পনেরো বছর আগে বিডিআর বিদ্রোহের সময় ঢাকার পিলখানায় সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের বিচার চাইতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যাচ্ছেন শহিদ পরিবারের সদস্যরা।
হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত ঘটনা উন্মোচনসহ সংশ্লিষ্ট সবার বিচার নিশ্চিত করতে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দাখিলের কথা জানিয়েছেন শহিদ কর্নেল কুদরত এলাহীর সন্তান অ্যাডভোকেট সাকিব রহমান।
বৃহস্পতিবার ঢাকার মহাখালী রাওয়া হলে ‘পিলখানায় ৫৭ অফিসারসহ ৭৪ জনের হত্যার বিচার এবং শহিদ সেনা দিবসের দাবিতে’ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন- শহিদ লেফটেন্যান্ট কর্নেল কাজী রবি রহমানের স্ত্রী ডা. ফৌজিয়া রশীদ ও ভাই কাজী ওলি রহমান, শহিদ কর্নেল এরশাদের ভাই ডা. মামুন, শহিদ কেন্দ্রীয় সুবেদার মেজর নুরুল ইসলামের ছেলে আশরাফুল আলম হান্নান, শহিদ কর্নেল কুদরত এলাহির স্ত্রী লবী রহমান, শহিদ লেফটেন্যান্ট কর্নেল লুৎফুর রহমান খানের মেয়ে ফাবলিহা বুশরা, শহিদ কর্নেল মজিবুল হকের স্ত্রী নাহরীন ফেরদৌসী প্রমুখ।
‘এতো বড় হত্যাকাণ্ড, যেখানে ৫৭ জন চৌকস সেনাবাহিনীর অফিসার শাহাদত বরণ করলেন তার বিচার মিলিটারি আইনে হলো না উল্লেখ করে ক্ষোভ প্রকাশ করেন অ্যাডভোকেট সাকিব রহমান।
তিনি বলেন, মামলাটি দীর্ঘদিন আপিল ডিভিশনে থাকলেও সর্বশেষ পরিস্থিতি শহিদ পরিবারের সদস্যদের জানা নেই। মামলা চলাকালীন এই দীর্ঘ সময়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা আমাদের সঙ্গে কোনও ধরনের যোগাযোগ করেনি। আমরা যারা ভুক্তভোগী তারাই মামলার পরিস্থিতি জানি না, দেশের মানুষ কীভাবে জানবে?
তিনি বলেন, বিডিআর হত্যাকাণ্ডের পর্দার আড়ালের ষড়যন্ত্রকারী, যারা গত সরকারের সময় ক্ষমতায় ছিল। আমাদের প্ল্যান অব অ্যাকশন হচ্ছে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে আমরা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে কমপ্লেইন ফাইল করব। বর্তমান সরকারের এতদিনেও আমাদেরকে সময় দেওয়ার ৫ মিনিট সময় হয়নি, এখন যারা কমপ্লেইন ফাইল করব সেসব শহিদ পরিবারকে সরকার নিরাপত্তা দেবে আশা করছি। কারণ, আমরা যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করব তারা গত সরকারে ক্ষমতায় ছিল।
তিনি আরও বলেন, এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে শেখ ফজলে নূর তাপস, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মির্জা আজমের সম্পৃক্ততা রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করব। আন্তর্জাতিক আইনের ডকট্রিন অব কমান্ড রেসপন্সিবিলিটি অনুযায়ী শেখ হাসিনাকেও বিচারের মুখোমুখি আনা সম্ভব। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রধান হিসেবে তিনিও দায় এড়াতে পারেন না। তার বিরুদ্ধেও আমরা অভিযোগ করব। এ ছাড়া, তৎকালীন সেনা কর্মকর্তা, বিশেষ করে ডিজিএফআই কর্মকর্তা যারা ছিলেন, তখনকার সময় কিছু সাংবাদিক যারা ভুল ন্যারেটিভ সৃষ্টি করেছেন তাদের বিরুদ্ধেও আমরা অভিযোগ আনব।
তৎকালীন বিডিআর প্রধান মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদের ছেলে রাকীন আহমেদ ভূঁইয়া বলেন, বিগত ফ্যাসিবাদ সরকার আওয়ামী লীগ চাইবে না গুম-খুনের বিচার হোক। যেহেতু এখন বাধা নেই, তাই বিডিআর সদস্য হত্যার তদন্ত দ্রুত শেষ করে জড়িতদের আইনের মাধ্যমে সাজা দেওয়া হোক।
পিলখানা হত্যার দিনকে শহিদ দিবস ঘোষণা করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, জড়িতদের সাজা দিলে দেশের সব মানুষ আমাদের পাশে দাঁড়াবে। হত্যাকাণ্ডের বিচার চাওয়ায় যাদের চাকরি থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে তাদের সুনির্দিষ্ট একটি ব্যবস্থা করতে হবে।
শহিদ পরিবারের পক্ষ থেকে দাবিগুলো তুলে ধরেন শহিদ কর্নেল মজিবুল হকের স্ত্রী নাহরীন ফেরদৌসী। তিনি বলেন, গ্যাজেটের মাধ্যমে ২৫ ফেব্রুয়ারিকে ‘শহিদ সেনা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হোক। ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের আগেই ২৫ ফেব্রুয়ারিকে শহিদ সেনা দিবস ঘোষণা করে এ দিন দেশজড়ে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখারও দাবি জানান তিনি।
পিলখানা হত্যার ঘটনা সুষ্ঠু বিচারের স্বার্থে নতুনভাবে তদন্ত শুরুর দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, প্রস্তাবিত ইনকোয়ারি কমিশনের অগ্রগতি আমাদের জানানো হোক। ইতোপূর্বের সব তদন্তের প্রতিবেদন জনসম্মুখে প্রকাশ করা হোক।
অফিসিয়াল গেজেটে নিহত ৫৭ জন বীর সেনানীকে শহিদের মর্যাদা দেওয়া ও পিলখানা ট্র্যাজেডিকে উপযুক্তভাবে স্কুলের পাঠ্যবইয়ের সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করা এবং দ্রুত বিচার শেষ করে আটককৃত নির্দোষ সব মানুষকে দ্রুত ন্যায়বিচার দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
সুবেদার মেজর নুরুল ইসলামের ছেলে আশরাফুল আলম হান্নান বলেন, বিডিআর বিদ্রোহে হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় আমার বাবাকে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়। কিন্তু আমরা পদে পদে বঞ্চিত হয়েছি। ২০২০ সালে আমার মায়ের মৃত্যুর সাত দিনের মধ্যে সরকারি বাসা ছেড়ে দিতে হয়েছে। আমাদের বাসা থেকে বের করে দিয়ে কার কি ফায়দা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপনা করেন শহিদ লেফটেন্যান্ট কর্নেল লুৎফুর রহমান খানের মেয়ে ফাবলিহা বুশরা।
এসএফ