প্রতিবছরের মতো আবারও শুরু হয়েছে ডেঙ্গু-আতঙ্ক। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ডেঙ্গুর প্রকোপ কিছুটা দেরিতে শুরু হলেও এর ভয়াবহতা কমেনি; বরং প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এডিস মশা বাহিত এ রোগটিতে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে মারা যাচ্ছে বেশি তরুণরা।
চলতি বছরে এ পর্যন্ত ১৭৭ জন মারা গেছেন ডেঙ্গুতে। এরমধ্যে ঢাকার দক্ষিণ সিটিতে সর্বাধিক ৯৫ জন। তবে ডেঙ্গুতে আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষের সংখ্যা বেশি হলেও মারা যাচ্ছে নারীরা বেশি। কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, ডেঙ্গুতে নারীরা আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হলে হাসপাতালে দেরিতে যান। ডেঙ্গুর হটস্পট নির্ধারণ করে সঠিক ব্যবস্থা নেয়ার তাগিদ দেন কীটতত্ত্ববিদরা।
এদিকে, রাজধানীর বড় বড় হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী আসছে বেশি। চিকিৎসা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীরা। ঢাকার হাসপাতালগুলোর কর্তব্যরত চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে যারা এখন হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন তাদের বেশির ভাগই ঢাকার বাসিন্দা। তবে ২০-২৫ শতাংশ রোগী ঢাকার বাইরে থেকেও আসছেন।
৩ অক্টোবর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছর ডেঙ্গু জ্বরে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭৭ জনে। মোট মৃতের মধ্যে ৫১ দশশিক ৪ শতাংশ নারী এবং ৪৮ দশমিক ৬ শতাংশ পুরুষ। এছাড়া এ বছর ডেঙ্গুতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৩৪ হাজার ৪৩৮ জন। আক্রান্তের মধ্যে ৬৩ দশমিক ১ শতাংশ পুরুষ এবং ৩৬ দশমিক ৯ শতাংশ নারী রয়েছেন।
ঢাকা সিটিতে ১২০ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে দক্ষিণ সিটিতে মারা যাওয়ার সংখ্যা সর্বাধিক ৯৫ জন। উত্তর সিটিতে ২৫ জন। ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশন ব্যতীত) ৬ জন, বরিশাল বিভাগে ১৬ জন, চট্টগ্রামে ২২ জন, খুলনা বিভাগে ১০ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১ জন মারা গেছেন।
বয়সভিত্তিক মৃত্যুর তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২১ থেকে ২৫ বছর বয়সী সর্বোচ্চ মৃত্যু ২১ জন। এরপরে রয়েছে ২৬ থেকে ৩০ বছর বয়সী ২০ জন। এতে দেখা যায়, শূন্য থেকে ৫ বছরের মধ্যে রয়েছে ৫ জন, ৬ থেকে ১০ বছরের মধ্যে ১১ জন, ১৬ থেকে ২০ বছরের মধ্যে ১২ জন, ৩১ থেকে ৩৫ বছরের ১৫ জন, ৩৬ থেকে ৪০ বছরের ৯ জন, ৪১ থেকে ৪৫ বছরের মধ্যে ১৩ জন, ৪৬ থেকে ৫০ বছরের রয়েছেন ১২ জন, ৫১ থেকে ৫৫ বছরের ১২ জন, ৫৬ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ৭ জন, ৬১ থেকে ৬৫ বছরের রয়েছেন ৯ জন, ৬৬ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে ৭ জন, ৭১ থেকে ৭৫ বছরের মধ্যে ৭ জন, ৭৬ থেকে ৮০ বছরের রয়েছেন ৭ জন এবং ৮০ বছরের উপরে মারা গেছেন ২ জন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, মশার প্রজনন ধ্বংস কার্যক্রম ভাটা পড়ায় পরিস্থিতি আবারও ভয়াল রূপ ধারণ করেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবও সে কথাই বলছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ১ হাজার ৫৫ এবং মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ১৪ জন। ফেব্রুয়ারিতে আক্রান্ত ৩৩৯, মৃত্যু ৩ জন। মার্চে আক্রান্ত ৩১১, মৃত্যু ৫ জন।
এপ্রিলে আক্রান্ত ৫০৪, মৃত্যু ২ জন। মে মাসে আক্রান্ত ৬৪৪ জন এবং মারা গেছেন ১২ জন। জুনে আক্রান্ত ৭৯৮ এবাং মৃত্যু ৮ জন। জুলাইয়ে আক্রান্ত ২ হাজার ৬৬৯ জন, মৃত্যু ১২ জন। আগস্টে আক্রান্ত ৬ হাজার ৫২১ জন এবং মারা গেছেন ২৭ জন। চলতি সেপ্টেম্বরে চলতি বছরের রেকর্ড পরিমাণ আক্রান্ত ১৮ হাজার ৯৭ জন এবং মারা গেছেন ৮০ জন। অক্টোবরে ৪ দিনে আক্রান্ত ৩ হাজার ৫০০ জন এবং মারা গেছেন ১৪ জন।