বিএনপি চেয়ারপারসন এর উপদেষ্টা ও সাবেক এমপি মনিরুল হক চৌধুরী বলেছেন, ১৯৮৬ সালে কুমিল্লায় ১২টি আসন ছিল। আমাকে পরাজিত করার জন্য তারা একটা আসন কমিয়ে ফেলেছে। আমাদের এলাকা (বৃহত্তর সদর দক্ষিণ) কে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। আমাকে দিয়েছে কুমিল্লা শহরের সাথে, দক্ষিণ কে দিয়েছে বরুড়ার সাথে, আর লাকসাম কে দিয়েছেন নাঙ্গলকোটের সাথে। সদর দক্ষিণ নির্বাচনী এলাকা বাতিল করা হয়েছে শুধুমাত্র বিএনপিকে পরাজিত করার জন্য। এটা অন্যায় সিদ্ধান্ত।
রবিবার (২২ ডিসেম্বর) দুপুরে কুমিল্লার লালমাই উপজেলার যুক্তিখোলা বাজার থেকে জেলা নির্বাচন অফিস পর্যন্ত লং মার্চ শেষে বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় বিএনপি'র এই নেতা আরো বলেন, ২০০৮ সালে সাবেক নির্বাচন কমিশনার কুমিল্লা-৯ আসনকে বিএনপি নির্বাচনী এলাকায় হওয়া অন্যায় ভাবে পৃথক করেছে। আমরা ঐ আমলের সকল নির্বাচন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করবো।
তিনি আরো বলেন, বিগত ২০১৪ সালের কুমিল্লা-৯ নির্বাচনী এলাকা নিয়ে হাইকোর্ট একটি রায় দেন। কিন্তু ঐ আসনের সাবেক মন্ত্রী লোটাস কামাল ক্ষমতার প্রভাব বিস্তার করে রায়টি স্থগিত করেন। এতে করে কুমিল্লা দক্ষিণ অঞ্চলকে পৃথক করেন কমিশনার। আমরা নতুন নির্বাচন সংস্কার কমিটিকে বিষয়টি জানিয়েছি। আশা করি এই সমস্যাটি সমাধান হবে। অন্যথায় আমরা আরো বড় পরিসরে আন্দোলনে নামবো।
পদুয়ার বাজারের অপরিকল্পিত ওভারপাসের প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, "পদুয়ার বাজার বিশ্বরোডে অপরিকল্পিত ওভারপাসের কারণে শত শত মানুষকে মৃত্যু কুপে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। এটি জনজীবনের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই অবস্থার দ্রুত সমাধান প্রয়োজন। অপরিকল্পিত ওভার পাসের কারণে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রত্যেকটা মৃত্যুর জন্য জবাব দিতে হবে।
ইপিজেড এলাকায় রাসায়নিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সংকট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "ইপিজেড শিল্প এলাকা উন্নয়ন হলেও, পরিবেশ রক্ষায় কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভা গঠন হওয়ার বহু বছর পার হয়ে গেলেও এর পয়ঃ নিষ্কাশন কিভাবে হবে তা এখনো কর্তৃপক্ষ ঠিক করতে পারেনি। কুমিল্লা শহরের ময়লা সব দক্ষিণে গিয়ে পড়ে। এর সাথে যুক্ত হয়েছে ইপিজেড নামক সংগঠন। ইপিজেড এর বিষাক্ত বর্জ্য নোয়াখালী পর্যন্ত ছড়িয়ে গিয়েছে। বর্জ্য দূষণের কারণে আশপাশের কৃষিজমি নষ্ট হচ্ছে এবং মানুষ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছে। দ্রুত আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে, নাহলে পরিবেশ বিপর্যয় আরও বাড়বে।"
এ সময় মনিরুল হক চৌধুরী আরও ঘোষণা দেন, "১১ দফা দাবি বাস্তবায়ন না হলে আমাদের আন্দোলন চলবে। আগামী ২১ জানুয়ারি কুমিল্লা ইপিজেড এলাকায় অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে। এই কর্মসূচির মাধ্যমে জনগণের দাবি আদায়ে আমরা আরও সোচ্চার হবো।"
এছাড়াও, আগামী নির্বাচন প্রসঙ্গ টেনে এনে এই নেতা আরো বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে অতি দ্রুত নির্বাচন দিতে হবে। এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না। এটা আমাদের অর্জন। বিএনপি ক্ষমতায় আসার জন্য নির্বাচন দিতে বলে না। দেশের সংকট সমস্যা গুলো কাটাতে চায় বিএনপি।
এর আগে, কুমিল্লা-০৯ আসন পুনর্বহাল, পদুয়ার বাজারের যানজট নিরসন, ইপিজেডের রাসায়নিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অব্যবস্থাপনা প্রতিকারে এবং ‘কুমিল্লা বাঁচাও মঞ্চের’ ১১ দফা দাবির বাস্তবায়নের দাবিতে লং মার্চ অনুষ্ঠিত হয়েছে। লং মার্চটি কুমিল্লার লালমাই উপজেলার যুক্তিখোলা বাজার থেকে শুরু হয়ে জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে গিয়ে শেষ হয়। পরে জেলা প্রশাসক ও জেলা নির্বাচন কমিশনারের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। স্মারকলিপিতে কুমিল্লা-০৯ আসন পুনর্বহালসহ ১১ দফা দাবি বাস্তবায়নের আহ্বান জানানো হয়।
এসময়, লং মার্চে বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য ড. শাহ মোঃ সেলিম, কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা বিএনপির আহবায়ক এডভোকেট আকতার হোসাইন, সদর দক্ষিণ উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ইসমাইল হোসেন মজুমদার, সদস্য সচিব ওমর ফারুক চৌধুরী, আমানউল্লাহ চেয়ারম্যান, লালমাই উপজেলা বি এনপির আহবায়ক মাসুদ করিম, সেক্রেটারি ইউসুফ আলী মীর পিন্টু, লালমাই ও সদর দক্ষিণ উপজেলার সকল ইউনিয়ন বিএনপি সহ সকল অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং কুমিল্লার দক্ষিণের বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নেতা-কর্মী ও এলাকার সর্বস্তরের জনগণ অংশ নেন।
এইচএ