জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ জিল বাংলা সুগার মিলে ফের বাড়ছে আখ চাষ, ফিরছে চাষিদের সুদিন এতে দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে আখ চাষ। আখ চাষাবাদ বেশ লাভজনক অর্থকারী ফসল আখ চাষ দেওয়ানগঞ্জে বেশ জনপ্রিয়। বাজারে চিনির মূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বিগত কয়েকটি আখ মাড়াই মৌসুমে সরকার আখের দাম বৃদ্ধি করেছে।
২০২২-২৩ মাড়াই মৌসুমে আখের দাম ছিল ১৮০ টাকা। ২০২৩-২৪ মাড়াই মৌসুমে সরকার প্রতিমণ আখের দাম ৪০ টাকা বৃদ্ধি করায় প্রতিমণ আখের দাম দাঁড়ায় ২২০ টাকা। চলতি ২০২৪-২৫ মাড়াই মৌসুমে আবারো প্রতিমণ আখে ২০ টাকা মূল্য বৃদ্ধি করে সরকার। সর্বশেষ প্রতিমণ আখের মূল্য দাঁড়ায় ২৪০ টাকা। অন্য ফসলের মূল্য বৃদ্ধির সাথে চাষিরা আখ চাষ থেকে এক সময় মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন। দফায় দফায় আখের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় আখ চাষে ঝুঁকছেন জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জের জিল বাংলা চিনিকল এলাকার চাষিরা। ফলে মিলটিতে প্রতি মাড়াই মৌসুমে আখ মাড়াই ও চিনি উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আখের মূল্য বৃদ্ধিতে আখ চাষে চাষিদের আগ্রহ বাড়ায় ২০২৪-২৫ আখ রোপন মৌসুমে ৫ হাজার একর জমিতে আখ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে মিলটির কর্তৃপক্ষ।
অর্থকরী ফসল আখ নির্ভর এ শিল্পে বিশাল মাত্রায় ঝুঁকি নেমে আসে ২০২০-২১ আখ মাড়াই মৌসুমে। ওই মৌসুমে মিলটি বন্ধের গুজব ছড়িয়ে পড়ে চাষিদের মধ্যে। বাস্তবেও তা-ই হয়। ওই মৌসুমে সরকার দেশের ছয়টি চিনিকলে আখ মাড়াই স্থগিত করে। জিল বাংলা চিনিকলে আখ মাড়াই স্থগিত খবরে এ অঞ্চলের চাষিরা আখ চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন। ঝুঁকে পড়েন অন্য ফসল চাষে। সে কারণে জিল বাংলা চিনিকলে দেখা দেয় বিরুপ পরিস্থিতি ও দূরাবস্থা । মিলটির এ দূরাবস্থা কাটিয়ে তুলতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে কর্তৃপক্ষকে। দিনরাত শ্রম বিনিয়োগ ও ঘাম ঝরাতে হয়েছে মাঠে।
ফলে ২০২১-২২ মাড়াই মৌসুমে আখ চাষ বৃদ্ধি পায়। ৫ হাজার ৫৩২ একর জমিতে চাষ হয় আখের। মেরুদন্ড সোজা করে দাঁড়ায় মিলটি।
আখ চাষ বৃদ্ধি পাওয়ায় ২০২৩-২৪ মাড়াই মৌসুমে ৪৪ হাজার ৯৮৮ মেট্রিকটন আখ মাড়াই করে ২ হাজার ৭১৭.৫০ মেট্রিকটন চিনি উৎপাদন করে মিলটি। আখ চাষে চাষিদের আগ্রহ বৃদ্ধি ও চিনির দামের সঙ্গে আখের মূল্যের সামঞ্জস্যতা আনয়নে কয়েক দফায় আখের দাম বৃদ্ধি করেছে সরকার। ২০২২-২৩ মাড়াই মৌসুমে আখের দাম ছিল ১৮০ টাকা। ২০২৩-২৪ মাড়াই মৌসুমে সরকার প্রতিমণ আখের দাম ৪০ টাকা বৃদ্ধি করায় প্রতিমণ আখের দাম দাঁড়ায় ২২০ টাকা। চলতি ২০২৪-২৫ মাড়াই মৌসুমে আবারো প্রতিমণ আখে ২০ টাকা মূল্য বৃদ্ধি করে সরকার। সর্বশেষ প্রতিমণ আখের মূল্য দাঁড়ায় ২৪০ টাকা। কর্তৃপক্ষের দাবি, মিল এলাকায় দিন দিন আখ চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আখের মূল্য বৃদ্ধিতে চাষিরা অন্য ফসল চাষ কমিয়ে আখ চাষে ঝুঁকছেন।
২০২৪-২৫ রোপন মৌসুমে ৫ হাজার একর জমিতে আখ চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করেছে মিলটির কর্তৃপক্ষ।
কাজলাপাড়ার আখ চাষি আমির হোসেন বলেন, আখ চাষ লাভজনক। আখ চাষে ব্যয় ও পরিশ্রম তুলনামূলক কম। আখ বছর মেয়াদি ফসল হলেও প্রতি বিঘা জমিতে আখ চাষ করে ৩০-৪০ হাজার টাকা লাভ থাকে। বর্তমানে মিলে আখ সরবরাহ করতে কোনো ভোগান্তি নেই। আখ সরবরাহের অনুমতি পত্র (পূর্জি) পেতে দুর্ভোগ পোহাতে হয় না। আখ মিলে সরবরাহ করে আখের মূল্য পেতে ভোগান্তি নেই। সে কারণে এ অঞ্চলের চাষিরা আখ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।
বাহাদুরাবাদের আখ চাষি ফকির আলী জানান , গত মৌসুমে ৫ বিঘা জমিতে আখ চাষ করেছিলেন তিনি। তখন মণপ্রতি আখের দামি ছিল ২২০ টাকা। ফলন ভালো হয়েছিল বলে প্রতিবিঘা জমিতে গড়ে ৩৫০ মণ আখ পেয়েছিলেন। তাতে ব্যয়ের তিন চতুর্থাংশ মুনাফা হয়েছিল। পাশাপাশি ভূট্টার ফলন ভাল হয়নি। তাই এ বছর তিনি ৮ বিঘা জমিতে আখ চাষ করবেন বলে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এ বার আখের দাম বেড়েছে মণ প্রতি ২০ টাকা। তাই আগামী মৌসুমে অধিক লাভের আশা করছেন তিনি।
মিল এলাকায় আখ চাষ বৃদ্ধির লক্ষ্যে গোটা আখ উৎপাদনকারী অঞ্চলকে ছয়টি সাব-জোনে বিভক্ত করে ৫৯টি ইউনিটের মাধ্যমে কাজ করছে মিলটির কর্তৃপক্ষ। প্রতিটি সাব-জোনে চাষিদের সাথে নিয়মিত মতবিনিময় করে যাচ্ছেন। সাব জোন প্রধান, ইক্ষু উন্নয়ন সহকারি, উপব্যবস্থাপক (সম্প্রসারণ), সহকারি ব্যবস্থাপক (সম্প্রসারণ)। তাদের দাবি, এ অঞ্চলের মাটি পলি দো-আঁশ। এ মাটিতে আখের ফসল ভালো পাওয়া যায়। সে কারণে চাষিরা আখ চাষে ঝুঁকছেন। মিল কর্তৃপক্ষ দাদন হিসেবে প্রয়োজন অনুযায়ী সার, বালাইনাশক, উন্নত জাতের আখের বীজ ও প্রযুক্তির সরবরাহ করছেন। তারা আশাবাদী, আখের মূল্য বৃদ্ধি, আখ চাষে কৃষকদের উন্নত প্রযুক্তির হস্তান্তর ও উপকরণের সুবিধা দেওয়ায় চাষিদের মধ্যে আখ চাষে অধিক আগ্রহ জন্মেছে। ক্রমান্বয়ে আখ চাষ আরও বৃদ্ধি পাবে।
জিল বাংলা চিনিকলের মহাব্যবস্থাপক (কৃষি) মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম বলেন, এ অঞ্চলের মাটি ও আবহাওয়া আখ চাষের অনুকূলে। এ অঞ্চলের চাষিরা আখ চাষে অভিজ্ঞ ও বাস্তব জ্ঞানসম্পন্ন। আখের মূল্য বৃদ্ধিতে চাষিরা আখ চাষে আগ্রহী হওয়ায় ২০২৪-২৫ রোপন মৌসুমে ৫ হাজার একর জমিতে আখ চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে। সেই অনুযায়ী মাঠে কাজ চলছে। গত ২০২৪ সালের ১ আক্টোবর রোপন মৌসুসের উদ্বোধন করা হয়েছে। চলতি মৌসুমে ঈশ্বরদী ৩৩,৩৪, বিএসআরআই ৪০,৪৩,৪৫,৪৬,৪৮ জাতের আখের বীজ সরবরাহ করা হচ্ছে। এ জাতের আখের ফলন বিঘাপ্রতি ৩০০ থেকে ৪০০ মণ। সরকার মণপ্রতি আখের দাম ২২০ থেকে ২০ টাকা বাড়িয়ে ২৪০ টাকা করেছে। সে কারণে চাষিরা ক্রমান্বয়ে আখ চাষে ঝুঁকছেন।
চুনিয়াপাড়া গ্রামের আখ চাষি মকবুল হোসেন মলুর দাবি, এক বিঘা জমিতে সর্বনিম্ন ৩০০ মণ আখ উৎপাদন হয়। আগের মৌসুম গুলো আখের দাম কম ছিল। ২০২২-২৩ মাড়াই মৌসুমে আখের দাম ছিল ১৮০ টাকা। ২০২৩-২৪ মাড়াই মৌসুমে সরকার প্রতিমণ আখের দাম ৪০ টাকা বৃদ্ধি করায় প্রতিমণ আখের দাম দাঁড়ায় ২২০ টাকা। চলতি ২০২৪-২৫ মাড়াই মৌসুমে আবারো প্রতিমণ আখে ২০ টাকা মূল্য বৃদ্ধি করে সরকার। আখ চাষে চাষিদের বিঘা প্রতি সর্বনিম্ন ৩০ হাজার টাকা মুনাফা আসে। সে কারণে এ অঞ্চলের চাষিরা আখ চাষে ঝুঁকছেন। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী ৬ ডিসেম্বর দেওয়ানগঞ্জ জিল বাংলা সুগার মিল চালু করার কথা রয়েছে।
জিল বাংলা চিনি কলের ব্যবস্থাপক পরিচালক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন বলেন , ২০২৪-২৫ মাড়াই মৌসুমে ৬০ হাজার মেট্রিকটন আখ মাড়াই করে ৭% চিনি আহরণ হিসেবে ৪ হাজার ২০০ মেট্রিক টন চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে। মিল বন্ধের গুজবে এ অঞ্চলের চাষিরা আখ চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন। পরপর কয়েক দফা আখের মূল্য বৃদ্ধিতে আবারও আখ চাষে ঝুঁকছেন তারা। ২০২৪-২৫ রোপন মৌসুমে ৫ হাজার এক জমিতে আখ উৎপাদনের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আবহাওয়া ও প্রকৃতি অনুকূলে থাকলে আগামী ২০২৫-২৬ মাড়াই মৌসুমে চিনি উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।
এআই