কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৫০০ এমএ ডিজিটাল এক্সরে মেশিন আছে। কিন্তু টেকনোলজিস্টের অভাবে পড়ে আছে ৫৫ লাখ টাকার এ ডিজিটাল এক্সরে মেশিনটি। সনোলজিস্টের অভাবে বন্ধ আছে আল্ট্রাসাউন্ড পরীক্ষা। হাসপাতালে ছয়টি ওয়ার্ডে পর্যাপ্ত ওয়ার্ডবয় নেই, নেই মেডিকেল কনসালট্যান্ট।
শিশু কনসালট্যান্ট এবং প্রশিক্ষণ পাওয়া নার্সের অভাবে এনএসইউ সেবা বন্ধ হওয়ার উপক্রম। নেই ওষুধ সরবরাহ দেওয়ার কর্মচারী।
হাসপাতালটিতে আগে থেকেই জনবল সংকট। তার মধ্যে বেসরকারি ৫১ জন এনজিও কর্মীদের প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কারণে হাসপাতালে জনবল সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। এতে দৈনিক এক থেকে দেড় হাজার রোগীর চিকিৎসা সেবা দিতে হিমসিম খেতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। এ কারণে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা অনেক রোগী ফেরত যাচ্ছেন হাসপাতাল থেকে।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালটিতে সেপ্টেম্বরে আউটডোরে ছয় হাজার ৬৬৯ জন পুরুষ, ১১ হাজার ৬৮৭ জন মহিলা, ছয় হাজার ৩৭৪ জন শিশুসহ ২৪ হাজার ৭৩০ জন এবং ইনডোরে এক হাজার ৭১ জন পুরুষ, এক হাজার ৬০০ জন মহিলাসহ দুই হাজার ৭৭১ জন রোগীকে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেপ্টেম্বর মাসে ১৬২ জনকে নরমাল ডেলিভারি, ৮ জনকে সিজারিয়ান এবং এক হাজার ১৫২ জনকে গর্ভকালীন সেবা দেওয়া হয়েছে। ভায়া কর্ণার পরীক্ষা দেওয়া হয়েছে ২৬৬ জনকে। ভর্তিকৃত রোগী ছিল এক হাজার ৩০৯ জন। অবজারভেশন সেন্টারে এক হাজার ১২৮ জন এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এক হাজার ৯৪৬ জন রোগীকে ব্লাড পরীক্ষা ও গর্ভবতীসহ ১ হাজার ৮ জনকে আল্ট্রাসাউন্ড পরীক্ষা করা হয়েছে। এনসিডি কর্ণারে দুই হাজার ৫৫০ জন এবং এসএএম ইউনিটে ১৬ জন, এনএসইউ ইউনিটে ৭৪ জন, পুরুষ ৪১ জন,মহিলা ৩১ জনসহ ৭২ জন রোগীকে রক্ত পরিসঞ্চালন সেবা প্রদান করা হয়। আই ভিশন সেন্টার ১২৬ জন পুরুষ, ২২২ জন মহিলাসহ ৩৪৮ জনকে চোখের চিকিৎসা প্রদান করে।
একইভাবে গত আগস্ট মাসেও সেপ্টেম্বরের সমপরিমাণ রোগীর ভিড় ছিলো এ হাসপাতালে। সেপ্টেম্বরে চিকিৎসা সেবায় সারাদেশে ২২ তম এবং চট্টগ্রামে নবম ও কক্সবাজার জেলায় চিকিৎসা সেবায় প্রথম হওয়া এ হাসপাতালে জনবল সংকট হওয়ার কারণে চিকিৎসা সেবা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নিচ তলায় অন্তত তিন- চারশত নারী- পুরুষ লাইনে দাঁড়িয়ে ঔষধ নিচ্ছেন। ঔষধ সরবরাহ দেওয়ার মতো লোক না থাকার কারণে হাসপাতালের ব্যবস্থাপনায় দুইজন লোক নিয়োগ দিয়ে রোগীদের ঔষধ সরবরাহ দেওয়া হচ্ছে। যার কারণে অনেক রোগীর লাইনে দাঁড়িয়ে দীর্ঘক্ষণ ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। হাসপাতালের এসব দৃশ্য দেখে দ্বিতীয় তলায় দেখা যায় রোগীরা দিক- বিদিক ছুটাছুটি করছেন। সেখানে কথা হয় বেশ কয়েকজন রোগীর সাথে।
তারা বলেন, রোগীর চাপ বেশি। একেক জন একেক রোগের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে আসছে। কিন্তু সেবা দেওয়ার মত হাসপাতালে জনবল নেই। আরও দেখা যায়, হাসপাতালের পুরাতন ভবনের দ্বিতীয় তলায় আল্ট্রাসাউন্ড কক্ষে সনোলজিস্ট না থাকার কারণে আল্ট্রাসাউন্ড করাচ্ছেন হাসপাতালে টিএইচও ডা. মুজিবুর রহমান।
আসমাউল হুসনা নামের এক রোগী বলেন, হাসপাতালে সকাল থেকে আসছি। এখন দুপুর দুইটা বেজেছে কিন্তু ঔষধ নিতে পারিনি। তাই, চলে যাচ্ছি। আগামীকাল সকাল সকাল এসে লাইনে দাঁড়িয়ে ঔষধ নিতে হবে।
পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (টিএইচও) ডাক্তার মুজিবুর রহমান বলেন, চলতি মাস থেকে হাসপাতালে সেবা দিতে খুবই হিমসিম খেতে হচ্ছে। এমনিতে হাসপাতালে আগে থেকে জনবল সংকট আছে। জনবল সংকট থাকলেও বেসরকারি এনজিও কর্মীদের দিয়ে সেটা সারা যেত। কিন্তু এ মাসে সকল এনজিও কর্মীদের প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে। রোগীর চাপও বেশি, তাই সেবা দিতে খুবই কষ্ট হচ্ছে। তাই তিনি সরকারের কাছে চাহিদা অনুযায়ী জনবল নিয়োগ দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন।