অফিসে চুপচাপ বসে কাজ করছিলেন তরুণী। হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে চেয়ার থেকে পড়ে যান তিনি। সঙ্গে সঙ্গে নিকটবর্তী হাসপাতালে ভর্তি করানো হলে সেখানকার চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) ঘটনাটি ঘটেছে ভারতের লখনউয়ের গোমতীনগর এলাকার একটি ব্যাংকে। তরুণীর নাম সাদাফ ফতিমা। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজারের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানা যায়।
পুলিশ সূত্রে খবর, লখনউয়ের একটি ব্যাংকের কর্মী ছিলেন সাদাফ। প্রতিদিনের মতো মঙ্গলবারও নিজের চেয়ারে বসেই কাজকর্ম সারছিলেন সাদাফ। হঠাৎ চেয়ার থেকে মাটিতে পড়ে যান তিনি। এভাবে পড়ে যেতে দেখে সেখানে ছুটে যান সাদাফের সহকর্মীরা। অচেতন অবস্থায় সাদাফকে পড়ে থাকতে দেখে সঙ্গে সঙ্গে নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করানো হয় তাঁকে। সেখানকার চিকিৎসকেরা মৃত বলে ঘোষণা করেন সাদাফকে। সাদাফের সহকর্মীদের দাবি, বেশ কিছু দিন ধরে কাজকর্ম নিয়ে অতিরিক্ত চাপে ছিলেন তিনি।
খবরটি জানাজানি হতেই সমাজবাদী পার্টির প্রধান তথা উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে পোস্ট করে দুঃখপ্রকাশ করেন। তরুণীর মৃত্যুর জন্য বিজেপি সরকার এবং দেশের অর্থনৈতিক অবস্থাকে দায়ী করেছেন তিনি। তরুণীর দেহ ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর।
এদিকে সাদাফ ফতিমার মৃত্যুতে দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। প্রশ্ন উঠেছে দেশটির কাজের পরিবেশ ও সংস্কৃতি নিয়েও।
এর আগে গত জুলাই মাসে অ্যানা সেবাস্তিযান নামে এক চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট মারা যান। তিনি আর্নেস্ট অ্যান্ড ইয়াংয়ে (ইওয়াই) চাকরি করতেন। মৃত্যুর পর অ্যানার বাবা-মা জানিয়েছেন, কাজের চাপে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন তার মেয়ে। এভাবেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি। তবে ইওয়াই থেকে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তাদের দাবি, অ্যানা বাকি সবার মতোই কাজ করতো। এতে তার মৃত্যু হওয়ার কথা না।
অ্যানার মৃত্যুতে ভারতের করপোরেট কালচার নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিভিন্ন কোম্পানি ও স্টার্টআপ কর্মীদের যে ভয়াবহ চাপে রাখে সেই বিষয়টি সামনে চলে এসেছে। কেউ কেউ বলছেন, এই সংস্কৃতির কারণে অনেকে বোনাসের আশায় কিংবা কর্তৃৃপক্ষের চাপে বেশি কাজ করছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদের ব্যক্তিগত জীবন ও স্বাস্থ্য প্রভাবিত হচ্ছে।
গত সপ্তাহে অ্যানার মায়ের লেখা একটি চিঠি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। সেখানে বলা হয়, কীভাবে কোম্পানি তার মেয়েকে চাপ দিচ্ছিল। প্রায়ই তাকে ছুটির দিনে কাজ করতে হতো, লেট নাইটে কাজ করতে হতো। তিনি এই কাজের পরিবেশের সংস্কার করার অনুরোধ করেছেন।