মৌলভীবাজারে বসত ঘরের চালে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পরায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আহত শিশু সোনিয়া সুলতানাও (৮) মারা গেছে। তার আগে একই ঘটনায় তার মা-বাবা ও তিন ভাই-বোন মারা যায়।
বুধবার (২৭ মার্চ) ভোর ৪টার দিকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে সোনিয়ার মৃত্যু হয়। সে স্থানীয় গোয়ালবাড়ী উত্তর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে লেখাপড়া করতো।
সোনিয়ার বাবা-মা ও তিন ভাইবোনেরও বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মৃত্যু হয়। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে একমাত্র সেই বেঁচে ছিল। সোনিয়ার মৃত্যুতে জুড়ীর বাকপ্রতিবন্ধী দিনমজুর ফয়জুর রহমানের পরিবারে আর কেউ বেঁচে রইল না।
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের জরুরি বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক মো. তারিকুল ইসলাম বলেন, 'বাচ্চাটাকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল। সেখানকার চিকিৎসকরা তাকে চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করেন। ঢাকা মেডিকেল থেকে পরে আমাদের এখানে আনা হয়। কিন্তু আগেই শিশুটির মৃত্যু হওয়ায় আর ভর্তি করা হয়নি।'
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বাকপ্রতিবন্ধী ফয়জুর রহমান দিনে ঠেলা চালিয়ে এবং রাতে স্থানীয় একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নৈশপ্রহরীর কাজ করে সংসার চালাতেন। নিজের জমি না থাকায় পরিবার, ভাইবোনদের রেখে টালিয়াউরা গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য মইন উদ্দিনের বাড়িতে থাকতেন। ছয়-সাত বছর আগে একই ইউনিয়নের পূর্ব গোয়ালবাড়ী গ্রামে রহমত আলীর টিলা বাড়িতে ঘর তৈরি করেন। সেই ঘরে ছিল না বিদ্যুতের সংযোগ। তবে ঘরের ওপর দিয়ে আগে থেকেই পল্লী বিদ্যুতের ১১ হাজার ভোল্টের লাইন টানানো ছিল। মঙ্গলবার ভোরে বজ্রপাতসহ ঝড়বৃষ্টি শুরু হয়। বজ্রপাতের পর পাশের খুঁটি থেকে একটি তার ছিঁড়ে ফয়জুরের ঘরের ওপর পড়ে। এতে টিনের চালের ঘরটি বিদ্যুতায়িত হলে ওই পরিবারের পাঁচ সদস্য মারা যান। বুধবার ভোর ৪টায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে মারা যায় সোনিয়া। ফয়জুরের ঘরে বিদ্যুৎ না থাকলেও বিদ্যুতের কারণেই ছারখার হতদরিদ্র এ পরিবার।
সোনিয়ার মামা আব্দুল আজিজ গণমাধ্যমকে জানান, সোনিয়ার শরীরের ২৫ শতাংশ পুড়ে যায় বলে জানান চিকিৎসকরা। প্রথমে তাকে সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য মঙ্গলবার রাতে তাকে ঢাকায় নেওয়া হয়। ঢাকায় পৌঁছানোর কিছুক্ষণ পরই সে মারা যায়। তার মরদেহ নিয়ে বাড়ি ফিরছি।
ফয়জুর রহমানের বড় মেয়ে সামিয়া বেগম হাজি ইনজাদ আলী উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে, মেজো মেয়ে সাবিনা বেগম নওয়া বাজার আহমদিয়া ফাজিল মাদ্রাসায় ৭ম শ্রেণিতে এবং ছেলে সায়েম গোয়ালবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র ছিল।