বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএ) পূর্বঘোষিত ডিম ও মুরগির উৎপাদন বন্ধের কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হয়েছে। আগামী ২ মাসের মধ্যে সরকার বিপিএ এর ১০ দফা দাবি পূরণ করবে বলে আশ্বস্ত করায় কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছে সংগঠনটি।
বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে বিপিএ।
এর আগে, প্রান্তিক পোল্ট্রি খামারিদের স্বার্থ রক্ষা, করপোরেট কোম্পানির সিন্ডিকেট বন্ধ করাসহ দশ দফা দাবি জনিয়ে ১ জানুয়ারি থেকে সারাদেশের প্রান্তিক পোল্ট্রি খামারে ডিম ও মুরগি উৎপাদন বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছিল বিপিএ। গত রোববার (১৫ ডিসেম্বর) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে ওই ঘোষণা দেওয়া হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠনটির সভাপতি মো. সুমন হাওলাদার জানান, প্রান্তিক খামারিদের স্বার্থ রক্ষায় সংকট সমাধানের জন্য সরকারকে বারবার বলার পরও তারা নজর দিচ্ছে না। উল্টো কর্পোরেট সিন্ডিকেটকে সরকার সহযোগিতা করছে। সরকারের কাছে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আবেদন জানিয়েছি। যাতে দেশের পোল্ট্রি শিল্পে প্রান্তিক খামারিরা টিকে থাকতে পারে। বর্তমানে কর্পোরেট কোম্পানির আধিপত্য ও সিন্ডিকেটের কারণে দেশের মুরগি ও ডিমের বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। যার ফলে প্রান্তিক খামারিরা ক্ষতির মুখে পড়ছেন।
বিপিএ সভাপতি সুমন হাওলাদার গণমাধ্যমকে বলেন, প্রাণিসম্পদ অধিদফতর, কৃষি বিপণন অধিদফতর ও সংশ্লিষ্ট সকল ব্যক্তিদের নিয়ে ১০দফা দাবির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সরকার প্রান্তিক খামারি এবং দেশ ও জনগণের স্বার্থে ১০ দফা দাবি পূরণের আশ্বাস দিয়েছেন। পাশাপাশি বিপিএকে এ খাতের সংশ্লিষ্ট সকল দফতরে যুক্ত করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
দেশের পোল্ট্রি শিল্পের টেকসই উন্নয়ন, খামারিদের সুরক্ষা এবং ভোক্তাদের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে পোল্ট্রি পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে সরকারের কাছে উপস্থাপিত ১০ দফা দাবির পূরণের জন্য আনুষ্ঠানিক আশ্বাস পাওয়ায় ডিম মুরগির উৎপাদন বন্ধের কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে বলে জানান সুমন হাওলাদার। তিনি বলেন, পোল্ট্রি শিল্প দেশের খাদ্য নিরাপত্তার প্রধান স্তম্ভ। সরকারের এই উদ্যোগ খামারিদের টিকে থাকা নিশ্চিত করবে এবং পোল্ট্রি পণ্যের উৎপাদন খরচ কমাতে সহায়তা করবে। আমরা আশা করি, দ্রুততম সময়ে দাবিগুলোর বাস্তবায়ন হবে।
তবে সরকারকে দুই মাসের সময় দেয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সরকার দাবিগুলো গুরুত্ব সহকারে যাচাই-বাছাই করে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেবে। এই সময়সীমার মধ্যে দাবিগুলো বাস্তবায়িত না হলে প্রান্তিক খামারিদের স্বার্থ রক্ষার জন্য কঠোর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবো। সরকারের প্রতিশ্রুতি আমাদের আস্থা দিয়েছে। তবে আমরা প্রস্তুত রয়েছি, যদি প্রয়োজন হয় কঠোর কর্মসূচি গ্রহণের।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে প্রায় ৫০ লাখ লোকের কর্মসংস্থান সমৃদ্ধ এই খাত মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। যদি সরকার এখনই পদক্ষেপ না নেয় তবে পোল্ট্রি খাতে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হতে পারে। সরকারের কাছে বারবার দাবি জানানোর পরও সরকার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে তাদেরকে সহযোগিতা করছে। তাই আমরা স্বল্প সময়ের আল্টিমেটাম দিচ্ছি। সরকার যদি দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করে, তবে দেশের সব জেলা ও উপজেলায় প্রান্তিক খামার বন্ধের কর্মসূচি ঘোষণা করছি
সরকারের পোল্ট্রি খাতে নীতি নির্ধারক সকল সংশ্লিষ্ট দফতরে বিপিএকে যুক্ত করা সহ ১০দফা দাবিগুলো হল- করপোরেট কোম্পানিগুলো শুধু ফিড ও মুরগির বাচ্চা উৎপাদনে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে, বাণিজ্যিকভাবে করপোরেট কোম্পানির ডিম ও মুরগি উৎপাদন বন্ধ করতে হবে, ফিড ও মুরগির বাচ্চার সিন্ডিকেট বন্ধ করতে হবে, প্রান্তিক খামারিদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে হবে, ক্ষুদ্র খামারিদের সহজ শর্তে ঋণ ও ভর্তুকি দিতে হবে, ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের জন্য প্রণোদনার ব্যবস্থা করতে হবে, আলাদা বাজার সুবিধা তৈরি করতে হবে, সরকারি নীতিমালা তৈরি করে করপোরেট সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, কন্ট্রাক্ট ফার্মিংয়ের ফাঁদ বন্ধ করতে হবে ও প্রান্তিক খামারিদের প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিতে হবে।
এবি