'আজ মিমহীন আরেকটি চূড়ান্ত পরীক্ষা শেষ হলো! তার জন্য বরাদ্দকৃত খাতাটি পড়ে রইলো শেষ অব্দি! যতক্ষণ ডিউটি দিচ্ছি, নিশপাপ সেই মুখটি বারবার মনে ভেসে উঠছে। আল্লাহ মিমকে জান্নাতুল ফেরদৌসের সর্বোচ্চ স্তরে অধিষ্ঠিত করুন।'
নিহত বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী মায়েশা ফওজিয়া মিমের স্মৃতিচারণে নিজের ফেসবুক ওয়ালে কথাটি লিখেছেন তারই (মিম) শিক্ষক মো. আইয়ুব আলী।
গত ৩০ অক্টোবরে বেপরোয়া বাসের ধাক্কায় নিহত হয় পরিসংখ্যান বিভাগের প্রথমবর্ষের শিক্ষার্থী মায়েশা ফওজিয়া মিম। এর একদিন আগে অর্থাৎ ২৯ অক্টোবর থেকে শুরু হয় তার প্রথমবর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা। প্রথমটিতে অংশগ্রহণ করতে পারলেও দ্বিতীয় পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারিনি তিনি। ঘাতক বাস তার আগেই প্রাণ কেড়ে নেয়।
আজ মঙ্গলবারে (১২ নভেম্বর) মায়েশা মিমের দ্বিতীয় পরীক্ষাটি অনুষ্ঠিত হয়েছে। দ্বিতীয় পরীক্ষার কোর্স ছিলো 'হিস্ট্রি অব দ্য ইমার্জেন্স অফ ইনডিপেনডেন্ট বাংলাদেশ'। আগের মতই ছিলো ফওজিয়া মিমের পরীক্ষার আসন বরাদ্দ তবে সে ছিল না। রয়েছে তার শূন্যতা। কক্ষে তার স্থানে আসনটি খালি অবস্থায় ছিল, যেখান তার স্মৃতিতে একটি ফুলের তোড়া ও বরাদ্দকৃত পরীক্ষার উত্তরপত্র ছিল। ফুলের তোড়ায় লেখা ছিল "মৃত্যু তোমায় কেড়ে নিতে পারে কিন্তু স্মৃতিতে তুমি চিরকাল অমর থাকবে।" সহপাঠি ও শিক্ষকেরা এমন শূন্যতার আসন খালি দেখে বারবার তাকে স্মরণ করে ভেঙে পড়েন ।
নিহত ফওজিয়া মিমের সহপাঠী জাহিদ হাসান সময়ের কন্ঠস্বরকে জানান, তারসাথে পরীক্ষা দিলাম সেদিন। আজ সে নেই ভাবতে বুকটা ফেটে যাচ্ছে। মনটা ভারি হয়ে উঠেছে। প্রথম পরীক্ষা সে দিয়েছিল,পরেরটা আর দিতে পারলো না। একটা জীবন্ত প্রদীপ হঠাৎ নিভে গেলো ভাবতেও পারছিনা। পরীক্ষা দিয়েছি আর তার শূন্যতা অনুভব করেছি। মনে রক্তখরণ হচ্ছে। আল্লাহ তাকে ভালো রাখুক।
মিমের শিক্ষক আহসানুল হক জানান, মিম আমাদের বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিল। আজ মিমের দ্বিতীয় পরীক্ষা ছিল কিন্তু সে আমাদের মাঝে নেই। তার নিশপাপ চেহারাটি বার বার ভেসে উঠছে। সে আমার সন্তানের মত, সন্তান হারানো কষ্টের। পরীক্ষা শেষে আমাদের বিভাগ থেকে তার জন্য মসজিদে দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছি। আল্লাহ তাকে জান্নাতবাসী করুক।