সরকার শুল্ক প্রত্যাহার করে নেওয়ায় দীর্ঘ দুই বছর পর বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে চাল আমদানি শুরু হয়েছে।
রবিবার (১৭ নভেম্বর) সকালে ভারত থেকে চালবোঝাই তিনটি ট্রাক বন্দরে প্রবেশের মধ্য দিয়ে এ কার্যক্রম শুরু হয়।
যশোরের মাহাবুবুল আলম ফুড প্রডাক্ট নামের একটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সুধর্ম আয়াতনির্যাত প্রাইভেট লিমিটেড নামের একটি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান থেকে প্রথম চালানে তিনটি ট্রাকে ১০৫ মেট্রিক টন (এক লাখ ৫ হাজার কেজি) নন বাসমতি চাল আমদানি করেছেন। যার মেনিফেস্ট নং-১৪১৮৭/০৩ তারিখ--১৭-১১-২৪। একই আমদানিকারকের আরও ১০০ মেট্রিক টন চাল ওপারে রয়েছে যা আজ বিকেলে বেনাপোল বন্দরে প্রবেশ করতে পারে।
বেনাপোল বন্দর থেকে চাল খালাসের দায়িত্বে রয়েছে হোসেন এন্ড সন্স নামের একটি সিএন্ডএফ এজেন্ট। সিএন্ডএফ এজেন্টের প্রতিনিধি জিয়াউর রহমান জানান, আমদানিকৃত চালের দাম ৪৫ হাজার ১৫০ মার্কিন ডলার। যা বাংলাদেশি টাকায় ৫৪ লাখ ১৮ হাজার। আমদানিকৃত প্রতিকেজি চালের দাম পড়েছে প্রায় ৫২ টাকা। এরপর পরিবহন, বন্দরের ভাড়া, ব্যাংক খরচসহ অন্যান্য খরচ রয়েছে। সেই হিসেবে প্রতিকেজি ৫৫ টাকা পড়ে যাবে।
আমদানিকারকরা জানান, দেশের বাজারে চালের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকার আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহার করে নেয়। ফলে রবিবার থেকে চাল আমদানি শুরু হয়েছে। ভারতও চাল রপ্তানিতে মূল্য উন্মুক্ত করে দেওয়ায় আমদানি বাড়বে এবং দেশের বাজারে দাম দ্রæত নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে তারা আশা করছেন।
২৪ জন আমদানিকারকের মধ্যে যশোর এলাকার ১২ জন আমদানিকারক ৭৩ হাজার সিদ্ধ ও ১৯ হাজার আতপ চাল আমদানির অনুমতি পেয়েছে। সবাই চাল আমদানি করতে পারবে কিনা সন্দেহ ব্যবসায়ীদের। কারণ আগামী ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে সমুদয় চাল আমদানি করে বাজারজাত করতে হবে।
বেনাপোল চেকপোস্ট উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের উপসহকারী হেমন্ত কুমার সরকার জানান, তাদের কাছ থেকে শুধু মাত্র একটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান (মাহাবুবুল আলম ফুড প্রডাক্ট) প্রথম চালানের ১০৫ মেট্রিক টন চালের আইপি সার্টিফিকেট নিয়েছেন। এই প্রতিষ্ঠানের আরও ১০০ মেট্রিক টন চাল আজ বিকালের দিকে বেনাপোল বন্দরে প্রবেশের কথা রয়েছে বলে সিএন্ডএফ এজেন্টের প্রতিনিধি তাদের জানিয়েছেন।
২০২৩ সালের ২০ জুলাই দেশের বাইরে সিদ্ধ ও আতপ চাল রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয় ভারত। তার আগে ২০২২ সালের নভেম্বর থেকে এ বন্দর দিয়ে ভারত থেকে চাল আমদানি বন্ধ ছিল। তবে বন্দর সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের এপ্রিল মানে মাত্র ২৮০ মেট্রিক টন চাল আমদানি হয়েছে বেনাপোল বন্দর দিয়ে।
গত ১১ নভেম্বর খাদ্য মন্ত্রনালয় এক আদেশে ২৪টি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানকে চাল আমদানির অনুমতি দেন। এক লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল ও ৫৫ হাজার মেট্রিক টন আতপ চাল আমদানির অনুমতি দেন।
খাদ্য মন্ত্রনালয়ের শর্তে বলা হয় বরাদ্দপ্রাপ্ত আমদানিকারকগণকে আগামী ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে সমুদয় চাল বাংলাদেশে বাজারজাত করতে হবে, আমদানিকৃত চালের পরিমাণ, গুদামজাত ও বাজারজাতকরণের তথ্য সংশ্লিস্ট জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রককে অবহিত করতে হবে, বরাদ্দের অতিরিক্ত আইপি ইস্যু করা যাবে না, আমদানিকৃত চাল অন্য কোন প্রতিষ্ঠানের নামে পুন:প্যাকেটজাত করা যাবে না, আমদানিকৃত চাল বস্তায় বিক্রি করতে হবে।
উল্লেখ্য, চলতি বছরে ২১ মার্চ ও ১৬ এপ্রিল দুই ধাপে দেশের ৮০টি প্রতিষ্ঠানকে ২ লাখ ৭ হাজার মেট্রিক টন চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছিল খাদ্য মন্ত্রণালয়। চাল রফতানিতে ভারত সরকারের শুল্ককর আরোপ ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে ডলার সংকটের কারণে অনুমতি থাকলেও এতদিন চাল আমদানি করতে পারেনি ব্যবসায়ীরা।
বেনাপোল স্থলবন্দরের পরচালক (ট্রাফিক) মামুন কবীর তরফদার জানান, রবিবার সকালে বেনাপোল বন্দরে ১০৫ মেট্রিক টনের (৩ ট্রাক) একটি চালান প্রবেশ করেছে। কাস্টমস থেকে শুল্কায়নের পর কাগজপত্র দেখে দ্রুত ছাড় দেওয়ার জন্য সংশ্লিস্ট সকলকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
এআই