বিছানার একপাশে বাবা অন্য পাশে মা,চিকিৎসার অভাবে হাউমাউ করে কাতরাচ্ছেন দু'জনেই। কাকে রেখে কাকে সান্তনা দিবেন ভেবে পাচ্ছেন না। তাই বারবার কান্নায় ভেঙে পরছেন ৪০ বছর বয়সী নারী কুলসুম বেগম।
অসুস্থ বাবা-মা ও ছেলে সন্তানদের মুখে দুমুঠো খাবার দিতে প্রতিদিনই কষ্ট করতে হয় তাকে। কখনো মাটির ঝুড়ি মাথায় নিয়ে মাটি কাটেন, কখনো অন্যের বাসায় কাজ করেন।কাজ করতে না পারলে আবার কখনো কখনো না খেয়ে থাকতে হয় দুই থেকে তিনদিন। এক কোরবানি ঈদে মাংস খেলে আবার কোরবানি ঈদ না আসা পযন্ত মাংস খেতে পারেন না কুলসুম বেগমেরা। এমন কষ্টের কথা গুলো বলতেই ছলছল করে পানি গড়ায় কুলসুম বেগমের দু চোখে।
সোমবার (৬ জানুয়ারি) সকালে ভোলা সদর উপজেলার ধনিয়া ইউনিয়নের নবীপুর গ্রামের কুলসুম বেগমের বাড়িতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় পাঁচ সদস্যের পরিবারটির থাকার একমাত্র ঘরটিও জরাজীর্ণ অবস্থা। ঘরের বেড়া দিয়েছেন গায়ে দেওয়ার কাঁথা, ওড়না ও বস্তা দিয়ে। ঘরের মধ্যে হু হু করে ঢুকছে বাতাস। এতে শীতে আরো নাজেহাল অবস্থা এই অসহায় পরিবারটির।
কান্না জড়িত কণ্ঠে সময়ের কন্ঠস্বরকে কুলসুম বেগম জানান, ২০ বছর আগে ৪ সন্তান রেখে স্বামী ভুট্টু মিয়া কাজের উদ্দেশ্য ঢাকায় যান। সেখানে অন্য এক নারীকে বিয়ে করে আর ফিরে আসেননি কুলসুম বেগমের সংসারে। অসহায় হয়ে পরেন কুলসুম বেগম, ৪ সন্তান নিয়ে আশ্রয় নিতে চলে আসেন বাবার বাড়িতে।
কিছুটা সুখের আশা নিয়ে বাবার বাড়িতে আসলেও মেলেনি সুখের দেখা। বরং কষ্টই যেনো দীর্ঘহলো কুলমের জীবনে। হঠাৎ স্টোক করে প্যারালাইজড হয়ে যান বাবা হানিফ মিয়া। এরপর কিছুদিন পর মা রেনু বিবিও স্টোক করেন। শুরু হয় কুলসুম বেগমের ভয়াবহ এক জীবনযুদ্ধের লড়াই।
অসুস্থ বাবা - মা ও ৪ সন্তানের দু মুঠো খাবারের জন্য প্রচুর কষ্ট করেন কুলসুম। ৪ সন্তানের মধ্যে দুই ছেলে ও দুই মেয়ে। ভেবেছিলেন ছেলেরা বড় হয়ে মায়ের দঃখ কষ্ট দুর করবেন ধরবেন সংসারের হাল। কিন্তু না জীবন সংগ্রামে কষ্টের বোঝাটা আরো ভারী হয়েছে। দুর্ঘটনায় বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হয়ে মারা যান বড় ছেলে।
ছেলে হারানোর শোকে যখন মাতম কুলসুম তখন মা রানু বিবি আবারও স্টোক করেন। বিছানায় পরে থাকা অসুস্থ বাবা মায়ের সেবা করতে এখন আর কাজেও যেতে পারেন না। কাজ করতে গেলে অসুস্থ বাবা মায়ের দেখাশোনা করার কেউ নেই। তাই এখন আর কাজেও যাওয়া হয়না। দিন থেকে রাত, রাত থেকে দিন পযন্ত প্রতিটি সময় চিকিৎসার অভাবে বিছানায় মৃত্যুর প্রহর গুনছেন কুলসুম ও তার বাবা মা।
আশে পাশে থাকা প্রতিবেশীরাও দীর্ঘদিন ধরে তাদের সামর্থ্য অনুয়ায়ী বিভিন্ন সময়ে সাহায্য সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। কিন্তু তারা যে সাহায্য করেন তা অনেক সীমিত যা দিয়ে পরিবারের খাবার জোগান দিতেই হিমশিম খেতে হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভোলা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সজল চন্দ্র শীল জানান, বিষয়টির খোঁজ খবর নিয়ে আমরা তাকে সাহায্য করব।
ভোলা সদর উপজেলা (ভুমি) কর্মকর্তা ও ধনিয়া ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. আহসান হাফিজ সময়ের কন্ঠস্বরকে বলেন, এমন অসহায় কেউ থাকলে অবশ্যই তাকে আমরা সহযোগিতা করব। আমরা তাঁর খোঁজখবর নিচ্ছি।
কুলসুমের পরিবার ও ওই এলাকার মানুষের দাবী সমাজের বিত্তবান ও উদার মনের মানুষের সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দিয়ে তার বাবা মাকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিলে হয়তো আরো কিছু দিন পৃথিবীর আলো দেখতে পেতো তারা। অসহায় পরিবারের মোবাইল নম্বর -01329519264 নগদ/বিকাশ পারসোনাল।
এমআর