নতুন নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করে দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলছে দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের দ্বিতীয় লাইন আন্তর্জাতিক সমুদ্রবন্দর। মোংলা বন্দর খুলনার অন্যতম শ্রেষ্ঠ আকর্ষণ এবং বাংলাদেশের দ্বিতীয় সমুদ্র বন্দর। এ বন্দরকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে নতুন নতুন শিল্প কারখানা ও সম্প্রসারিত হয়েছে ব্যবসা বাণিজ্য। ফলে কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে বেকারত্ব দূরীকরণসহ দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চল তথা দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রেখে চলেছে এ বন্দরটি।
প্রতিষ্ঠার ৭৪ বছরের মধ্যে মোংলার পশুর নদীর তীরের এ বন্দরটি সরাসরি নৌ, সড়ক ও রেল যোগাযোগের মধ্য দিয়ে এখন ত্রিমাত্রিক আন্তর্জাতিক সমুদ্রবন্দরে রূপ নিয়েছে। পদ্মা সেতু চালুর পর এই সমুদ্রবন্দরে রাজধানী ঢাকা থেকে সড়কপথে এখন আমদানি-রপ্তানি পণ্য পৌঁছাচ্ছে মাত্র ৩ ঘণ্টায়। ঢাকার সব থেকে কাছের এ সমুদ্রবন্দরটি অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে সৃষ্টি করছে নতুন নতুন রেকর্ড।
সপ্তাহের সাত দিনই ২৪ ঘণ্টা ওয়ানস্টপ সার্ভিস, বন্দর জেটি, মুরিং বয়া ও অ্যাংকোরেজে একই সঙ্গে ৪৭টি জাহাজ নোঙর করার সুবিধা এ বন্দরটিকে আরও একধাপ এগিয়ে দিয়েছে। খাদ্যশস্য, সিমেন্ট ক্লিংকার, সার, মোটরগাড়ি, মেশিনারিজ, চাল, গম, কয়লা, তেল, পাথর, ভুট্টা, তেলবীজ, এলপিজি গ্যাস আমদানি এবং সাদা মাছ, চিংড়ি, পাট ও পাটজাত দ্রব্য, হিমায়িত খাদ্য, কাঁকড়া, ক্লে টাইলস, গার্মেন্ট পণ্য, রেশমি কাপড় ও জেনারেল কার্গো রপ্তানির মাধ্যমে অর্থনীতিতে বিশেষ ভূমিকা রেখে চলেছে।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ জানান, সার্বক্ষণিক এ সমুদ্রবন্দরটি চালু রাখতে বন্দরের পশুর চ্যানেলে বিদেশি জাহাজ চলাচলে সুবিধার জন্য ৬৯টি নেভিগেশন বয়া স্থাপন করা হয়েছে। এর ফলে বন্দর জেটি, মুরিং বয়া ও অ্যাংকোরেজে একই সঙ্গে ৪৭টি জাহাজ নোঙর করতে পারছে।
আমদানি-রপ্তানিকারকদের জন্য ট্রানজিট শেড, ওয়্যার হাউস, কনটেইনার ইয়ার্ড, হিমায়িত খাদ্য সংরক্ষণের জন্য ১৬১টি রিফার প্লাগপয়েন্ট, কার পার্কিং ইয়ার্ড, ১৩৬টি আধুনিক হ্যান্ডলিং যন্ত্রপাতি, টাগবোটসহ ৩২টি সহায়ক জলযানের সুবিধা বিদ্যমান রয়েছে। মোংলা বন্দরের আরও সক্ষমতা বাড়াতে বর্তমানে ৪টি প্রকল্প চলমান রয়েছে। পশুর চ্যানেলের ইনার বারে ড্রেজিং কাজ শেষ হলে মোংলা বন্দরে জেটি পর্যন্ত সরাসরি ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ হ্যান্ডলিং সুবিধা সৃষ্টি হবে। মোংলা বন্দরের আধুনিক বর্জ্য ও নিঃসৃত তেল অপসারণ ও তেল দূষণ থেকে বন্দর চ্যানেল এবং সুন্দরবন রক্ষা পাবে। মোংলা বন্দরের জন্য সহায়ক জলযান সংগ্রহ, নিরাপদ চ্যানেল বিনির্মাণ প্রকল্পটির কাজ শেষ হলে সমুদ্রগামী জাহাজ সুষ্ঠুভাবে হ্যান্ডলিং এবং দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় জরুরি উদ্ধারকাজ পরিচালনা করা সম্ভব হবে। আপগ্রেডেশন অব মোংলা পোর্ট প্রকল্পের কাজ শেষ হলে বার্ষিক ১.৫০ কোটি টন কার্গো, ৪.০০ লাখ টিইইউজ কনটেইনার হ্যান্ডলিং করা সম্ভব হবে। মোংলা বন্দরে দুটি অসম্পূর্ণ জেটি নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে বার্ষিক আরও ২ লাখ টিইইউজ কনটেইনার হ্যান্ডলিং সক্ষমতা বাড়বে। দিন দিন মোংলা বন্দরের উন্নয়ন ও ব্যবহার বৃদ্ধির গৃহীত পদক্ষেপের ফলে ২০০৮-০৯ অর্থবছর থেকে মোংলা বন্দরের কার্যক্ষমতা ক্রমবর্ধমান হারে বেড়েছে। ফলে ২০২২-২৩ অর্থবছরের তুলনায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজ আসার ক্ষেত্রে ২ দশমিক ৩০ শতাংশ, কার্গো ৯ দশমিক ৭২ শতাংশ, কনটেইনার ১৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ ও গাড়ির ক্ষেত্রে ১৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে।বর্তমান অর্থবছরের প্রথম চার মাসে ২৯ লাখ মে. টন পণ্য আমদানি-রপ্তানি হয়েছে। আধুনিক যন্ত্রপাতি সংগ্রহের ফলে প্রথমবারের মতো প্রতি ঘণ্টায় ২৪টিরও বেশি কনটেইনার হ্যান্ডলিং করা সম্ভব হচ্ছে ও জেটির সামনে নিয়মিত ড্রেজিংয়ের ফলে নাব্য বিরাজমান থাকায় ৫টি জেটিতে একই সঙ্গে ৫টি জাহাজ হ্যান্ডলিং করা সম্ভব হচ্ছে।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল শাহীন রহমান জানান, প্রতিষ্ঠার ৭৪ বছরের মধ্যে এ বন্দরটি সরাসরি নৌ, সড়ক ও রেল যোগাযোগের মধ্য দিয়ে এখন ত্রিমাত্রিক আন্তর্জাতিক সমুদ্রবন্দরে রূপ নিয়েছে। দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের দ্বিতীয় লাইন আন্তর্জাতিক সমুদ্রবন্দর নতুন নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করে এগিয়ে চলেছে। এ বন্দর চ্যানেলে বিদেশি জাহাজ চলাচলে সুবিধার জন্য ৬৯টি নেভিগেশন বয়া স্থাপন করায় বন্দর জেটি, মুরিং বয়া এবং অ্যাংকোরেজে একই সঙ্গে ৪৭টি জাহাজ নোঙর করতে পারছে। সপ্তাহের ৭ দিনই ২৪ ঘণ্টা ওয়ানস্টপ সার্ভিসসহ আমদানি-রপ্তানিকারকদের জন্য ট্রানজিট শেড, ওয়্যার হাউস, কনটেইনার ইয়ার্ড, হিমায়িত খাদ্য সংরক্ষণের জন্য ১৬১টি রিফার প্লাগপয়েন্ট, কার পার্কিং ইয়ার্ড, ১৩৬টি আধুনিক হ্যান্ডলিং যন্ত্রপাতি, টাগবোটসহ ৩২টি সহায়ক জলযানের সুবিধা বিদ্যমান রয়েছে। মোংলা বন্দরে বর্তমানে ৪টি প্রকল্প কাজ শেষ হলে বন্দরের সক্ষমতা বহুগুণ বাড়বে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, নেপাল আর ভুটানের ট্রানজিট পণ্য মোংলা বন্দরের মাধ্যমে রপ্তানির সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে। মোংলা বন্দর ব্যবহার করে এখন স্থল, নৌ ও রেলপথের মাধ্যমে রাজশাহী, রংপুর ও বরিশাল বিভাগের পণ্য পরিবহন দ্রুত ও সহজ হচ্ছে।
এইচএ