দেশব্যাপী নানা ধরনের বিশৃঙ্খলার পেছনে ‘উদ্দেশ্যমূলক ইন্ধন’ দেখছে সেনাবাহিনী। আজ বৃহস্পতিবার ঢাকা সেনানিবাসের অফিসার্স মেসে সেনাসদর আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন মিলিটারি অপারেশনস ডাইরেক্টরেটের কর্নেল-স্টাফ ইন্তেখাব হায়দার খান।
তিনি বলেন, ‘সেনাবাহিনীর পদক্ষেপের কারণে অনেক ঘটনা শেষ পর্যন্ত ঘটছে না। যেগুলো ঘটছে সেগুলোও যেন থেমে যায় সেজন্য দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছে সেনাবাহিনী। তবে ছাত্র ও শ্রমিকদের মতো সাধারণ জনগণের বিরুদ্ধে যখন সেনাবাহিনীর শক্তি প্রয়োগের বিষয় আসে তখন অনেক চিন্তা করে আগায় সেনাবাহিনী। সেজন্য হয়তো অনেকে মনে করতে পারেন যে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী যথাযথ পদক্ষেপ নেয়নি।
ইন্তেখাব হায়দার খান বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি, বা যেসব প্রতিবাদ বা অস্থিরতা হচ্ছে এগুলো করছে মূলত তিন ধরনের মানুষ।একটা হলো যারা চিহ্নিত অপরাধী, যাদের কাজই হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের অপরাধ করা। আরেকটা হচ্ছে ‘‘ইন্ধনদাতা’’, যারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অনেক কিছু করছেন। আরেকটা পক্ষ হচ্ছে দেশের সাধারণ জনগণ। এই যে ছাত্রদের আন্দোলন, পোশাক খাতের শ্রমিকরা আন্দোলন করছে, এরা কিন্তু আপনার-আমার মতো সাধারণ জনগণ।’
তিনি বলেন, ‘এখন আইন-শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকাটা থাকবে প্রথম দুই পক্ষ অর্থাৎ ‘‘অপরাধী’’ আর ‘‘ইন্ধনদাতাদের’’ বিরুদ্ধে। আর সাধারণ জনগণের বিপক্ষে আমাদের যখন দাঁড়াতে হয় তখন আমাদের অনেক চিন্তা করে কাজ করতে হয়।
‘ইন্ধনদাতা’ কারা, তাদের বলার মত কোনো পরিচয় আছে কি না এবং তাদের উদ্দেশ্য কী- এমন প্রশ্নে এ সেনা কর্মকর্তা বলেন, তা‘দের পরিচয় এখন সুনির্দিষ্ট বলতে পারব না, কিন্তু তারা কী চায় সেটা আপনি-আমি সবাই জানি। তারা দেশে একটা অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করতে চায়। তাদের এক ধরনের উদ্দেশ্য আছে এটা বলছি না, একেকজনের একেক ধরনের উদ্দেশ্য থাকতে পারে। এখানে ব্যক্তিস্বার্থ থাকতে পারে, সামষ্টিক স্বার্থ থাকতে পারে।
ইন্তেখাব হায়দার খান বলেন, ‘এ ধরনের ইন্ধনদাতা থাকবেই, এটা শুধুমাত্র বর্তমান পরিস্থিতিতে না, যে কোনো দেশ যখন শান্তিকালীন পরিস্থিতিতে থাকে, তখনও এ রকম অনেক ধরনের হতে পারে। একটা দেশে অনেক রকমের বিষয় থাকে- ব্যক্তিগত, সাংগঠনিক। ইন্ধনদাতারা সবসময় ছিল, থাকবে। কিন্তু আমরা যারা সাধারণ জনতা তাদের দায়িত্ব হচ্ছে ইন্ধনে প্ররোচিত না হওয়া।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘ইন্ধন’ প্রতিরোধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই নেওয়া হচ্ছে, কিন্তু এখানে আমাদের দায়িত্বশীলতার বিষয়ও আছে। এই যে ‘‘ইন্ধনদাতারা’’ একটা কিছু পোস্ট করার পর অন্য অনেকে সেটা কপি করছেন। তারা আমাদের মতো সাধারণ মানুষ, যারা না বুঝেই অনেক কিছু ছড়িয়ে দেন। যার ফলে অনেক অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে।”
ইন্তেখাব হায়দার খান বলেন, ‘ছাত্ররাই কিন্তু আন্দোলন করে দেশের এমন একটা পরিবর্তন এনেছে। আমরা সবাই আশা করছি যে দেশটা একটা ভালো দিকে যাবে। ছাত্ররাই যখন কারও ইন্ধনে পরিস্থিতি না বুঝে সাময়িকভাবে ভুল পথে যাচ্ছে যাচ্ছে, তখন তাদের বিরুদ্ধে আমরা যদি শক্তি প্রয়োগের কথা চিন্তা করি… তখন আমাদের কিন্তু অনেক চিন্তা করে কাজটা করতে হয়।’
তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করি ছাত্ররা বা সাধারণ মানুষ যারা আছে প্রত্যেকেই নিজ নিজ দায়িত্ব বুঝবেন। আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা যে কোনো মাধ্যমে কোনো উসকানি এলে সবাই যেন যাচাই করার চেষ্টা করেন যে আসলে ঘটনাটি কী ঘটছে।
এফএস