মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে নিহত আমেনার বাবার বাড়িতে প্রিয়জন হারানো স্বজনরা বিলাপ করতে দেখা গেছে। শনিবার বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে উপজেলার কোলা ইউনিয়নের নন্দনকোনা গ্রামের নিহত আমেনার বাবার বাড়িতে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের ধলেশ্বরী টোল প্লাজায় দুর্ঘটনায় নিহত আমেনা আক্তারের মা জোবেদা খাতুন বিলাপ করতে কনতে বলছেন আমার মরার বয়স হইছে। আল্লাহ আমাকে নিলো না।
ওগো সবাইরে নিয়া গেলো। আমরা এ মৃত্যু কেমনে সইমু। পাশে বসেই কান্না জড়িত কন্ঠে আমেনার ছোট বোন জোসনা আক্তার প্রশ্ন ছুড়ে বলছিলেন মানুষ তো একটা মৃত্যুর শোকই ভুলতে পারে না। আর আমরা চারটা মৃত্যুর শোক ভুলুম কেমনে।
এদিকে, শুক্রবার বেলা ১১ টার দিকে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার কুচিয়ামোড়া এলাকার অদুরে ঢাকার দক্ষিন কেরানীগঞ্জের ধলেশ্বরী সেতুর টোল প্লাজায় বেপারী পরিবহনের দ্রুতগতির একটি বাস সামনে থাকা ৩ টি যানবাহনকে পিষে দিলে একই পরিবারের ৪ জন নিহত হয়। এদের মধ্যে মা আমেনা আক্তার আমেনা আক্তার (৪০), তার বড় মেয়ে ইসরাত জাহান (২৪), ছোট মেয়ে রিহা মনির (১১) লাশ ওই দিন রাতেই আমেনার বাবা প্রয়াত সমন খানের বাড়িতে আনা হয়।
এসময় স্বজনদের কান্না আর আহাজারীতে সেখানকার আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠে। রাতেই বাবার বাড়ি এলাকার কবরস্থানে দাফন করা হয় মা আমেনা ও তার ২ মেয়ের লাশ। পরিবারটির নিহত অপর সদস্য আমেনার মেঝো মেয়ে অনামিকার ছেলে আইয়াজ হোসেনের (২) লাশ নিয়ে যাওয়া হয় তার দাদার বাড়িতে। তবে ছেলে আইয়াজের মৃুত্যর খবর জানে না তার মা-বাবা। দুর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন আইয়াজের মা অনামিকা ও বাবা মো. সোহান (২৮)। এছাড়া চিকিৎসাধীন রয়েছেন সোহানের বোন নাদিয়া আক্তার (১৭)। অনামিকা হচ্ছে নিহত আমেনা আক্তারের মেঝো মেয়ে।
অন্যদিকে নিহত আমেনা স্বামী ইকবাল হোসেনের (৫০) সঙ্গে থাকতেন ঢাকার জুরাইনের কমিশনার রোডে। তবে স্বামী ইকবালের বাড়ি কুমিল্লার দেবীদ্বার। শুক্রবার সকালে জুরাইনের বাসা থেকে প্রাইভেটকারে করে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে গোপালগঞ্জে ননদের স্বামীর মৃত্যুতে দোয়া ও মিলাদের অনুষ্ঠানে যাচ্ছিলো আমেনা আক্তার। দুঘর্টনায় এ পরিবারের ৪ জনের মৃত্যু হয়। শুক্রবার রাতে বাবার বাড়িতে মা আমেনা ও তার ২ মেয়েকে দাফন করা হলেও গতকাল শনিবার সেখানে চলছে শোকের মাতম। আমেনার ছোট বোন জোসনা আরো বলেন, আমেনা বলেছিল গোপালগঞ্জ থেকে শুক্রবার সন্ধ্যার আগে ফিরবে। এরপর সিরাজদীখানে আমাদের বাড়িতে আসবে। অনেক দিন পরবোন-ভাই ও ভাগ্নে-ভাগ্নিদের নিয়ে রাত কাটাবো ভেবে খুশি ছিলাম। কিন্তু কে জানতো আমাদের খুশি এমনেই শেষ অইয়া যাইবো।
নিহত আমেনার স্বামী ইকবালের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন,আমার স্ত্রী,দুই মেয়ে,নাতিরে বাস চাপা দিয়ে খুন করা হইছে।আমার মেঝো মেয়ে অনামিকার অবস্থাও খুব খারাপ।কারা কেনো ওদের খুন করলো। ইকবাল বলেন, গনঅভ্যুত্থানের পর সব জায়গায় সংস্কার হচ্ছে।সড়কে কোন সংস্কার নাই।প্রতিনিয়ত মানুষ মরছে। এ ব্যাপারে কারো কোন ভ্রুক্ষেপ নাই।আমি সব হারাইছি।আর কেউ যেনো কারো একজনও আপনজন না হারায়।আমি সরকার সহ সবার কাছে আমার স্বজনদের হত্যার বিচারসহ সড়কপথ নিরাপদ করার দাবি জানাই।
নিহত আমেনার আক্তারের দেবর জাহাঙ্গীর আলম অভিযোগ করে বলেন,বাসচাপা দেওয়ার ঘটনাটি পরিকল্পিত। বাসটি যদি তার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে থাকে,তাহলে যাত্রীদের বাঁচাতে টোলপ্লাজার অন্য কোথাও মেরে দিতে পারত অথবা টোলপ্লাজার অন্য লেনে গাড়ি ছিলনা সেখান দিয়ে যেতে পারতো। টোলপ্লাজায় আসলে বাসের গতি ও স্বাভাবিক থাকতো।কিন্তু সেখানে টোলপ্লাজার দিকে আসার পর, বাসের গতি এত বাড়লো কেনো।বাসটি গাড়ি গুলোর উপরেই কেনো উঠিয়ে দিতে হলো। আমরা বিভাগীয় তদন্তসহ ব্যবস্থা চাই।
নিহত আমেনা আক্তারের বড় ভাই নুরুল আমিন বাদি হয়ে হাসাড়া হাইওয়ে থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছেন। এতে ঘাতক বাসের অজ্ঞাত মালিক,চালক ও তার সহকারীকে আসামি করা হয়েছে।বিকেল পৌনে চারটা পর্যন্ত মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।ঘাতক বাস চালককে র্যাব হেফাজতে রয়েছেন বলে জানাযায়।
হাঁসাড়া হাইওয়ে থানার ওসি আব্দুল কাদের জিলানী বলেন,আমরা কাউকে আটক করিনি।শুনতে পেয়েছি র্যাব-১০ বাসটির চালককে আটক করেছে।তবে ঘটনাটি কি কারনে ঘটেছে সেটি উৎঘাটনে কাজ চলছে।এছাড়াও বাসের ফিটনেস ছিল কিনা,চালকের ভারী যান চালানোর লাইসেন্স ছিল কিনা,চালক পর্যাপ্ত বিশ্রাম পেয়ে ছিলেন কিনা চালকে হেফাজতে পেলে জানা যাবে।
এমআর