কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার মুনিয়ারীকান্দা গ্রামের হাফেজ মাওলানা নুরুজ্জামানের ছেলে সিফাত উল্লাহ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলেন গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় শহীদ হন সিফাত। ওই উপজেলার মাওনা এমদাদুল উলূম জামিয়া ইসলামীয়া মাদ্রাসার ছাত্র ছিল সে। নিহত সেই সিফাতের পরিবার প্রতারণার শিকার হয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
জানা গেছে, ছেলে হারানোর বেদনায় পরিবারটি শোকাহত। ছাত্র আন্দোলনে নিহত সিফাতের পরিবারকে সার্বিক বিবেচনায় জামায়াতে ইসলাম ২ লাখ টাকা অনুদান দেয়। পরবর্তীতে বিএনপির কিশোরগঞ্জ জেলা মহাসমাবেশে তার বাবাকে আরও ১ লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা করে। আর্থিক সহায়তার বিষয়টি সংঘবদ্ধ প্রতারকচক্র জানতে পারেন। পরে প্রতারকচক্র অভিনব কৌশলে সিফাতের পরিবারের সদস্যের কাছ থেকে কৌশলে ১ লাখ ৫৬ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। গত ৬ অক্টোবর রবিবার ঘটনাটি ঘটে।
নিহত সিফাত উল্লাহকে হারানোর পর দরিদ্র বাবা দিশাহারা হয়ে পড়েন। তার বাড়িতে দীর্ঘদিন ছিল শোকের আবহ বিরাজমান ছিল। এ অবস্থায় পরিবারে শোক কাটতে না কাটতেই প্রতারক চক্র তার পরিবারর কাছ থেকে অভিনব কৌশলে হাতিয়ে নিল ১ লাখ ৫৬ হাজার টাকা। ৬ অক্টোবর এই টাকা হাতিয়ে নেয় প্রতারকচক্রের সদস্যরা।
নিহতের বাবা মাওলানা নুরুজ্জামান জানান, ৬ অক্টোবর রবিবার দুপুর ১২টার দিকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের পরিচয় দিয়ে (০১৮৯৮-৩০৬৩৩৩) এই নম্বরে একটি ফোন আসে। এতে বলা হয় শহীদ সিফাত উল্লাহর পরিবারের নামে ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। আজকে ২ লাখ টাকা পাঠাবে বাকি ৩ লাখ আগামীকাল পাঠাবে। এজন্য অ্যাকাউন্ট নম্বর দিতে বলেন। নিজের নামে কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট না থাকার কথা জানালে পরিবারের অন্য কোনো অ্যাকাউন্ট নম্বর দিতে বলা হয়। এর পর নিহতের চাচা ঢাকায় অবস্থানরত অবসরপ্রাপ্ত চাকরিজীবী আমিনুল হকের অ্যাকাউন্ট নম্বর দেন। কিছুক্ষণ পরে জানানো হয় এটিএম কার্ডের ছবি পাঠাতে হবে। পরে হোয়াটসঅ্যাপে এটিএম কার্ডের ছবি পাঠান। এরপর ঘণ্টা তিনেক পর জানতে পারেন প্রতারকচক্র নিহত সিফাত উল্লাহর চাচার অ্যাকাউন্ট থেকে ১ লাখ ৫৬ হাজার ১৫০ টাকা উঠিয়ে নিয়ে গেছে। পরবর্তীতে বার বার ওই নম্বরে ফোন দিলেও ফোন রিসিভ হয়নি। পরে ঢাকার কাফরুল থানায় একটি সাধারণ ডায়রি (জিডি) করেন নিহতের চাচা আমিনুল ইসলাম।
সিফাতের বাবা মাওলানা নুরুজ্জামান আহাজারি করে বলেন, ‘ছেলে হারিয়ে এমনিতেই সব শেষ হয়ে গেছে। পরিবারের স্বপ্ন ভেঙে গেছে, আমি খুব দরিদ্র মানুষ, এই সময়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়ায় তিনি বড় বিপদে পড়ে গেছেন। তিনি আরও বলেন, ‘সবাইকে এই প্রতারণার বিষয়টি জানাতে হবে। কারণ কোনো পরিবার যেন শহীদ সিফাত উল্লাহর পরিবারের মতো যেন প্রতারিত না হয়।
এ বিষয়ে পাকুন্দিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. বিল্লাল হোসেন বলেন, এমন ঘটনা খুবই দুঃখজনক এবং বেদনাদায়ক। আমি আগেই নিহত সিফাত উল্লাহর পরিবারকে সতর্ক করেছিলাম এই ধরনের প্রতারণা হতে পারে। তারা সহজ-সরল, তাই হয়তো বুঝতে পারেনি। খুব দ্রুত প্রতারক চক্রটিকে আইনের আওতায় আনা হবে বলে তিনি জানান।
এসএফ