কানাডার ২০২২ সালের নির্বাচনে কনজারভেটিভ পার্টির নেতা পিয়েরে পোইলিভরেয় পক্ষে ভারতের হস্তক্ষেপের অভিযোগ করা হয়েছে।
গ্লোব অ্যান্ড মেইল সংবাদপত্রের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ভারতীয় এজেন্টরা পোইলিভরের পক্ষে দক্ষিণ এশীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে তহবিল সংগ্রহ এবং সংগঠনে জড়িত ছিল।
তবে প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, পোইলিভরে বা তার দল এ বিষয়ে অবগত ছিলেন এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। খবর: বিবিসি
২৮শে এপ্রিল অনুষ্ঠেয় কানাডার সাধারণ নির্বাচনের প্রচারের মধ্যে এই অভিযোগ উঠেছে, যা দেশটির রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।
কানাডিয়ান গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা ভারতের কথিত হস্তক্ষেপের বিষয়ে পোইলিভরের সঙ্গে আলোচনা করতে পারেননি, কারণ তিনি প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ছাড়পত্র পাননি। পোইলিভরে কানাডার একমাত্র ফেডারেল পার্টির নেতা, যিনি প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন এবং নিরাপত্তা ছাড়পত্র নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। খবর: বিবিসির
মঙ্গলবার তিনি তার এই সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যায় বলেন, এই প্রক্রিয়াটি রাজনীতিকীকরণ করা হয়েছে এবং এটি তার স্বাধীন মত প্রকাশের উপর সীমাবদ্ধতা আরোপ করবে।
তিনি বলেন, আমি এমন কোনো গোপনীয়তার শপথ গ্রহণ করব না, যা লিবারেল সরকার আমার ওপর চাপিয়ে দিতে চায়। তারা চায় না আমি এই বিষয়গুলো নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলি।
কানাডার রাজনীতিতে বিদেশী হস্তক্ষেপের অভিযোগ নতুন নয়। অতীতেও চীন এবং ভারতের বিরুদ্ধে দেশটির নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করার অভিযোগ আনা হয়েছে, যা ভারত সরকার বরাবরই অস্বীকার করে আসছে।
গ্লোব অ্যান্ড মেইল-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের হস্তক্ষেপের প্রচেষ্টা শুধুমাত্র কনজারভেটিভ পার্টির মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না; বরং এটি ছিল কানাডার সকল রাজনৈতিক দলের নেতাদের প্রভাবিত করার একটি বৃহত্তর কৌশলের অংশ।
লিবারেল নেতা মার্ক কার্নি অভিযোগের প্রেক্ষিতে কনজারভেটিভ নেতা পোইলিভরের সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, একজন বিরোধীদলীয় নেতা দিনের পর দিন নিরাপত্তা ছাড়পত্র নিতে অস্বীকৃতি জানানো সম্পূর্ণ দায়িত্বজ্ঞানহীন।
অন্যদিকে, পোইলিভরে তার অবস্থানে অনড় রয়েছেন এবং বলেছেন যে তিনি জনগণের স্বার্থে স্বাধীনভাবে কথা বলতেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
কানাডায় বিদেশী হস্তক্ষেপের অভিযোগ তদন্তে গত বছর একটি পাবলিক ইনকোয়ারি পরিচালিত হয়েছিল। চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, চীন এবং ভারত উভয়ই কানাডার পূর্ববর্তী দুটি নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেছিল। যদিও এই প্রচেষ্টাগুলি "বিপদজনক" ছিল, তবে সেগুলোর প্রভাব "ন্যূনতম" ছিল বলে উল্লেখ করা হয়।
তবে প্রতিবেদনটি সতর্ক করে জানিয়েছে, ভুল তথ্য এবং বৈদেশিক প্রভাব দেশের গণতন্ত্রের জন্য অস্তিত্বগত হুমকি তৈরি করতে পারে।
কানাডার নির্বাচনী অখণ্ডতা টাস্ক ফোর্স জানিয়েছে, চলমান নির্বাচনী প্রচারণায় চীন, রাশিয়া এবং ভারতের পক্ষ থেকে হস্তক্ষেপের আশঙ্কা রয়েছে। ফোর্সের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিদেশী এজেন্টরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, প্রক্সি এবং অনলাইন বিভ্রান্তিমূলক তথ্যের মাধ্যমে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করতে পারে।
সরকারের পক্ষ থেকে নাগরিকদের বিভ্রান্তিকর তথ্যের বিরুদ্ধে সচেতন থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে এবং এমন পরিস্থিতিতে সক্রিয় প্রতিক্রিয়া দেখানো হবে বলে জানানো হয়েছে।