ভুলবশত লেবানন ও ইয়েমেনের ইরান সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ ও হুতির সম্পদ জব্দের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার ঘটনার পর সেই সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হটেছে ইরাক। বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) দেশটির কর্মকর্তারা জানান, ইরান-সমর্থিত এই গোষ্ঠী দুটিকে তালিকা থেকে বাদ দেয়া হবে।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত মাসে ইরাকের বিচার মন্ত্রণালয়ের সরকারি গেজেটে এমন সব গোষ্ঠী ও সত্তার একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়েছিল, যাদের তহবিল ব্লক বা জব্দ করা হবে। সেই তালিকায় হিজবুল্লাহ ও হুতির নাম উল্লেখ করা হয়। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে ওয়াশিংটন স্বাগত জানাতো এবং একই সঙ্গে তেহরানের ওপর চাপ আরও বাড়াত।
রয়টার্সকে দুটি ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত ডেপুটি গভর্নরের পাঠানো এক চিঠিতে সন্ত্রাসীদের তহবিল জব্দ সংক্রান্ত কমিটিকে হিজবুল্লাহ ও হুতির নাম সংবলিত ধারাটি তালিকা থেকে মুছে ফেলার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
মালয়েশিয়ার অনুরোধের জবাবে ইরাকের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শিয়া আল-সুদানি বলেন, ইরাক কেবল ইসলামিক স্টেট ও আল-কায়েদার সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তি ও সংস্থার সম্পদ জব্দের অনুমোদন দিয়েছে।
তিনি জানান, এ ভুলের জন্য দায়িত্বশীলদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে জরুরি তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সুদানি আরও বলেন, ‘লেবানন বা ফিলিস্তিনে আমাদের জনগণের উপর আগ্রাসন সম্পর্কে ইরাকের রাজনৈতিক ও মানবিক অবস্থান "নীতিগত এবং অতিরঞ্জিত নয়।’
এই ঘটনায় কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ইরাকের কাতায়েব হিজবুল্লাহ-সংশ্লিষ্ট একটি জোটের প্রতিনিধিত্বকারী আইনপ্রণেতা হুসেইন মুয়ানেস। তিনি সরকারের আচরণকে “দায়িত্বজ্ঞানহীন” বলে আখ্যা দেন এবং অভিযোগ করেন, সরকার এখন একটি অধস্তন কর্তৃপক্ষে পরিণত হয়েছে, যার জনগণের প্রতিনিধিত্ব করার বা ইরাকের সার্বভৌমত্ব রক্ষার মতো মর্যাদা নেই।
ইরাকের সংশ্লিষ্ট কমিটি জানিয়েছে, ১৭ নভেম্বর প্রকাশিত তালিকাটি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের রেজোলিউশন ১৩৭৩ অনুসারে কেবল ইসলামিক স্টেট ও আল-কায়েদার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তি ও সত্তাগুলোকেই অন্তর্ভুক্ত করার উদ্দেশ্যে করা হয়েছিল।
তবে চূড়ান্ত সংশোধন শেষ হওয়ার আগেই তালিকাটি প্রকাশিত হওয়ায় বেশ কয়েকটি সম্পর্কহীন গোষ্ঠী এতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কমিটি জানিয়েছে, সংশোধিত তালিকাটি শিগগিরই সরকারি গেজেটে প্রকাশ করা হবে। এ ঘটনায় মন্তব্যের অনুরোধের জবাব দেয়নি হিজবুল্লাহ ও হুতি।
রয়টার্স বলছে, যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে ইরাক ও মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশে ইরানের প্রভাব কমানোর চেষ্টা করছে। এসব দেশে তেহরানের তথাকথিত ‘প্রতিরোধ অক্ষ’-এর আওতায় থাকা বিভিন্ন মিত্র গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে, যেগুলো ২০২৩ সালে গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলের হামলায় বড় ধাক্কা খেয়েছে।
আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও ইরান তার প্রতিবেশী ও মিত্র ইরাককে নিজের অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরান উভয়েরই অংশীদার বাগদাদ বর্তমানে এক জটিল কূটনৈতিক ভারসাম্যের মধ্যে রয়েছে। কারণ ইরানকে চাপে রাখতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতির ফলে ইরাক সরাসরি চাপের মুখে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ইরাকের ভেতরে শক্তিশালী শিয়া মিলিশিয়া ও তাদের সমর্থিত রাজনৈতিক দলগুলোর মাধ্যমে ব্যাপক সামরিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে রেখেছে ইরান। তবে গত এক বছরে তেহরানের মিলিশিয়া প্রক্সিদের ওপর ইসরায়েলের প্রচণ্ড আঘাতে ইরান অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের চাপের প্রতি তাদের সংবেদনশীলতাও বাড়িয়ে দিয়েছে।
এবি