কুমিল্লার দাউদকান্দিতে শামীমা আক্তার (২৫) নামের এক গৃহবধূকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) রাতে দাউদকান্দি উপজেলার হাট চান্দিনা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
শামীমার পরিবারের অভিযোগ, পারিবারিক কলহের এক পর্যায়ে স্বামী মাসুদ ওরফে মাসুমের হাতে খুন হয়েছেন শামীমা। এ ঘটনার পর থেকে মাসুদ পলাতক রয়েছে। অভিযুক্ত একই উপজেলার মাসুদ উপজেলার মাওরাবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা।
শামীমার বড় বোন তাছলিমা আক্তার বলেন, শামীমার আরেক জায়গায় বিয়ে হয়েছিল। এর মধ্যেই মাসুদের সঙ্গে তাঁর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সম্পর্কের এক পর্যায়ে শামীমাকে বিয়ে করতে অপারগতা প্রকাশ করেন মাসুদ। পরে মাসুদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করা হয়। মামলা থেকে রক্ষা পেতে চার বছর আগে শামীমাকে বিয়ে করেন তিনি। বিয়ের পর থেকে মাসুদকে নিয়ে চান্দিনা গ্রামে বাবার ভাড়া বাড়িতে থাকতেন শামীমা। তাঁদের দুই সন্তান আছে।
গতকালের ঘটনার বিষয়ে তাছলিমা বলেন, গতকাল রাত সাড়ে ১০টার দিকে তিন মাস বয়সী ছেলেকে দুধ পান করাচ্ছিলেন শামীমা। এ সময় পারিবারিক বিষয় নিয়ে তাঁর সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডায় জড়ান মাসুদ। একপর্যায়ে শামীমাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ও গলা কেটে পালিয়ে যান তিনি। পরে শামীমাকে উদ্ধার করে দাউদকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
চিকিৎসক জানান, নিহত শামীমার গলায় (ঘাড়ে) দুটি, ডান হাতের আঙুলে একটি ও দুই হাতের বাহুতে দুটি কোপের চিহ্ন আছে।
নিহত শামীমা আক্তার হাট চান্দিনা গ্রামের আরিফ হোসেনের মেয়ে এবং একই উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের মাওরা বাড়ি গ্রামের মো. মাসুদের স্ত্রী। তাদের তিন বছরের একটি মেয়ে এবং চার মাসের একটি ছেলে সন্তান রয়েছে।
নিহত শামীমার বোন তাসলিমা বলেন, তার স্বামী মো. মাসুদ ৪/৫ জনকে নিয়ে শামীমাকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। মাসুদ ও তার বন্ধুরা মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত। গত চার বছর পূর্বে শামীমার স্বামী মাসুদসহ ৪/৫ জন মিলে শামীমাকে ধর্ষণ করে। ওই ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি ছিলো মাসুদ। পরে এলাকাবাসী এবং গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ মিলে আলোচনা সাপেক্ষে শামীমা ও মাসুদের বিয়ে হয় এবং পরবর্তীতে ওই ধর্ষণ মামলা উঠিয়ে নেওয়া হয়। সে ও তার বন্ধুরা গণধর্ষণের মামলা থেকে রেহাই পায়। বিয়ের পর মাসুদ তার বন্ধুদের নিয়ে মাদক সেবন এবং বিক্রির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। এর প্রতিবাদ করলে আমার বোনের ওপর নির্যাতন শুরু করে মাসুদ। আমার ভগ্নিপতি মাসুদ তার বন্ধু সেলিমকে দিয়ে আমাদের নামে একাধিক মামলা করায়। সেলিম একই বাড়ির হওয়ায় এ নিয়ে স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে প্রায় ঝগড়া হতো।
নিহতের বোন আরো বলেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় উপজেলার গৌরীপুর পুলিশ ফাঁড়ি তদন্ত কেন্দ্রে সেলিম ও তার বোন সাথী সহ কয়েকজনের নামে মৌখিক অভিযোগ দিয়েছিলাম। বাড়িতে আসার পর কেন পুলিশের কাছে মাসুদের বন্ধুদের নামে অভিযোগ দিতে গিয়েছি এ জন্য মাসুদ তার বন্ধুদের নিয়ে আমার বোনকে কুপিয়ে হত্যা করেছে।
উপজেলার গৌরীপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ আমিনুল ইসলাম বলেন, গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শামীমার বড় বোন ও মাসহ আরও কয়েকজন পুলিশ ফাঁড়িতে আসে। তারা সেলিম ও সেলিমের বোনসহ কয়েকজনের নামে মৌখিক অভিযোগ দেয়। লিখিত অভিযোগ দিতে বললে পরে এসে দিবে একথা বলে তারা চলে যায়। এরপর রাতেই শুনি শামীমাকে কুপিয়ে হত্যা করেছে।
দাউদকান্দি মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জুনায়েত চৌধুরী বলেন, লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। মামলার প্রস্তুতি চলমান রয়েছে। আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।