফুটতে শুরু করেছে, তখন তাতে হাফ চামচ চা পাতা ফেলে দেবেন। আর কিছু সময় অপেক্ষা করে জলটা ছেঁকে নিলেই ব্যাস লবঙ্গ টি রেডি। বিশেষজ্ঞদের মতে প্রতিদিন দুবার করে লবঙ্গ চা খাওয়া শুরু করেল শরীরে প্রবেশ ঘটতে শুরু করে ম্যাঙ্গানিজ, ভিটামিন কে, ফাইবার, আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্য়াঙ্গানিজ সহ আরও একাধিক উপকারি উপাদান, যা নানাভাবে শরীরের উপকারে লেগে থাকে।
মধু-গোলমরিচের চা: ইমিউনিটি বাড়াতে এই সবকটি উপাদানই খুব ভালো। শরীরকে উষ্ণ রাখতে সাহায্য করে গোলমরিচ। এছাড়াও থাকে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি। দারচিনি দিয়ে চা বানিয়ে নিন। খায়ার আগে ওর সঙ্গে সামান্য মধু মিশিয়ে নিন। প্রতিদিন সকালে এই চা খেলে ওজনও কমবে। ডায়াবিটিস থাকবে নিয়ন্ত্রণে। আর ঠান্ডা লাগার প্রকোপ থেকেও রক্ষা পাবেন।
আদা-লেবুর চা: আদার মধ্যে থাকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আর লেবুর মধ্যে ভিটামিন সি। আদা দিয়ে জল ফুটিয়ে তার মধ্যে গ্রিন টি দিয়ে কিছুক্ষণ ঢাকা দিয়ে রাখুন। চা ছাঁকার আগে গ্লাসে লেবুর রস চিপে দিন। এবার চা ঢেলে খেয়ে নিন। চিনি একদম দেবেন না। পরিবর্তে মধু ব্যবহার করতে পারেন। আর এই চা বানানোর ২০ মিনিটের মধ্যে খেতে হবে। সকালে অথবা বিকেলে খেতে পারেন এই চা।
অপরাজিতা ফুলের চা: অন্যান্য চায়ের তুলনায় অপরাজিতা চায়ের ভেষজ গুণ অনেক বেশি। এই চা রোগপ্রতিরোধ বৃদ্ধি করার পাশাপাশি ঠান্ডালাগা, সর্দি-কাশির উপশম ঘটায়। সারাদিনের ক্লান্তি দূর করতে সকালের শুরুটা এককাপ অপরাজিতার চা দিয়ে করতে পারলে ভালো। অ্যান্টি অক্সিডেন্টের গুণে ভরপুর অপরাজিতার চা শরীরে বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কয়েকগুণ বাড়িয়ে তোলে। নীল অপরাজিতা খুব ভালো করে রোদে শুকিয়ে নিতে হবে। এরপর কাঁচের জারে ভরে রাখুন। চা বানানোর সময় জলে হাফ চামচ ফুলের গুঁড়ো দিন। এরপর চা পাতা দিতে হবে। এলাচ, মধু আর পুদিনাপাতাও দিতে পারেন।
মশলা চা: অনেকেই দুধ-চিনি সহযোগে চা পছন্দ করেন। চিনির বদলে তালমিছরি ব্যবহার করুন। সেই সঙ্গে দুধে এলাচ, লবঙ্গ, দারচিনি, আদা দিয়ে ভালো করে ফোটান। বিকেলে যদি এই চা খেতে পারেন তাহলে উপকার আছে। তবে দুধ চা কখনই সকালে খাবেন না। এই চায়ের মধ্যে থাকা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট শরীরের জন্য খুবই ভালো। সেই সঙ্গে মাধা ধরা, সর্দি-কাশি ইত্যাদিও কমায়। মন তরতাজা রাখে।
এইচএ