অস্ত্রোপচারের দিনক্ষণ ঠিক। রোগীও উপস্থিত। কিন্তু দেখা নেই চিকিৎসক দলের। সব কিছু ফেলে কক্সবাজারে সমুদ্রবিলাসে গেছেন তারা। এমনই অভিযোগ জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাস কেন্দ্রের (নিটোর) একটি ইউনিটের চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে।
হাড়ের জটিল সব চিকিৎসায় প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এখানে ছুটে আসেন হাজারও মানুষ। কিন্তু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের এমন গাফিলতির জেরে সাধারণ মানুষের ভোগান্তির যেন শেষ নেই। সুন্দর চিকিৎসা সেবার দাবি জানিয়েছেন রোগী ও স্বজনরা।
প্রায় দেড়মাস আগে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাবনা থেকে পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি হন ফজর আলী। কথা ছিল ভর্তির পরপরই হবে তার পায়ের অস্ত্রোপচার। কিন্তু ফজর জানেন না ঠিক কি কারণে চারবার তারিখ ঠিক করার পরও তার অস্ত্রোপচার হয়নি। তাই অপারেশন থিয়েটারের (ওটি) সামনে পঞ্চম বারের মত অপেক্ষায় ষাটোর্ধ্ব এই বৃদ্ধ।
তিনি বলেন, ‘শুধু তারিখ পরিবর্তন হচ্ছে। জিজ্ঞেস করলে বলে হবে। কিন্তু কবে হবে সেটা আর কেউ জানে না।
এদিকে ফজর আলী ওটি পর্যন্ত আসতে পারলেও হাসপাতালটির রেড-২ ইউনিটের রোগীদের অবস্থা আরও শোচনীয়। মূলত সপ্তাহে মঙ্গলবার এবং বৃহস্পতিবার এই ইউনিটে অস্ত্রোপচার হয়। গেল সপ্তাহে নার্সদের আন্দোলনে সেটি হয়নি। সপ্তাহ ঘুরে আবার মঙ্গলবারেও দেখা নেই ডাক্তারের।
নিয়ম অনুযায়ী ইউনিট প্রধান থাকার কথা থাকলেও তার দেখা মেলেনি। সময় সংবাদ নিশ্চিত হয়েছে, রোগীদের এভাবে ভোগান্তিতে রেখে এই ইউনিটটির গুরুত্বপূর্ণ সব চিকিৎসকরা এখন প্রমোদ ভ্রমণে। একটি ওষুধ কোম্পানির অর্থায়নে চিকিৎসকদের এমন খামখেয়ালিপনায় দীর্ঘ হচ্ছে সাধারণ রোগীদের অপেক্ষা। অন্যদিকে বাড়ছে অযৌক্তিক আর্থিক ক্ষতি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ছুটিতে যাওয়া চিকিৎসকদের কক্সবাজার ভ্রমণের ব্যবস্থা করেছে অপসোনিন ফার্মা। যাতে খরচ হয়েছে প্রায় ২৫ লাখ টাকা। আর বিমানে কক্সবাজার গেছেন চিকিৎসকরা।
ইউনিট-২ এর প্রধান ডা. মো. কামরুজ্জামানের দাবি, চিকিৎসকরা নিয়ম মেনেই ভ্রমণে গেছেন। তবে দায়িত্ব ফেলে ওষুধ কোম্পানির টাকায় ভ্রমণে যাওয়া কতটুকু রীতিসিদ্ধ, এমন প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।
ডা. কামরুজ্জামান বলেন, ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি কোনোদিন কাউকে এরকম করে না। আমরা তো ছোট ডাক্তার না, আমরা বড় কোনো ডাক্তার না। যে একটা সোসাইটির প্রোগ্রাম অমুকের প্রোগ্রাম এমন না।’
পরে চেম্বারে ডেকে বিষয়টি নিয়ে রফাদফারও অনুরোধ আসে তার তরফ থেকে।
বিশেষায়িত এই হাসপাতালটি ঘিরে যেন হাট বসিয়েছে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা। তাদের দাপটে গণমাধ্যমকর্মীদেরও কাজ করা দায় এখানে। তবে নাকের ডগায় এতকিছু ঘটলেও তার ছিটেফোঁটাও জানেন না নিটোরের পরিচালক ডা. কাজী শামীম উজ্জামান।
অভিযোগের ফিরিস্তি শুনে বললেন, ‘এমনটা হওয়ার কথা না। যেহেতু অভিযোগ উঠেছে, সেহেতু বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এফএস