ডিম পুষ্টি উপাদানে ভরপুর একটি প্রাকৃতিক খাদ্য, যাকে পুষ্টি উপাদানের পাওয়ার হাউসও বলা হয়ে থাকে। শিশু থেকে বৃদ্ধ যেকোনো বয়সের মানুষের জন্যই ডিম একটি অত্যন্ত উপাদেয় খাদ্য। ডিম রান্নার বা খাওয়ার হাজারও রেসিপি থাকলেও সেদ্ধ করে ডিম খাওয়াকে সবচেয়ে পুষ্টিকর মনে করা হয়। কারণ সেদ্ধ ডিমের ক্যালোরি মোটামুটি কম এবং পুষ্টি উপাদান যেমন প্রোটিন, ভিটামিন এবং অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট অক্ষুণ্ন থাকে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারে।
একটি বড় ডিমের ওজন প্রায় ৫০ গ্রাম হয়ে থাকে। একটি সেদ্ধ ডিমের পুষ্টি উপাদান হলো: ক্যালোরি ৭৭, কার্বোহাইড্রেট ০.৫৫ গ্রাম, প্রোটিন ৬.৫, টোটাল ফ্যাট ৫.৫ গ্রাম, স্যাচুরেটেড ফ্যাট ১.৬৫ গ্রাম, কোলেস্টেরল ১৮৬.৫ মিলিগ্রাম, সোডিয়াম ৬২ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ৬৩ মিলিগ্রাম। এছাড়াও ভালো পরিমাণে আয়রন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন এ, ভিটামিন ই, ভিটামিন ডি, ভিটামিন বি৬, ম্যাগনেসিয়াম, সালফেট ও বিভিন্ন প্রকার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে।
ডিমের অনেক উপকার। ডিম খেলে পেট তো ভরেই, তার সঙ্গে নানারকম পুষ্টিকর উপাদানও শরীরে যায়। সেদ্ধ ডিম ওজন কমাতে সাহায্য করে। তাই যারা ওজন কমাতে চান তাদের ডায়েটে অবশ্যই ডিম থাকতে হবে। এছাড়া হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখে, দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়, চুল এবং ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে ও ব্লাড সুগারকে কার্যকর উপায়ে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। সেদ্ধ ডিমের কুসুম ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমিয়ে উপকারী কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। তবে অবশ্যই নিয়ম মেনে আপনাকে ডিম খাওয়া উচিত।
শিশুরা নিয়মিত সেদ্ধ ডিম খেলে দাঁত, হাড় শক্তিশালী হয়। গর্ভাবস্থায় মহিলারা নিয়মিত সেদ্ধ ডিম খেলে তাদের ও সন্তানের উপকার হয়। সেদ্ধ ডিম স্নায়ু ও হৃদযন্ত্র সচল রাখতে সাহায্য করে যা ডিমের কুসুমে থাকে। এটা মস্তিষ্কের মেমব্রেন ও পেশি সুগঠিত রাখতে সাহায্য করে, যা মস্তিষ্কের ঝিল্লি গঠন করতে সহায়তা করে এবং এটা স্নায়ু থেকে পেশিতে সংবেদন পৌঁছাতে সহায়তা করে। সেদ্ধ ডিম খেলে মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়।
ডিম চোখ, চুল ও নখের জন্য উপকারী। প্রতিদিন একটা করে সেদ্ধ ডিম খাওয়া ‘ম্যাকুলার’ ক্ষয় কমায়। কারণ এতে আছে লুটেইন ও জ্যাক্সেন্থিন। ডিমে উচ্চ মাত্রায় সালফার থাকায় তা চুল ও নখ ভালো রাখতেও সহায়তা করে। তাছাড়া সেদ্ধ ডিম খাওয়া চোখের ছানি হওয়ার ঝুঁকি কমায়।
ডিমের কুসুম নিয়ে একটি ভ্রান্ত ধারণা প্রচলিত আছে। যেহেতু ডিমের কুসুমে অধিক মাত্রায় কোলেস্টেরল থাকে, তাই ধারণা করা হতো, যাঁদের করোনারি হার্ট ডিজিজ রয়েছে এবং রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি, তাঁদের জন্য ডিমের কুসুম ক্ষতিকর। পরামর্শ দেওয়া হতো কুসুমছাড়া ডিম খাওয়ার জন্য।
কিন্তু বর্তমানে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক গবেষণায় এটি প্রমাণিত হয়েছে, ডিমের কুসুম থেকে যে কোলেস্টেরল পাওয়া যায়, তা রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ায় না এবং এটি করোনারি হার্ট ডিজিজের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। প্রতিদিন কুসুমসহ একটি ডিম সবার জন্য নিরাপদ এবং স্বাস্থ্যকর। ডিমের কুসুমে পুরো ডিমের প্রায় অর্ধেক পুষ্টি উপাদান থাকে। এ ছাড়া কুসুমে আমাদের জন্য উপকারী উপাদান ফলেট, কোলিন, ভিটামিন এ, ভিটামিন ডি, ভিটামিন ই, লেটিইন এবং জি-অ্যাকজানথাইন থাকে।
তাই কুসুম বাদ দিয়ে নয়, কুসুমসহ প্রতিদিন একটি ডিম সবার জন্যই স্বাস্থ্যসম্মত। সেদ্ধ ডিম খাওয়া শরীরের পক্ষে ভালো হলেও বেশি খাওয়া মোটেই ভাল নয়। উচ্চরক্তচাপ, ইউরিক অ্যাসিড এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি থাকলে ডিম খাওয়ার আগে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
লেখক: নিউট্রিশন অফিসার, ন্যাশনাল হেলথকেয়ার নেটওয়ার্ক, বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি
এমআর