এইমাত্র
  • ফরিদপুরে মাইক্রোবাসে ট্রেনের ধাক্কায় নিহত ৫
  • নাটোর হেরোইনসহ গ্রেফতার ১
  • ঝালকাঠিতে যুবককে কুপিয়ে হত্যা
  • পুরানা পল্টনে ভবনে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে
  • জুলাই বিপ্লবের ইতিহাস সংরক্ষণে কাজ করছে সরকার: ফারুকী
  • সরকার গঠনের পর অভিযুক্ত কাউকে দেশত্যাগ করতে দেয়া হয়নি: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • হিমালয়কন্যা পঞ্চগড়ে ফের তাপমাত্রা নামল ৯ ডিগ্রির ঘরে
  • চট্টগ্রামে ফিরলেন ভারত থেকে মুক্তি পাওয়া ৯০ জেলে ও নাবিক
  • ভূমিকম্পে তিব্বতে ক্ষতিগ্রস্ত এক হাজার বাড়ি, নিহত বেড়ে ৫৩
  • ‘ঘুম থেকে উঠে দেখি রাতারাতি মেজর ডালিম হয়ে গেছি’
  • আজ মঙ্গলবার, ২৪ পৌষ, ১৪৩১ | ৭ জানুয়ারি, ২০২৫
    দেশজুড়ে

    ক্ষতি জেনেও তামাকের বিষাক্ত মায়ায় কৃষক

    মো. জাহেদুল ইসলাম, সাতকানিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি প্রকাশ: ৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১১:৩৩ পিএম
    মো. জাহেদুল ইসলাম, সাতকানিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি প্রকাশ: ৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১১:৩৩ পিএম

    ক্ষতি জেনেও তামাকের বিষাক্ত মায়ায় কৃষক

    মো. জাহেদুল ইসলাম, সাতকানিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি প্রকাশ: ৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১১:৩৩ পিএম

    চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার বাজালিয়ার মাহালিয়া বিলে কৃষক মো. দেলোয়ার গেল বছরের তুলনায় চলতি বছর আরও ৩ কানি বেশি জমিতে তামাক চাষ করছেন। চকরিয়া উপজেলার এই কৃষক ৪ বছর আগে তামাক কোম্পানির প্রলোভনে সাতকানিয়ায় এসে ৫ কানি জমিতে তামাক চাষ শুরু করেছিলেন। এখন তিনি ৮ কানি জমিতে তামাক চাষ করছেন। তার মতে, তামাক চাষ করে লাভবান হয়েছেন তিনি, সংসারেও স্বচ্ছলতা এসেছে।

    তামাক মাটি, পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর জেনেও কেন তামাক চাষ করছেন জানতে চাইলে তিনি জানান, তামাক কোম্পানি তাদেরকে বিনামূল্যে বীজ, সার, কীটনাশক দিয়ে থাকে। সেচের পানি সরবরাহের জন্য আর্থিক সহায়তা দেয়। কোম্পানির লোকজন নিয়মিত তামাকখেতে এসে খোঁজখবর রাখেন ও পরামর্শ দেন। নির্ধারিত দামে তামাকপাতা কিনে টাকা পরিশোধ করে।

    দেলোয়ারের মতো অনেক কৃষকই এবার শস্যের জমিতে চাষ করেছেন তামাক। কৃষকরা বলছেন, অন্যান্য ফসল চাষে বীজ, সার, সেচসহ উৎপাদন খরচ বাড়ছে। অন্যদিকে বিভিন্ন তামাকজাত কোম্পানি তামাক চাষে নানা রকম সহায়তা করছে। যে কারণে ক্ষতি জেনেও তামাক চাষ করছেন তারা।

    কয়েক বছর আগেও যেসব আবাদি জমিতে ধান, গম, ভুট্টা, সরিষা ও আলুসহ বিভিন্ন ফসল চাষ করা হয়েছিল, সেসব জমিতে এখন তামাক চাষ হচ্ছে। তামাকজাত কোম্পানির প্রলোভন ও অধিক মুনাফার আশায় তামাক চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন কৃষকেরা।

    রোববার (৫ জানুয়ারি) সরেজমিনে সাতকানিয়ার শস্যভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত বাজালিয়ার মাহালিয়া বিল ঘুরে এই চিত্র পাওয়া গেছে।

    বছরের এই সময়ে জমিগুলোতে বিভিন্ন ফসল উৎপাদন করা হলেও এবার চিত্র কিছুটা ভিন্ন। ফসলের অধিক দাম আর তামাকজাত কোম্পানিগুলোর বিভিন্ন সহায়তার কারণে বেড়েই চলেছে তামাকের আগ্রাসন। তবে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিসম্পন্ন তামাক চাষ বন্ধে কৃষি বিভাগ পদক্ষেপ নিলেও মাঠ পর্যায়ে তেমন সাড়া মিলছে না।

    একাধিক চাষির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তামাক চাষে তাদের উৎসাহের নেপথ্যে রয়েছে বিভিন্ন তামাকজাত কোম্পানি। চাষ পূর্ববতী ও পরবর্তী বিশেষ সহায়তা দিয়ে থাকে এসব কোম্পানি। তামাক চাষে বীজ ও সার ক্রয়ের জন্য নগদ টাকাসহ নানান উপকরণ সরবরাহ ও নিয়মিত তদারকি করে কোম্পানির প্রতিনিধিরা। এসব সুযোগ—সুবিধার পাশাপাশি দাম ভালো পাওয়ায় স্বাস্থ্যঝুঁকি জেনেও তামাক চাষে ঝুঁকছেন চাষিরা। একই সঙ্গে বিকল্প ফসল উৎপাদনে খরচ বেশি ও ন্যায্যমূল্যের নিশ্চয়তা না থাকায় তামাক চাষে আগ্রহ বাড়ছে অনেক কৃষকের।

    মাহালিয়া বিলে গিয়ে দেখা যায়, বিষাক্ত তামাকে বিস্তৃত ফসলি জমি। খেত পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। আর সময় মতো উৎপাদিত তামাক বুঝে নিতে মাঠে তদারকি করছেন চুক্তিবদ্ধ তামাক কোম্পানির প্রতিনিধিরা।

    কৃষক কফিল বলেন, প্রতিবছর বিভিন্ন ফসল চাষ করতাম। এই চাষাবাদ দিয়ে সংসারের চাহিদা মেটানো যেত। কিন্তু দিন দিন সার, বীজ, সেচসহ অন্যান্য খরচ বেড়ে যাওয়ায় এখন তামাক চাষ করছি। তাছাড়া অন্যান্য ফসলে পরিশ্রম বেশি লাভ কম। তামাক চাষে সেই কষ্টটা হয় না।

    তিনি বলেন, ‘আমি মাহালিয়া এলাকায় এবার ৭ কানি জমিতে তামাক চাষ করেছি। তামাক চাষে প্রতি কানি জমিতে শোধন প্রক্রিয়াসহ ১ লক্ষ টাকা করে খরচ হয়। এক কানি জমির তামাক বিক্রি করে দেড় লক্ষ থেকে ১ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত পাওয়া যাবে। তামাক চাষ করে অল্প সময়ের মধ্যে যে পরিমাণ লাভ পাওয়া যায় তা অন্য ফসলে সম্ভব নয়। সবচেয়ে বড় কথা হলো তামাক চাষে কোম্পানির পক্ষ থেকে নগদ টাকা, সারসহ নানাভাবে সহায়তা করে থাকে। লাভ কম হলেও লোকসানের সম্ভাবনা নাই।’

    মাহালিয়া বিলের কৃষক বেলাল বলেন, কোম্পানির লোকজন জমিতে দাঁড়িয়ে থেকে তামাক চাষাবাদের করণীয় সম্পর্কে পরামর্শ দিয়ে থাকে। কখনো কখনো অগ্রিম টাকা দিয়ে তামাকের জমি তারা কিনে থাকেন। স্বাস্থ্যঝুঁকি ও কৃষিজমির উর্বরতা নষ্ট হলেও অধিক লাভের আশায় কৃষকরা তামাক চাষ করছেন বলে জানান তিনি।

    জানতে চাইলে সাতকানিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান বলেন, সচেতনতার অভাবে মানুষ তামাক চাষ করছেন। লাভ বেশি হলেও তামাক চাষে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে এবং পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে। সরকার কৃষি খাতকে সমৃদ্ধ করতে বিভিন্ন প্রকল্পে কাজ করছে। তবে তামাক নিরুৎসাহিত ফসল।

    তিনি বলেন, উপজেলার কয়েকটি এলাকায় কয়েক বছর ধরে তামাক চাষ করা হচ্ছে। তামাক চাষ বছরের পর বছর বাড়ছে। তামাক কোম্পানিগুলো কৃষকদের মাঝে নগদ টাকা ও সার প্রদান করছে। তামাক চাষীদের সন্তানদের কোম্পানিতে চাকরি দেয়ার প্রলোভন দেখাচ্ছে। নানাভাবে লোভনীয় প্রস্তাব দিয়ে তামাক কোম্পানিগুলো কৃষকদেরকে তামাক চাষে আগ্রহী করে তুলছে।

    এমআর

    সম্পর্কিত:

    সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি

    Loading…