কলকাতার আরজি কর হাসপাতালের প্রশিক্ষণার্থী চিকিৎসক ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় অভিযুক্ত ৩৩ বছর বয়সী সিভিক পুলিশ স্বেচ্ছাসেবক সঞ্জয় রায়কে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। শনিবার (১৮ জানুয়ারি) কলকাতার স্থানীয় একটি আদালত চাঞ্চল্যকর মামলার শুনানি শেষে এই রায় ঘোষণা করে। সোমবার তার সাজা ঘোষণা করা হবে। এর মধ্যে দিয়ে এই নৃশংস ঘটনার ইতি টানবে, যা গোটা ভারতকে নাড়া দিয়েছিল।
১৬০ পৃষ্ঠার রায়ে সিয়ালদহের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা আদালত ধর্ষণ, হত্যাকাণ্ড এবং মৃত্যু ঘটানোর সঙ্গে সম্পর্কিত ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ধারা অনুযায়ী রায় ঘোষণা করে।
রায় ঘোষণার পরে, ভুক্তভোগীর বাবা আদালতে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন এবং বিচারককে বলেন, 'আপনি আমার বিশ্বাসের প্রতি যথাযথ গুরুত্ব দিয়েছেন।'
শনিবার বিকেলে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে আদালতে আনা হয় সঞ্জয় রায়কে। সেখানে তিনি বারবার দাবি করেন, তাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে, যদিও তার আইনজীবীরা তাকে শান্ত করার চেষ্টা করেন। আদালত থেকে বের হওয়ার সময় তিনি দাবি করেন, একজন 'আইপিএস' কর্মকর্তা সবকিছু জানেন।
আদালত জানিয়েছে, সোমবার শুনানি চলাকালে তাকে তার দণ্ডের বিষয়ে শোনার জন্য সুযোগ দেয়া হবে। দোষীর এমন নির্দোষতার দাবি তার প্রাথমিক স্বীকারোক্তির বিপরীত। কলকাতা পুলিশের বিরুদ্ধে প্রমাণ নষ্ট করার অভিযোগ ওঠার পরে তদন্তভার গ্রহণ করা সিবিআইও তাকে দোষী সাব্যস্ত করে।
এর আগে, আরজি কর মামলায় মোট ৫০ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয় নিম্ন আদালতে। সেই তালিকায় রয়েছেন নিহত চিকিৎসকের বাবা, সিবিআইয়ের তদন্ত কর্মকর্তা, কলকাতা পুলিশের তদন্ত কর্মকর্তা, ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ এবং নিহতের কয়েকজন সহপাঠী।
গত ৯ আগস্ট আরজি কর হাসপাতালে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা ঘটে। ওই দিন ভোরে কলকাতা পুলিশ সঞ্জয় রায়কে কলকাতার সল্টলেকের পুলিশের ফোর্থ ব্যাটেলিয়নের ব্যারাক থেকে গ্রেপ্তার করে। সিবিআই এই হত্যা মামলার তদন্তে নেমে ৫৭ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছে। বলেছে, বহু প্রমাণ লোপাট করা হয়েছে। সিবিআই হাসপাতালের দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেপ্তার করেছে আরজি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ ও সংশ্লিষ্ট টালা থানার ওসি অভিজিৎ মণ্ডলকেও। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তথ্যপ্রমাণ লোপাটের। এই ধর্ষণ ও খুনের কথা প্রকাশ্যে এলে রাজ্যজুড়ে শুরু হয় প্রতিবাদের ঝড়। সেই প্রতিবাদের ঝড় রাজ্য ছাপিয়ে দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল।
এবি