টঙ্গী ইজতেমার ময়দানে গভীর রাতে বর্বরোচিত হামলা ও হত্যার প্রতিবাদ এবং হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও শাস্তিসহ সাদপন্থীদের নিষিদ্ধের দাবিতে বরিশালে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রবিবার (২২ ডিসেম্বর) বেলা সাড় ১১টায় নগরীর সদররোডস্থ অশ্বিনী কুমার হলের সামনে বরিশালের সর্বস্তরের ওলামায়ে কেরাম এবং তৌহিদী জনতার ব্যানারে এই কর্মসূচি অনুুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, তাবলীগ জামাত বিশ্বব্যাপী দ্বিনের বাণী প্রচারে নিবেদিত প্রাণ এক বরকতময় জামাত। বিশ্ববিখ্যাত দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসার সূর্যসন্তান হজরত মাও: ইলিয়াস রহ. এ মেহনত শুরু করেন।
এরপর ধারাবাহিকভাবে উপ-মহাদেশের শীর্ষস্থানীয় উলামায়ে কেরামের তত্ত্বাবধানে এ জামাতের কার্যক্রম বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে আলমী শুরা (বিশ্ব পরামর্শ কমিটি) আলেমদের মাধ্যমে সারা বিশ্বে এবং বাংলাদেশে এ মেহনত সূচারুরূপে পরিচালিত হচ্ছে।
বক্তারা আরও বলেন, আসন্ন ইজতেমার প্রস্তুতির জন্য সরকারের অনুমোদনক্রমে সহস্রাধিক তাবলিগের সাথি ও উলামায়ে কেরাম ইজতেমার মাঠ প্রস্তুতের কাজ করছিলেন।
কিন্তু গত ১৭ ডিসেম্বর দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার সময়, ইজতেমা মাঠে অবস্থানরত তাবলিগের সাধারণ সাথি ও আলেম উলামাদের উপর রাতের অন্ধকারে ঘুমন্ত অবস্থায় অতর্কিত হামলা করে সন্ত্রাসী সাদপন্থীরা। তারা হিংস্র হায়েনার মত ঝাপিয়ে পড়ে সারাদিনের পরিশ্রমে ক্লান্ত পরিশ্রান্ত সাথীদের উপর। ৪ জন সাথীকে নির্মমভাবে হত্যা করে ও অসংখ্য সাথীকে মারাত্মকভাবে আহত করে।
ইজতেমার ময়দান সংলগ্ন মাদ্রাসায় ভাঙচুর করে, ইজতেমার বিভিন্ন সামগ্রী ভাঙচুর ও লুটপাট করে। যা দেশের সকল গণমাধ্যমে প্রচারিত হচ্ছে।
সরকারি সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে তারা এহেন নির্মম হত্যাকাণ্ড ঘটায়। তাদের এসব হিংস কর্মকাণ্ড এখনো থেমে নেই। তারা বিভিন্ন এলাকায় ও মসজিদে সাধারণ সাথীদেরকে নানা ধরনের হুমকি ধমকি দিয়ে যাচ্ছে।
এমতাবস্থায়, বরিশালের সর্বস্তরের উলামায়ে কেরাম ও তৌহিদী জনতার পক্ষ থেকে চার দফা দাবি পেশ করা হয়। দাবিগুলো হল- টঙ্গি ইজতেমার মাঠে ঘুমন্ত সাথীদের উপর বর্বর আক্রমণকারী খুনিদেরকে অবিলম্বে গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনা।
বরিশাল জেলা থেকে যেসব উগ্রবাদী সাদপন্থী প্রকাশ্যে দেশীয় অস্ত্র ও লাঠি-সোঁটা নিয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে টঙ্গীতে গিয়েছে এবং পরিকল্পিতভাবে হত্যাকাণ্ডে অংশগ্রহণ করেছে, তাদেরকে চিহ্নিত করে অবিলম্বে গ্রেফতার করে বিচার করা।
মসজিদ সমূহে সাদপন্থীদের সকল প্রকার কার্যক্রম স্থায়ীভাবে বন্ধ করা। বরিশালে সাদপন্থীরা হাতেম আলী কলেজ সংলগ্ন চৌমাথা মারকায মসজিদকে তাদের ষড়যন্ত্রের কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করছে।
তাই চৌমাথা মারকায মসজিদে সাদপন্থীদের সকল প্রকার কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে হবে এবং মসজিদটিকে সাদপন্থীদের দখল মমুুক্ত করা। এসময় বক্তারা আরও বলেন, তাবলিগের এই মহান কাজের সূচনা উলামায়ে কেরামের দ্বারাই এবং এযাবৎ তাদের দ্বারাই পরিচালিত হয়ে আসছে বলে ভবিষ্যতেও ওলামাদের তত্ত্বাবধানের বাইরে এই মহান কাজ সুষ্ঠভাবে পরিচালিত হবে না।
এজন্যই আপনাদের কাছে দাবি ভবিষ্যতে যেন ইজতেমা ময়দানে মুসুুল্লীদের হত্যাকারী সাদপন্থীরা তাবলিগের নামে কোনো মসজিদে কার্যক্রম না চালাতে পারে সেদিকে সজাগ থাকতে হবে। পাশাপাশি ইজতেমা ময়দানে মুসুুল্লীদের হত্যার ঘটনায় বিচার দাবি করেন।
সমাবেশে এসময় উপস্থিত ছিলেন, জামিয়া ইসলামিয়া মাহমুদিয়া মাদ্রাসার মোহতামীম হজরত মাওলানা ওবাইদুর রহমান মাহবুবসহ বিভিন্ন মাদ্রাসা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও মসজিদের ইমামসহ ওলামায়ে কেরামগন।
শুরুতে নগরীর বিভিন্ন মাদ্রাসা থেকে মুসল্লিরা সাদপন্থীদের জঙ্গি এবং সন্ত্রাসী উল্লেখ করে স্লোগান দিয়ে কর্মসূচিতে যোগ দেয়। পরে সমাবেশ শেষে একটি প্রতিবাদ মিছিল বের করা হয়, যা নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিন করে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন ওলামায়ে কেরামগণ।
এআই