চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র—জনতার আন্দোলন চলাকালে মিছিলে হামলা ও গুলিবর্ষণের সময় কেরানীহাটে উপস্থিত থেকে নিজেদের অনুসারীদের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন স্থানীয় যুবলীগ নেতা ওচমান আলী ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আবু ছালেহ শান। কিন্তু এই ঘটনায় হওয়া মামলায় তাদেরকে আসামি করা হয়নি।
গত শনিবার সাতকানিয়া থানায় ওই ঘটনায় মামলা দায়ের করেছেন উপজেলার পশ্চিম ঢেমশা ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের মৃত নুরুল ইসলামের ছেলে মো. সৈয়দুজ জামান। মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে চট্টগ্রাম—১৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভীকে।
মামলায় নদভী ছাড়াও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ সহকারী বিপ্লব বড়ুয়া, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কুতুব উদ্দিন চৌধুরী, সাতকানিয়া পৌরসভার মেয়র ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোহাম্মদ জোবায়েরসহ ১৯৮ জনকে আসামি করা হয়েছে। ওই মামলায় অজ্ঞাত আসামি রয়েছে ২০০ থেকে ২৫০ জন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ৪ আগস্ট দুপুরে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র—জনতার একটি মিছিল চট্টগ্রাম—কক্সবাজার মহাসড়কের সাতকানিয়া রাস্তার মাথা হয়ে কেরানীহাট গোলচত্বর এলাকায় পৌঁছায়। এ সময় মামলায় উল্লিখিত আসামিদের অর্থায়ন, নির্দেশনা ও প্ররোচনায় ছাত্রলীগ, যুবলীগ, শ্রমিক লীগ, আওয়ামী লীগের নেতা—কর্মীরা লাঠিসোটা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে মিছিলে হামলা চালান। পরে তারা ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে ছাত্র—জনতার ওপর গুলিবর্ষণ করেন। তারা চারটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেন এবং ১০ থেকে ১২টি গাড়ি ভাঙচুর করেন। এ হামলায় মামলার বাদী মো. সৈয়দুজ জামান, ইউসুপ, আবদুল আজিজসহ অন্তত ২০ থেকে ২৫ জন আহত হয়েছিলেন। তবে অবাক করার বিষয় হলো, এ মামলায় আসামির তালিকায় অস্ত্রবাজদের নেতাদের নাম আসেনি। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাতকানিয়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত শিক্ষার্থীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাতকানিয়ায় ছাত্র—জনতার আন্দোলনের দিন সকাল থেকে কেরানীহাটে সমর্থকদের নিয়ে অবস্থান নেন উত্তর সাতকানিয়া শাখা সাংগঠনিক উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ওচমান আলী ও উত্তর সাতকানিয়া শাখা সাংগঠনিক উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু ছালেহ শান। ছাত্র—জনতার মিছিল পণ্ড করতে তারা সমর্থকদের তখন হামলা ও গুলিবর্ষণের নির্দেশনা দেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। ওইদিন ছাত্র—জনতার আন্দোলন দমাতে তাদেরকে তৎপর দেখা গেলেও ওই ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় তাদের নাম নেই।
এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সাতকানিয়ার ছাত্র প্রতিনিধি মো. তৌহিদুল ইসলাম মাসুম বলেন, 'এই ধরনের মামলাগুলো সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। মূলত, এগুলো করা হয় মামলা বাণিজ্যের জন্য। মামলা সবসময় সুনির্দিষ্ট হতে হবে এবং আসামি হবে তারা, যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জুলাই অভ্যুত্থানে হামলায় জড়িত।'
তিনি আরো বলেন, 'মূল অপরাধী এবং যারা অস্ত্রবাজি বা সন্ত্রাসী কার্যক্রমে যুক্ত, তাদের বাদ দিয়ে মামলা করা হলে তা দেওয়া-নেওয়ার মামলা হিসেবে বিবেচিত হবে। আমরা এই ধরনের উদ্দেশ্যমূলক মামলাকে কখনোই সমর্থন করি না। বিশেষত, 'অজ্ঞাতনামা ২০০-২৫০ জন' এ ধরনের টার্ম কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটি ন্যায়বিচারের পরিপন্থী এবং বিচার ব্যবস্থার অপব্যবহার।'
এদিকে, অস্ত্রবাজদের নেতাদের কেন আসামি করা হয়নি জানতে বাদী মো. সৈয়দুজ জামানের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তার ব্যবহৃত নাম্বারটি বন্ধ পাওয়ায় তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল খান বলেন, বাদীর লিখিত অভিযোগ পেয়ে সংশ্লিষ্ট ধারায় মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। মামলাটি তদন্ত করে আসামিদের গ্রেফতার করা হবে।
এমআর