এইমাত্র
  • প্রেমে বাধা দেওয়ায় প্রেমিকার চাচাতো ভাইকে হত্যা
  • নাটোরে বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট মামলায় খালাস বিএনপি নেতা দুলু
  • অবশেষে গাজা ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরায়েলি সেনারা
  • টিউলিপের পদত্যাগপত্রের জবাবে যা লিখলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী
  • ডেসটিনির এমডিসহ ১৯ জনকে ১২ বছর করে কারাদণ্ড
  • ভোলায় জ্বিনের বাদশাকে জিম্মি করে মুক্তিপন দাবি, দুই ছাত্রদল নেতা গ্রেফতার
  • সবাইকে খুঁজে খুঁজে ধরা হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ-হাসিনাসহ ১২৪ জনের নামে মামলা
  • সংস্কার প্রস্তাব জমা দিয়েছে চার কমিশন
  • ঠাকুরগাঁওয়ে বিএসএফের হাতে বাংলাদেশি আটক
  • আজ বুধবার, ২ মাঘ, ১৪৩১ | ১৫ জানুয়ারি, ২০২৫
    দেশজুড়ে

    ভিত্তিহীন অভিযোগে নোয়াখালী টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ অধ্যক্ষের অপসারণ

    শাহাদাৎ বাবু, নোয়াখালী প্রতিনিধি প্রকাশ: ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৪৭ এএম
    শাহাদাৎ বাবু, নোয়াখালী প্রতিনিধি প্রকাশ: ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৪৭ এএম

    ভিত্তিহীন অভিযোগে নোয়াখালী টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ অধ্যক্ষের অপসারণ

    শাহাদাৎ বাবু, নোয়াখালী প্রতিনিধি প্রকাশ: ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৪৭ এএম
    অধ্যক্ষ সাইফুর রহমান

    নোয়াখালী টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে স্বৈরাচারী সরকারের আমলে ছাত্রলীগের কমিটি না দেয়ায় ও অসাধু সহকর্মীদের অনৈতিক সুবিধা না দেওয়ায় পূর্বে থেকেই কিছু স্বার্থন্বেষী কুচক্রী মহলের রোষানলে পড়ে জামাত শিবির ট্যাগ বসানো হয় অধ্যক্ষ সাইফুর রহমানের নামে। সেই সূত্রপাতে স্বার্থান্বেষী সহকর্মীদের গভীর ষড়যন্ত্রে ভিত্তিহীন অভিযোগে এবং ভুল ব্যখ্যায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সুবিধাজনক সেন্টিমেন্টকে অন্যায় ভাবে কাজে লাগিয়ে নোয়াখালী টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের অধ্যক্ষকে অপসারণ করে শাস্তি মূলক বদলি করা হয়েছে বলে জানা যায়।

    খোঁজ নিয়ে জানা যায়, যারা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক দাবি করে অভিযোগ দাখিল করেছেন প্রকৃতপক্ষে তারা ছাত্রলীগ কর্মী। শুধুমাত্র মুখোশ পরিবর্তন করে তারা স্বার্থ হাসিলের জন্য বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সেজেছেন বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সাধারণ শিক্ষার্থী। অপরদিকে ছাত্র সমন্বয়ক হিসেবে যাদের নাম ব্যবহার করে অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে কার্যত স্বৈরাচার পতনের আন্দোলনের সময় তারা নোয়াখালী জেলার বাইরে বিভিন্ন জেলায় ফ্যাক্টরি ভিজিটে ছিলেন বলে অফিসিয়াল ডকুমেন্ট পাওয়া যায়।

    এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযোগকারী ছাত্র আহসানুজ্জামান ও নাহিদ হাসান জানান, আমাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সত্য নয়। এবং অধ্যক্ষ সাইফুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগের পূর্বের তদন্ত প্রতিবেদন আমরা মানিনা। সাবেক অধ্যক্ষ সার্বিকভাবে ভুল তথ্য প্রদান করেছেন।

    অপরদিকে তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ দুর্ব্যবহার, অবৈধ নিয়োগ প্রাপ্তি, অর্থ কেলেংকারী বা টাকা আত্বসাতের মতো দুর্নীতির অভিযোগের ডকুমেন্টারি কোন সত্যতা পাওয়া যায়নি।

    অধ্যক্ষ সাইফুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগকারীর অভিযোগ ছিল বিএসসি ইন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স ৩ বৎসর মেয়াদি ডিগ্রী অর্জন করার।

    অথচ সাইফুর রহমান ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়া থেকে ২০১০ সালে ৪ বছর মেয়াদী ১৩০ ক্রেডিট বুটেক্স তথা কলেজ অব টেক্সটাইল এর ন্যায় বিএসসি ইন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স সম্পন্ন করেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায়।

    বস্ত্র অধিদপ্তরে পরিকল্পিতভাবে নামে বেনামে অভিযোগের ভিত্তিতে বস্ত্র মন্ত্রণালয় তথা বস্ত্র অধিদপ্তর অভিযোগের আলোকে ২বার তদন্ত করে অভিযোগ খারিজ করে। প্রথম পর্যায়ে শাহাদাৎ হোসেন উপসচিব এবং ২য় পর্যায়ে বৃহৎ পরিসরে তদন্ত করেন নেছার আহমেদ, যুগ্ম সচিব ও পরিচালকের (বস্ত্র) নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটি। অভিযোগকারীর অভিযোগের ভিত্তিতে খুঁটিনাটি সকল বিষয়সহ ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়া কর্তৃপক্ষের কাছে সত্যতা নিশ্চিতের জন্য জানতে চাইলে। ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়া কর্তৃপক্ষ অধ্যক্ষ সাইফুর রহমানের বিএসসি ইন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সটি ৪ বছর মেয়াদি ছিলো বলে তদন্ত কমিটির কাছে নিশ্চিত করে।

    এর আগে বস্ত্র অধিদপ্তর কর্তৃক নিয়োগ প্রাপ্ত হয়ে ২ ফেব্রুয়ারি ২০০৫ সালে সহকারী ইন্সট্রাক্টর হিসেবে অধিদপ্তরে যোগদান করেন তিনি। পরবর্তীতে ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ সালে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (বিপিএসসি) কর্তৃক প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী চার বছর মেয়াদি বিএসসি ইন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ও সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে দুই বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতাসহ মোট ৫ বছরের অভিজ্ঞতা চেয়ে সহকারী অধ্যাপক (কারিগরি) পদে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী তিনি পূর্বের শিক্ষকতার সময়কালকে সংশ্লিষ্টক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা হিসেবে উল্লেকপূর্বক উক্ত পদ(সহকারী অধ্যাপক) এর একজন প্রার্থী হিসেবে বিধি মোতাবেক বিপিএসসিতে আবেদন করেন। আবেদনে তিনি তার চাকরির ২০০৫ সাল থেকে সহকারি ইন্সট্রাক্টর পদের চাকরিসহ যাবতীয় তথ্যাদি বি পি এস সি ফরম -৩ এ সঠিকভাবেই উল্লেখ করেন, এতে কোন তথ্য ভুল বলে প্রতিয়মান হয়নি।

    অধ্যক্ষ সাইফুর রহমান বলেন, লিখিত অভিযোগে বলা হয় আমি ল্যাব অ্যাসিস্টেন্ট ১২ তম গ্রেড থেকে সরাসরি ৬ষ্ঠ গ্রেডে পদন্নোতি নিয়েছি। কিন্তু প্রমাণ উপস্থাপন করে তিনি বলেন, আমার পদবী ছিল সহকারী ইনস্ট্রাকটর অথচ অভিযোগকারী উল্লেখ করেছেন ল্যাব অ্যাসিস্টেন্ট। কার্যত আমি চাকরি করেছি সহকারী ইন্সট্রাক্টর পদে। অথচ অভিযোগকারী অভিযোগে বলেছেন, ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট। যা বস্তুতপক্ষে চরম মিথ্যাচার।

    নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি সূত্রে জানা যায়, অধ্যক্ষ হিসেবে তিনি পদোন্নতি দিয়ে নয় বরং বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন (বিপিএসসি) এর সহকারী অধ্যাপক পদে আলাদাভাবে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হলে, সেখানে তিনি অন্যান্য প্রার্থীর ন্যায় আবেদনপূর্বক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন।বিপিএসসি-তে আবেদন করার পূর্বে তিনি কর্মরত কলেজ প্রসাশন, বস্ত্র অধিদপ্তর ও বস্ত্র মন্ত্রণালয় থেকে অনুমতি নেয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়। এখানে উল্লেখযোগ্য যে তৎকালীন বস্ত্র অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, উপপরিচালক, ও সহকারী পরিচালকের সম্মুখে মৌখিক পরীক্ষা দিয়ে সকল সনদ পত্র যাচাই বাছাই পূর্বক তিনি (এন ও সি) প্রদান করেন। যে সকল অভিজ্ঞতা, যোগ্যতা ও শর্তের ভিত্তিতে তিনি এই পদে পরীক্ষা দেওয়ার অনুমতি পান, পরবর্তীতে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন তার এই অভিজ্ঞতাকে গ্রহণ করে এবং যাবতীয় তথ্যসহ সনদ যাচাই করণ পূর্বক সহকারী অধ্যাপক (কারিগরি) পদে পরীক্ষা দেওয়ার অনুমতি দেয়া হয়। পরবর্তীতে লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে অন্যান্য প্রার্থীর ন্যায় তিনিও যোগ্যতার ভিত্তিতে 'বিপিএসসি' কর্তৃক সুপারিশ প্রাপ্ত হন।

    অর্থ আত্মসাৎ এর বিষয়টিরও ডকুমেন্টারি কোন সত্যতা পাওয়া যায়নি। সাইফুর রহমান ২০২১-২০২৩ অর্থ বছরের বাজেট কৃত অর্থের ২০% অর্থ ফেরত, ৫% ভ্যাট ট্যাক্স দিয়ে বাকী টাকা প্রতিষ্ঠানের ৬ টি গ্যাস বার্নারের বিল,জীপ ও বাস গাড়ির বিল প্রদান করেন বলে স্পষ্ট হয়।

    সাবেক অধ্যক্ষ সাইফুর রহমান জানান, ছাত্রদের নিকট থেকে মিল ভিজিট বাবদ ২০০ টাকা করে নেওয়ার বিষয়টি মীমাংসিত, মিল ভিজিটের সম্পূর্ণ খরচ শিক্ষকদের সম্মানি , গাড়ির ড্রাইভার ও হেল্পারের খরচ সহ , জ্বালানি ,মবিলসহ বিভিন্ন খাতে ঘাটতি দেখা দিলে বাজেটের টাকা খরচ করা হতো। এক্ষেত্রে ২০২৩ সালের যে মিল ভিজিট অসম্পূর্ণ আছে তার সম্পূর্ণ অর্থ কলেজ ফান্ডে জমা রয়েছে।

    সরকারি গাড়ি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহারের অভিযোগের প্রেক্ষিতে দেখা যায়, বিগত চার বছরে প্রয়োজনের তুলনায় ন্যূনতম টিএ/ডিএ বিল উত্তোলন করেছেন তিনি। কারণ হিসেবে দেখা যায় অফিশিয়াল গাড়ি ব্যবহারের সময় তিনি কোন টিএ/ডিএ বিল নেননি। এভাবে চার বছরে সর্বনিম্ন পরিমাণ টাকা উত্তোলন করেও অভিযুক্ত হওয়া একেবারেই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেই মনে করেন সাবেক অধ্যক্ষ। এদিকে কর্মচারী কর্ম-কর্তাদের নিকট থেকে ২০২৩ সালের পূর্বে কোন গ্যাসবিল গ্রহন করেনি কলেজ প্রশাসন। ২০২৩ সালের জুনের পর থেকে যে টাকা গ্যাস বিল নেয়া হতো তা নিয়ম মোতাবেক সরকারি কোষাগারে জমা দেয়ার ডকুমেন্টারি প্রমাণ পাওয়া যায়।

    এভাবে প্রত্যেকটি ভিত্তিহীন ষড়যন্ত্রমূলক অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ে ক্ষেত্রে কোন রকম প্রমাণ পাওয়া যায়নি। বরং এটি প্রমাণিত হয় যে একটি কুচক্রী মহল পরিকল্পিতভাবে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য এমন অভিযোগ আনয়ন করে কথিত বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের ভুল বুঝিয়ে সুযোগ সন্ধানী সেন্টিমেন্ট কাজে লাগিয়ে তাদের সহযোগিতায় অধ্যক্ষ সাইফুর রহমানকে অন্যায় ভাবে অপসারণ করে পদাবনতি করেন।

    নোয়াখালী টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের একাধিক শিক্ষক জানান, প্রকৃতপক্ষে অধ্যক্ষ সাইফুর রহমান থাকা অবস্থায় টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে অভূতপূর্ব উন্নয়ন করেছেন তিনি। সারা বাংলাদেশে টেক্সটাইল শিক্ষার কার্যক্রমের মধ্যে প্রথম স্থান অর্জন করে সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি এবং বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিতে প্রথম স্থান অর্জন করে ইনোভেশনে মনোনীত হয় এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যা অত্র মন্ত্রণালয়ের সকল প্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রথম স্থানের গৌরব অর্জন করে।

    নাম প্রকাশ না করার শর্তে শিক্ষার্থীরা জানায়, ক্যাম্পাসের অবকাঠামো, সৌন্দর্য বর্ধন, টেক্সটাইল মিউজিয়াম, ব্যায়ামাগার, স্পেশালাইজড ল্যাব, মেকানিক্যাল ল্যাব সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা। ক্যাম্পাসের পারিপার্শ্বিক অবস্থা অধ্যক্ষ সাইফুর রহমানের নেতৃত্বে অভূতপূর্ব উন্নয়নে প্রতিপক্ষ ঈশ্বার্নিত হয়ে ক্ষতির প্রচেষ্টা চালিয়েছিল দীর্ঘদিন আগে থেকেই। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য পুরোপুরি ভুল ব্যাখ্যায় অপ্রমাণিত অভিযোগে সুবিধা জনক সেন্টিমেন্টকে অন্যায়ভাবে কাজে লাগিয়ে একজন আদর্শবান শিক্ষকের প্রতি অবিচার করা হয়েছে। বিগত ১৫ বছর এদেশের মানুষ সঠিক বিচার পায়নি। কিন্তু আজ ন্যায়বিচারের সংস্কৃতি বদলের এই সুসময়েও অবিচার হওয়াটা দুঃখজনক বলে মনে করেন তার সহকর্মী ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তারা চান অনতিবিলম্বে অধ্যক্ষ সাইফুর রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগের পুনঃ তদন্তের মাধ্যমে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা হোক।

    এইচএ

    সম্পর্কিত:

    সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি

    সর্বশেষ প্রকাশিত

    Loading…