যশোরের চৌগাছায় গুপ্তঘাতক আর্সেনিকে প্রাণহানি বাড়ছে। গত দুই দশকে উপজেলার মাড়ুয়া গ্রামে আর্সেনিকে আক্রান্ত হয়ে ৩০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে একই পরিবারের রয়েছে ৭ জন। এছাড়া অঙ্গহানী হয়েছে অনেকের। নিরাপদ পানির দীর্ঘস্থায়ী পরিকল্পনা গ্রহণ না করলে আগামীতে আরো ভয়াবহ পরিস্থিতি বিরাজ করার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সচেতন মানুষ।
জানা গেছে, আর্সেনিকের দাপট কমাতে সরকারি বেসরকারিভাবে নিরাপদ পানির জন্য গ্রাবেল সেন্ড ফিল্টার (জি এস এফ), পন্ড সেন্ড ফিল্টার (এ এস এফ), আর্সেনিক আয়রণ রিমুভাল প্ল্যান্ট ও ডাগ ওয়েল নির্মান করা হয়। বর্তমানে গ্রামের পাতকুয়া ও রিং ওয়েল অকেজো অবস্থায় রয়েছে। দীর্ঘদিন রক্ষণাবেক্ষণের কারণে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে ৭টি টিউবওয়েলের মধ্যে ২টি সচল আর ৫ টি অচল রয়েছে।
১৯৯৬ সাল থেকে এই পর্যন্ত মাড়ুয়া গ্রামে ৩০ জনের বেশি মানুষের আর্সেনিকে মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে একই পরিবারের ৭ জন রয়েছেন। এরপর একে একে বাকি ৬ জনের মৃত্যু হয়। তারা হলেন আনিছুর রহমান (২০). গ্রাম্য চিকিৎসক ইয়াকুব আলী (৭০), মুক্তিযোদ্ধা আলতাপ হোসেন (৫৫), নূরজাহান (৬৫), সাবেক কৃষি অফিসার আব্দুল আজিজ (৫২), ইউছুপ আলী (৩৫), ইউছুপের স্ত্রী সালমা খাতুন (৩০)। ২০১৩ সালে মারা যান। এই পরিবারের সদস্য রোকেয়া বেগমও আর্সেেিনক আক্রান্ত হ। ২০০০ সালের ১৭ই ডিসেম্বর ঢাকায় তার অপারেশন করে ডান হাতের দুটি আঙ্গুল কেটে ফেলতে হয়েছে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, মাড়ুয়া গ্রামের এলাকার প্রায় ৮০% মানুষ আর্সেনিকে আক্রান্ত। আক্রান্তের তালিকায় শিশুরাও রয়েছে। ২০০১ সাল থেকে উপজেলা জুড়েই নিরাপদ পানি সরবরাহের জন্য সরকারি, বেসরকারি উদ্যোগে পাতকুয়া রিংওয়েল, বিভিন্ন প¬্যান্ট নির্মিত হয়। ২০১৫ সাল পর্যন্ত জাইকার সহযোগী প্রতিষ্ঠান এশিয়া আর্সেনিক নেটওয়ার্ক এসব স্থাপনা এবং চিকিৎসার দেখভাল করলেও জাপানি নাগরিক হোশি কোনিও হত্যার পর সব থমকে যায়। এরপর গত তিন বছরের বেশি সময় ধরে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে পানির উৎসগুলোর অধিকাংশই এখন অকেজো। দক্ষিন কয়ারপাড়া গ্রামের মাদ্রাসার পাশে আর্সেনিকমুক্ত প্ল্যান্ট এখন আর কেউ ব্যবহার করেনা। ময়লা আবর্জনায় ভরে গেছে। জগদীশপুর মসজিদের পাশে আর্সেনিকমুক্ত পাতকুয়া এখন নষ্ট। মাড়ুয়া পুরাতন মসজিদ সংলগ্ন আর্সেনিক আয়রণ রিমুভাল প্ল্যান্টটি অকেজ অবস্থায় পড়ে আছে। এসব প্ল্যান্টগুলো রক্ষনাবেক্ষনের অভাবে নষ্ট হয়ে গেছে। নিরাপদ পানির অভাবে মানুষ জেনে বুঝেও আর্সেনিক পানি পান করতে বাধ্য হচ্ছেন।
চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. লুৎফুন্নাহার লাকি জানান, আর্সেনিকে আক্রান্ত রোগীদের নিয়মিত খোঁজ খবর রাখা হয়। সরকারিভাবে তাদের ওষুধ দেয়া হয়। আগের চেয়ে এখন আর্সেনিকে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে কিনা তা খোঁজ নিয়ে দেখবেন।
যশোরের ডেপটি সিভিল সার্জন ডা. নাজমুস সাদিক রাসেল জানান, মাড়ুয়া গ্রামে আর্সেনিকের প্রকোপ অনেক আগে থেকেই। আর্সেনিকে আক্রান্তদের সরকারি -বেসরকারিভাবে সব সময় খেয়াল রাখা হয়। আর্সেনিকের মাত্রা কমানোর জন্য পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানির জন্য টেকসই ও দীর্ঘস্থায়ী পরিকল্পনা গ্রহণের কোন বিকল্প নেই।
উল্লেখ্য, চৌগাছা উপজেলায় ৩ হাজার ৬শ ৫৬টি নলকূপ রয়েছে। গত ৫ বছর ধরে সব ধরণের নলকূপ স্থাপন বন্ধ রাখা হয়েছে। আর্সেনিক শনাক্ত হওয়ার পর বিশুদ্ধ পানি নিশ্চিত করতে ৪২৯টি রিংওয়েল, ১৭০টি ডাগওয়েল, ৩৫টি পিএসএফ ও ১৬৭টি এআইআরপি স্থাপন করা হয়েছিল।
এইচএ