আবারও আলোচনায় দেশীয় লোকগানের জনপ্রিয় গায়িকা মমতাজ বেগম। দুই দশকের বেশি তাঁর পেশাদারি সংগীতজীবনে ৭০০টির বেশি একক অ্যালবাম প্রকাশ করে গিনেস বুক অব রেকর্ডসে নাম লেখানো এই শিল্পী গত পাঁচই আগস্টের পর থেকেই ছিলেন লোকচক্ষুর অন্তরালে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হেরে যাওয়া তিনবারের সংসদ সদস্য মমতাজ ফেসবুকে সরব থাকলেও ছাত্র-জনতার আন্দোলন যখন গতি পেতে শুরু করে, তখন ফেসবুকেও আর দেখা যায়নি মমতাজকে। সবশেষ ১৬ জুলাই তিনি পোস্ট করেন। এর প্রায় তিন মাস পর একটি ভিডিও নিয়ে ফেসবুকে ফিরলেন মমতাজ।
ওই ভিডিওতে একটি কক্ষে বালিশে হেলান দিয়ে হাতে মোবাইল ফোন নিয়ে গান গাইতে দেখা যায় মমতাজ বেগমকে। ‘আমার হাত বান্ধিবি, পা বান্ধিবি, মন বান্ধিবি কেমনে? -গানটি শোনা যায় তার কণ্ঠে। ৮৮ দিন পর ফেসবুকে গানের ভিডিও নিয়ে হাজির হওয়া মমতাজকে দেখে অবাক হয়েছেন অনেকে। তিন মাসের মাথায় মমতাজকে ফেসবুকে দেখে কেউ জানতে চেয়েছেন, কোথায় আছেন তিনি, আত্মগোপনে আছেন নাকি বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন? কেউ আবার আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক তুলে ধরে মন্তব্য করেছেন। তবে এসব প্রশ্নের জবাবে কোন কিছুই জানাননি এই সংগীতশিল্পী।
অজ্ঞাত স্থান থেকে গান গেয়ে শোনার পরদিনও মমতাজ আবারো শিরোনামে আসেন। এরপর তার ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়। সেই সঙ্গে তার নামে কোন লকার সুবিধা থাকলে তার ব্যবহারও রহিত করা হয়েছে। পাশাপাশি তার ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের হিসাবও স্থগিত করেছে সংশ্লিষ্ট সংস্থা। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর মমতাজের নাম প্রথমবার শিরোনামে আসে, মানিকগঞ্জের সিংগাইরে ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে এক প্রতিবাদ মিছিলে গুলি চালিয়ে চারজনকে হত্যার ঘটনায় তাকে প্রধান আসামি করে মামলা দায়ের করার পর। অভিযোগ আছে, ওই 'হামলার ইন্ধনদাতা' ছিলেন মমতাজ।
গানে গানে বাংলার কোটি কোটি মানুষকে মুগ্ধ করলেও, সুরের ভুবন থেকে রাজনীতির মাঠে এসে বিতর্কিত হতে শুরু করেন মমতাজ। দেড় যুগ আগে রাজনীতিতে সক্রিয় হন। ২০০৯ সালে নবম জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মনোনীত হন। এরপর ২০১৪ সালে মানিকগঞ্জ-২ আসন থেকে নির্বাচিত হয়ে সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন মমতাজ। ২০২৪ সালেও নৌকা প্রতীকে লড়েও, হেরে যান স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, মমতাজ নিজের স্বার্থ সিদ্ধি করতেই ব্যস্ত ছিলেন। নিজের ইউনিয়ন ছাড়া কিছু বুঝতেন না।
এছাড়াও এলাকায় চাঁদাবাজি ও দলের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টিরও অভিযোগও রয়েছে মমতাজের বিরুদ্ধে। সংসদ অধিবেশনে গান শোনানো এবং মাথায় করে বিদ্যুতের ফেরির মন্তব্য নিয়েও সমালোচনার মুখে পড়েছেন। সেই সঙ্গে নিজ এলাকায় মধুমেলা আয়োজন নিয়েও মমতাজের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ ছিলো। এমন সব অভিযোগের কারণেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকেই খোঁজ নেই মানিকগঞ্জ-২ আসনের সাবেক এমপি মমতাজের। জনতার মুখোমুখি হবার ভয়েই আত্মগোপনে চলে গেছেন এই গায়িকা। যদিও নির্বাচনে হারার পর রাজনীতিতে খুব বেশি সক্রিয় ছিলেন না তিনি।
তবে পাঁচই আগস্টের পর তাকে আর জনসমক্ষে দেখা যায়নি। মমতাজের কাছের লোকজন জানিয়েছেন, এখনো দেশেই আত্মগোপনে অবস্থান করছেন তিনি। কিন্তু গ্রামের বাড়ি সিংগাইরে নেই মমতাজ। তার মোবাইল ফোন নম্বরে ফোন করা হলেও, কোনো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না।