জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেপ্তার বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত। বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ মো. সাইফুল ইসলাম শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।
আদালতে ভার্চুয়াল শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মফিজুল হক ভূইঁয়া যুক্তি তুলে ধরেন, ‘রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা জামিন অযোগ্য, ফলে চিন্ময় দাসের জামিন পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’ এরপর শুনানি শেষে জামিন নামঞ্জুরের আদেশ দেন আদালত। চিন্ময় দাসের আইনজীবী সুমন কুমার রায় এ তথ্য জানান।
ইসকনের বহিষ্কৃত নেতার জামিন শুনানিতে অংশ নিয়েছিলেন ১১ জন আইনজীবীর একটি দল। সুমন ওই দলের একজন সদস্য।
তিনি বলেন, আদালতে রাষ্ট্রপক্ষ বলেছে, এটি একটি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা যার শাস্তি সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন এবং মামলাটি যেহেতু তদন্তাধীন, এক্ষেত্রে তারা জামিনের বিরোধিতা করছেন এবং জামিন না দিতে রাষ্ট্রপক্ষ আদালতে প্রার্থনা করেছে।
শুনানিতে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের আইনজীবীরা বলেছেন, তার বিরুদ্ধে পতাকা অবমাননার অভিযোগে যে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হয়েছে তা ভিত্তিহীন।
সুমন রায় বলেন, প্রথমত, সমাবেশের ভিডিওতে ইস্কনের পতাকার নিচে যে পতাকাটি ওড়ানো হয়েছে, সেটি আসলে চাঁদ তারা খচিত পতাকা। অর্থাৎ সেটা বাংলাদেশের পতাকা না। একইসঙ্গে পতাকা অবমাননার কোনো ধারা বাদী মামলার সঙ্গে সংযুক্ত করেননি এবং যে পতাকাটি অবমাননার কথা বলা হয়েছে সেটাও জব্দ তালিকায় নেই। এর ফপে অভিযোগ যথাযথভাবে প্রমাণ হচ্ছে না।
অন্যদিকে বাংলাদেশের ফৌজদারি কার্যবিধির ১৯৬ ধারা অনুযায়ী রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে মামলা নেওয়ার ক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আনুষ্ঠানিক অনুমোদন নেওয়ার কথা উল্লেখ থাকলেও, চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের ক্ষেত্রে তা মানা হয়নি বলে দাবি করেন তিনি।
সুমন রায় বলেন, কোনো ব্যক্তি রাষ্ট্রের অনুমতি ছাড়া রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করতে পারেন না। এ ধরনের মামলা আমলে নেওয়ারও কোনো এখতিয়ার নেই। সব মিলিয়ে মামলায় পদ্ধতিগত ত্রুটি রয়েছে। তার মানে এই মামলা ভিত্তিহীন। এমন অবস্থায় চিন্ময় জামিন পাওয়ার হকদার।
জামিন আবেদনের শুনানিতে চিন্ময় কৃষ্ণের আইনজীবীরা বলেছেন, তার নির্দিষ্ট ঠিকানা আছে, তাই জামিন পেলে তার পালিয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নাই। সেক্ষেত্রে আমরা নিয়মিতভাবে ট্রায়াল ফেইস করব।
তবে উভয়পক্ষের শুনানি শেষে চিন্ময় দাসের জামিন নামঞ্জুরের আদেশ হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন এই আইনজীবী।
গত ২৫ নভেম্বর ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে যাওয়ার সময় শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে গোয়েন্দা পুলিশ চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেপ্তার করে। পরদিন ২৬ নভেম্বর ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চিন্ময় দাসের জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়।
ওইদিন চিন্ময় দাসের জামিনকে ঘিরে সংঘর্ষ, ভাঙচুরের পর সাইফুল ইসলাম আলিফ নামে একজন আইনজীবী নিহত হন। চিন্ময় দাসের গ্রেপ্তার নিয়ে ভারতের তরফ থেকে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। খবর: বিবিসি বাংলার।
এফএস