জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় মৌচাষীরা ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহে। এবার সরিষার ভালো চাষ হওয়ায় মধু আহোরণও ভালো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মৌচাষিরা। ফসলের জমির পাশে পোষা মৌমাছির শত শত বাক্স নিয়ে হাজির হয়েছেন মৌয়ালরা। ওই সব বাক্স থেকে হাজার হাজার মৌমাছি উড়ে গিয়ে মধু সংগ্রহে ঘুরে বেড়াচ্ছে সরিষা ফুলের মাঠে।
জানা গেছে, চাষীরা সাধারণত পছন্দের একটি সরিষা ক্ষেতের পাশে খোলা জায়গায় চাক ভরা বাক্স ফেলে রাখেন। একেকটি বাক্সে মোম দিয়ে তৈরি ছয় থেকে সাতটি মৌচাকের ফ্রেম রাখা হয়। আর তার ভেতর রাখা হয় একটি রাণী মৌমাছি। রাণী মৌমাছির কারণে ওই বাক্সে মৌমাছিরা আসতে থাকে। মৌমাছিরা ফুল থেকে মধু এনে বাক্সের ভেতরের চাকে জমা করে। আর এই চাক থেকেই মধু সংগ্রহ করেন মৌমাছি চাষীরা।
প্রতিদিন সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত মৌ-চাষিরা এসব মৌচাক থেকে মধু সংগ্রহ করেন। মৌ চাষের মাধ্যমে চাষীরা একদিকে যেমন আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন, অন্যদিকে দূর হচ্ছে বেকারত্ব। এসব সরিষা ফুলের মধু খাঁটি ও সুস্বাদু হওয়ায় দেশের বিভিন্ন স্থানসহ বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে।
উপজেলার চর আমখাওয়া ইউনিয়নের সকাল বাজার এলাকায় ২০০টি মৌমাছির বাক্স বসিয়ে পোষা মৌমাছির মাধ্যমে মধু সংগ্রহ করছেন মৌয়ালরা। এছাড়াও পাররামরামপুর ইউনিয়নের বাঁশতলী, চর আমখাওয়া ইউনিয়নের সানান্দবাড়ী, ডাংধরা ইউনিয়নের পাথরের চর এলাকায় ভিন্ন ভিন্ন স্পটে আরও ৫০০ টি বাক্স বসিয়ে মৌমাছির মাধ্যমে মধু সংগ্রহ করছেন মৌয়ালরা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, সরিষা ফুলে মৌমাছি মধু আহরণের ফলে সরিষা ফুলে ফুলে পরাগায়ন ঘটে। উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য মতে, দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় এ বছর ৩ হাজার ৫২০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে।
এই বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং ভোজ্য তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় সয়াবিন তেলের বিকল্প হিসেবে সরিষা চাষ করতে এ অঞ্চলের কৃষকেরা বেশি আগ্রহী হয়েছে।
সরজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ সরিষা খেতের পাশে বাক্স বসিয়ে পোষা মৌমাছি দিয়ে সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করছেন মৌয়ালরা। আর এ দৃশ্য দেখতে ভীড় করছেন অনেক উৎসুক মানুষ। প্রতিদিন উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ এসে ছবি তুলছেন কেউ করছেন ভিডিও ধারণ।
মধু শ্রমিক মোঃ হাসিব বলেন, বাক্সে রানি মৌমাছি, পুরুষ মৌমাছি ও শ্রমিক মৌমাছি এই তিন ধরনের মৌমাছি আছে। এক সপ্তাহে প্রতিটি মৌমাছি বাক্সের প্রতি প্যানেলে দেড় কেজি থেকে দুই কেজি পর্যন্ত মধু আহরণ করতে পারে। আর প্রতি বাক্সে থাকে ৫টি প্যানেল। সে অনুযায়ী একটি বক্সে ১০ কেজি করে মধু আহরণ করা যায় বলে জানান তিনি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আলমগীর আজাদ বলেন, কৃষি গবেষণা ইনষ্টিটিউটের গবেষণায় জানা গেছে সরিষা ফুলে মৌমাছি মধু আহরণের ফলে স্বাভাবিক ফলনের চেয়ে ২০ থেকে ২৫ ভাগ ফলন বেশি হয়। সরিষা ফুলে মৌমাছির মাধ্যমে মধু আহরণের ফলে সরিষা ফলনে বিপ্লব ঘটার সম্ভাবনা বাড়ে। এতে করে মৌয়ালী ও কৃষক দুজনই লাভবান হয়।
এইচএ