দুনিয়াতে যে যাকে যত বেশি স্মরণ করবে বা অনুসরণ করবে, সে তাকে তত বেশি ভালোবাসবে এটাই স্বাভাবিক। আর তা যদি হয় আল্লাহর জন্য তবে কেমন হবে? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদিসে পাকে মানুষের জন্য এ আমলটি সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন। যে আমলে বান্দার প্রতি আল্লাহ তাআলা সবচেয়ে বেশি খুশি হন।
মানুষের কল্যাণে, ইসলামের সুমহান আদর্শ তুলে ধরতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদিসে অনেক নসিহত পেশ করেছেন। যাতে মানুষ নিজেকে কল্যাণের পথে, উন্নতির পথে পরিচালিত করতে পারে। গোনাহমুক্ত জীবন-যাপনে নিজেকে তৈরি করতে পারে। হতাশা থেকে বেঁচে থাকতে পারে। হাদিসে কুদসিতে এসেছে-
হজরত আনাস ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি- আল্লাহ বলেন, ‘হে আদম সন্তান! যতক্ষণ পর্যন্ত তুমি আমার কাছে দোয়া করতে থাকবে এবং আমার কাছে প্রত্যাশা করতে থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমি তোমার গোনাহ ক্ষমা করতে থাকব। তোমার গোনাহের পরিমাণ যত বেশি এবং যত বড়ই হোক না কেন।
এ গোনাহের পরিমাণ যদি আসমান পর্যন্ত পৌঁছে যায় এবং তুমি যদি আমার কাছে ক্ষমা চাও, তবে আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেব। এ ব্যাপারে আমি কোনো (ব্যক্তির) পরোয়া করব না।
হে আদম সন্তান! তুমি যদি আমার কাছে (গোটা) দুনিয়া সমান গোনাহসহ উপস্থিত হও (তাওবাহ কর) আর (শুধু) আমার সঙ্গে কাউকে শরিক না কর; তাহলে আমিও ঠিক (গোটা) দুনিয়া সমান ক্ষমা নিয়ে তোমার দিকে এগিয়ে যাব। (তিরমিজি, মুসনাদে আহমদ, দারেমি, মুস্তাদরেকে হাকেম)
হাদিসের আলোকে বুঝা যায়, বান্দার যে আমলে আল্লাহ তাআলা সবচেয়ে বেশি খুশি হন, তাহলো- গোনাহের পরিমাণ যতবেশি হোক না কেন, তাওবাহ করে আল্লাহর দিকে ফিরে আসা।
তবে মুমিন মুসলমানের কিসের ভয়? নিজেদের আল্লাহর প্রিয় বান্দায় পরিণত করতে মুসলিম উম্মাহর কিসের ভয়? সুতরাং আর দেরি নয়, আল্লাহর সবচেয়ে প্রিয় বান্দা হতে তারই কাছে খাঁটি তাওবা ও ইসতেগফার করা খুবই জরুরি। তাওবাহ-ইসতেগফারের এ আমলেই আল্লাহর আলিশান দরবারে ক্ষমা প্রার্থনাকারী হিসেবে লিখিত হবে বান্দার নাম। আল্লাহর প্রিয় বান্দায় পরিণত হবে মুমিন।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মতে মুহাম্মাদির জন্য আল্লাহর সবচেয়ে প্রিয় বান্দা হতে তার আলিশান দরবারে তাওবাহ ও ইসতেগফারের অনেক আবেদন বর্ণনা করেছেন। তা থেকে দু'টি আবেদন তলে ধরা হলো-
- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি বলে-
اَسْتَغْفِرُ اللهَ الَّذِىْ لَا اِلَهَ اِلَّا هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّوْمُ وَ اَتُوْبُ اِلَيْهِ
উচ্চারণ : ‘আস্তাগফিরুল্লাহাল্লাজি লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল ক্বাইয়্যুমু ওয়া আতুবু ইলাইহি”
অর্থ : ‘আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই, যিনি ব্যতিত কোনো মাবুদ নেই, যিনি চিরঞ্জীব, চির প্রতিষ্ঠিত এবং তাঁর কাছে তাওবা করি।’ (এতে) তার গোনাহসমূহ ক্ষমা করে দেয়া হয়, এমনকি সে যুদ্ধ ক্ষেত্র থেকে পলায়ন করার মত গোনাহ করলেও।’ (তিরমিজি, মুসতাদরেকে হাকেম)
- আল্লাহর সবচেয়ে প্রিয় বান্দা হওয়ার শ্রেষ্ঠ আবেদন। যা অর্থ বুঝে অন্তর থেকে সব সময় পড়া জরুরি। বিশেষ করে সকাল-সন্ধ্যায় একান্ত আবশ্যক। আর তাহলো-
اَللَّهُمَّ اَنْتَ رَبِّى لَا اِلَهَ اِلَّا اَنْتَ خَلَقْتَنِى وَ اَنَا عَبْدُكَ وَ اَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَ وَعْدِكَ مَاسْتَطَعْتُ اَعُوْذُبِكَ مِنْ شَرِّمَا صَنَعْتُ اَبُوْءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَىَّ وَ اَبُوْءُلَكَ بِذَنْبِى فَاغْفِرْلِىْ فَاِنَّهُ لَا يَا يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ اِلَّا اَنْتَ
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা আংতা রাব্বি লা ইলাহা ইল্লা আংতা খালাক্বতানি ওয়া আনা আবদুকা ওয়া আনা আলা আহদিকা ওয়া ওয়াদিকা মাসতাত্বাতু; আউজুবিকা মিন শার্রি মা সানাতু আবুউলাকা বিনিমাতিকা আলাইয়্যা ওয়া আবুউলাকা বিজামবি; ফাগফিরলি ফাইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা আংতা।’
অর্থ : হে আল্লাহ! তুমি আমার প্রতিপালক, তুমি ছাড়া কোনো প্রভু নেই। তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমার বান্দা। আমি সাধ্যমতো তোমার কাছে দেয়া ওয়াদা ও প্রতিশ্রুতি পালনে সচেষ্ট আছি। আমি আমার কৃতকর্মের অনিষ্ট হতে তোমার কাছে আশ্রয় চাই। আমাকে যে নেয়ামত দান করেছ, তা স্বীকার করছি এবং আমি আমার পাপসমূহ স্বীকার করছি। অতএব তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। কেননা তুমি ছাড়া কেউ ক্ষমাকারী নেই।
যে ব্যক্তি পূর্ণ বিশ্বাসের সঙ্গে এ দোয়া দিনের (শুরুতে ফজরের পর সকাল) বেলায় পাঠ করে এবং সন্ধ্যার আগেই মারা যায় তবে সে জান্নাতি। আর যে ব্যক্তি পরিপূর্ণ বিশ্বাসে সঙ্গে রাতের (শুরুতে মাগরিবের সময় সন্ধ্যা) বেলায় এ দোয়া পাঠ করে এবং সকালের আগেই মারা যায়, তাহলে সেও জান্নাতি।’ (বুখারি)
সুতরাং মুমিন মুসলমানের জন্য কোনো হতাশা নয়, ছোট্ট একটি সহজ আমলেই বান্দা হয়ে যাবে আল্লাহর সবচেয়ে প্রিয় বান্দা। আর তাতেই রয়েছে বান্দার দুনিয়া ও পরকালের মুক্তি ও সফলতা।
তাই আল্লাহ তাআলার প্রতি অবিচল আস্থা এবং বিশ্বাসের সঙ্গে ইসতেগফার পড়া, তাওবাহ করা জরুরি। কেননা মুক্তির একমাত্র পথই হচ্ছে আল্লাহর দরবারে ইসতেগফার পড়া, তাওবাহ করা।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘পাপের কাফ্ফারা হল ‘অনুতাপ’। আর অনুতাপই হচ্ছে ‘তাওবাহ’। (মুসনাদে আহমাদ, ইবনে মাজাহ)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে উল্লেখিত হাদিসের ওপর আমল করার তাওফিক দান করুন। ইসতেগফার ও তাওবার মাধ্যমে গোনাহমুক্ত জীবন লাভ করে দুনিয়া ও পরকালের সফল দান করুন। মহান আল্লাহর একান্ত ভালোবাসা লাভ ও প্রিয় বান্দা হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এফএস