এইমাত্র
  • যে কারণে জামিন পেলেন না চিন্ময় কৃষ্ণ দাস
  • মুন্নী সাহা ও তার স্বামীর সম্পদ অনুসন্ধানে নামছে দুদক
  • ‘জাতীয় কবি’র রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পেলেন কাজী নজরুল ইসলাম
  • ৪৩তম বিসিএসে বাদ পড়াদের পুনর্বিবেচনার আবেদন গ্রহণ করা হচ্ছে
  • আওয়ামী দুঃশাসন নিয়ে সিনেমা বানিয়ে হুমকির মুখে তিশা
  • ভারতে বাংলাদেশীদের অনুপ্রবেশে সাহায্য করছে বিএসএফ: মমতা
  • বাংলা‌দেশি-ভারতীয় আটক জেলেদের হস্তান্তর ৫ জানুয়া‌রি
  • খালেদা জিয়া লন্ডন যাচ্ছেন সোমবার
  • নতুন বছরে বুঝেশুনে খেলতে চান অভিনেত্রী ফারিন খান
  • দেশে নব্য ফ্যাসিবাদ চেপে বসেছে: জি এম কা‌দের
  • আজ বৃহস্পতিবার, ১৯ পৌষ, ১৪৩১ | ২ জানুয়ারি, ২০২৫
    দেশজুড়ে

    রাত হলেই কৃষি জমির বুকে মাটিখেকোদের তাণ্ডব

    শাহীন মাহমুদ রাসেল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, কক্সবাজার প্রকাশ: ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:২৪ পিএম
    শাহীন মাহমুদ রাসেল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, কক্সবাজার প্রকাশ: ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:২৪ পিএম

    রাত হলেই কৃষি জমির বুকে মাটিখেকোদের তাণ্ডব

    শাহীন মাহমুদ রাসেল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, কক্সবাজার প্রকাশ: ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:২৪ পিএম

    ‘বাড়ির পাশে বড়ুয়া পাড়া বিলে চাষাবাদের জন্য আগাছা পরিষ্কার করে জমি প্রস্তুত করেছি। গত কয়েক মাস ধরে স্থানীয় একটি চক্র রাতের আঁধারে ওই বিলের জমির মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। গত শনিবার সকালে জমিতে গিয়ে দেখি, আমার ২৫ শতক জমির মাটি কেটে পুকুরের মতো গর্ত করে ফেলেছে। পরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিলেও এখনো পর্যন্ত ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন।’ কথাগুলো এভাবে বলেছিলেন কক্সবাজার সদরের পূর্ব খরুলিয়া খামারপাড়া গ্রামের সাইমুন কামাল।

    খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সদর উপজেলার ঝিলংজার ৯নং ওয়ার্ডের খরুলিয়া খামারপাড়া ও বড়ুয়াপাড়া উত্তর পাশের এলাকায় জোরপূর্বক রাতের অন্ধকারে ভেকু দিয়ে গভীর গর্ত করে মাটি কাটার মহোৎসব চলছে।

    অভিযোগ উঠেছে, রাতভর মাটি কাটার উৎসবে স্থানীয়রা উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করলেও অজ্ঞাত কারণে নীরব থাকে প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিরা। প্রশাসনের রহস্যময় নীরবতার সুযোগে মাটি মাফিয়াদের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না ফসলি উর্বর জমি, উঁচু ভিটা, এমনকি ক্ষুদ্র জলাশয়ও বাদ পড়ছে না। তিন ফসলি কৃষিজমি পরিণত হচ্ছে ডোবায়। দিন দিন ফসলের উৎপাদন কমছে। বেকার হয়ে পড়ছে কৃষক। পরিবেশ হচ্ছে দূষিত। ফলে একদিকে যেমন এলাকার উর্বর আবাদি জমির পরিমাণ কমছে অন্যদিকে হুমকির মুখে পড়ছে কৃষি উৎপাাদন। মাটি পরিবহনে ভারী ট্রাক ও পিকআপ চলাচলে ইউনিয়ন ও গ্রামীণ সড়ক হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত।

    স্থানীয়দের দাবি, উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে ও সরকারি আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আবাদি জমির মাটি জোরপূর্বক কাটার মহোৎসবে মেতেছে মাটিখেকো প্রভাবশালী সিন্ডিকেট।

    স্থানীয়দের অভিযোগ, ওই এলাকায় কয়েকটি শক্তিশালী মাটি ব্যবসায়ী চক্র গড়ে উঠেছে। এরা দরিদ্র কৃষককে নানা প্রলোভন দেখিয়ে জমির মাটি কিনে নিচ্ছে। আবার মাটি বিক্রি না করলে জোরপূর্বক মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছেন তারা। ৮-১০ ফুট গভীর করে মাটি কাটার ফলে অনেক জমি ডোবায় পরিণত হয়েছে। এসব জমিতে ফসল বা মাছ চাষ করা সম্ভব হচ্ছে না। এ ছাড়া কৃষিজমি থেকে কেটে নেওয়া মাটি বিভিন্ন স্থানে সরবরাহের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে পিকআপ গাড়ি। এসব গাড়ির কারণে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত গ্রামীণ রাস্তাঘাটে খানাখন্দ তৈরি হয়ে দ্রুত ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। এ ছাড়া পিকআপ চলাচলের কারণে আবাদি জমিও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

    সরজমিন ঝিলংজা ইউনিয়নের খরুলিয়া খামারপাড়া-বড়ুয়াপাড়া এলাকায় দেখা গেছে, রাতে চিহ্নিত ক্যাডারদের পাহারায় ভেকু ও এস্কেভেটর দিয়ে ফসলি জমির মাটি কাটছে মাটিখেকো সিন্ডিকেট। পরে ট্রাক ও পিকআপ দিয়ে সেই মাটি ইটভাটা সহ ক্রেতাদের পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। ট্রাক ও পিকআপ এস্কেভেটর ভেকুর আওয়াজে রাতের নিস্তব্ধতা ভেঙে জনসাধারণের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটলেও অসহায় স্থানীয়রা। বাধা দিলে তাদের ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ উঠেছে।

    ওই এলাকায় কয়েক বিঘা জমির ওপর ধান চাষ ও বিভিন্ন সবজি লাগিয়েছেন স্থানীয় কৃষকেরা। রাতের আঁধারে একটি মাটি খেকু চক্র কৃষিজমি থেকে এক্সকাভেটর দিয়ে গভীর গর্ত করে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। এতে পাশের কৃষিজমির মাটি ভেঙে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। মাটিকাটা বন্ধ না করলে একসময় ওই এলাকা থেকে কৃষিজমি হারিয়ে যাবে বলে মনে করছেন বাসিন্দারা।

    স্থানীয় অ্যাডভোকেট মহিউদ্দিন আহমেদ সোহেল বলেন, গত মাস খানেক ধরে দেদারসে ফসলি জমির মাটি কাটা অব্যাহত রয়েছে। উপজেলা প্রশাসনকে বার বার অবহিত করা হলেও কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। তাদের রহস্যজনক নীরবতার সুযোগে মাটিখেকো সিন্ডিকেট আরও বেপরোয়া আচরণ করে।

    স্থানীয় ফকির আহমদ নামে আরেক ব্যক্তি বলেন, যারা মাটি কাটছে তাদের সবাই চিনে কিন্তু হয়রানির ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস করছে না। মাটি ব্যবসায়ীরা দম্ভোক্তি করে বলছে, আমরা মাটি কেটে বিক্রি করছি প্রশাসনের কোনো কিছু করার থাকলে করুক। অবাধে মাটির ট্রাক ও পিকআপ চলাচলের কারণে পরিবেশ দূষিত হওয়ার পাশাপাশি গ্রামীণ সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যার প্রভাবে বর্ষা মৌসুমে ভোগান্তিতে পড়বে এলাকাবাসী।

    জানতে চাইলে কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিলুফা ইয়াসমিন চৌধুরী বলেন, আমাদের নিয়মিত অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ফসলি জমি রক্ষার্থে আমরা কাউকে ছাড় দিবো না। যারা মাটি কাটার সঙ্গে জড়িত অতিদ্রুত তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

    এমআর

    সম্পর্কিত:

    সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি

    Loading…