সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে প্রায় ২৫ বছর পর হারিয়ে যাওয়া জাহানারা বেগম (৬০) নামের এক বৃদ্ধাকে খুঁজে পেয়েছেন তার স্বজনরা।
শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) দুপুরে কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার জাঙ্গালিয়া বাজার এলাকা থেকে তাকে নিয়ে যান তার ছোট মেয়ে হাসি আক্তার এবং বোন জামাই মোস্তফা মির্জা।
জাহানারা বরগুনা সদর উপজেলার ঘটবাড়িয়া গ্রামের আবদুল লতিফ ফরায়েজীর স্ত্রী ও ৫ সন্তানের জননী। এর আগে ১৯৯৯ সালে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে নিখোঁজ হয়েছিলেন।
দীর্ঘদিন পর মাকে কাছে পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন ছোট মেয়ে হাসি বেগম। তিনি বলেন, মাকে খুঁজে পেয়ে যেনো আমার পৃথিবী খুঁজে পেয়েছি। আমাদের ছোটরেখেই হারিয়ে যান মা। এখন আমরা সংসার করছি। ধরেই নিয়েছিলাম মায়ের মুখটি আর কখনও দেখতে পারবো না। এত বছর পর খুঁজে পাওয়ায় সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।
জাহানারা বেগমের বোন জামাই মোস্তফা মির্জা বলেন, আজ থেকে ২৫ বছর আগে জাহানারা বেগম তার ৩ বছরের ছোট ছেলে (বর্তমান বয়স ২৮) ছায়দুলকে নিয়ে বরগুনা থেকে ঢাকায় আত্মীয়ের বাসায় রওনা হন। ভোরে সদরঘাটে লঞ্চ থেকে নেমে ছোট ছেলেকে রেখে টয়লেটে যায়। সেখান থেকে বের হয়ে আর ছেলেকে পায়নি। এরপর থেকে তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি আত্মীয়-স্বজনদের বাসাসহ সব যায়গায় খুঁজে পরিবার হাল ছেড়েই দিয়েছিলো। ১০ বছর আগে নিখোঁজ ছেলে ছায়দুলকেও খুঁজে পেয়েছে তার পরিবার।
গত ১৫-২০ দিন ধরে কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার জাঙ্গালিয়া বাজারে জাহানারা বেগমকে ঘুরাফেরা করতে দেখা যায়। এর মধ্যে জাঙ্গালিয়া বাজার কমিটির সভাপতি আশরাফুল আলম রিপনের বাড়িতে নেয়া হয় এবং পরিচয় জানতে চাওয়া হয়। মানসিকভাবে ভেঙে পড়ায় ঠিকমতো পরিবারের নাম ঠিকানাও অসংলগ্নভবে বলছিলো। শুধু বোঝা যাচ্ছিলো ‘বরগুনা এবং ঘটবাড়িয়া’ শব্দগুলো। সেই কথাগুলো দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দেয়া হয়। এরপরই বরগুনা থেকে তার স্বজনরা যোগাযোগ করেন শুক্রবার দুপুরে তাকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয় জাহানারা বেগমকে।
জাঙ্গালিয়া বাজার কমিটির সভাপতি আশরাফুল আলম রিপন বলেন, ১৫-২০ দিন ধরেই এই মহিলা আমার দোকানের সামনে অবস্থান করছে। ৫-৬ দিন ধরে আমার বাড়িতেই খাওয়া দাওয়া করেছে। এত বছর পর জাহানারা বেগম তার পরিবার খুঁজে পাওয়ায় আমর আনন্দিত।
শুক্রবার সকাল ১১টার দিকে জাহানারা বেগমকে তার পরিবারের লোকজনের কাছে হস্তান্তর করার সময় স্থানীয় জাঙ্গালিয়া ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান ওমর ফারুখ, সাবেক চেয়ারম্যান তৌফিকুল ইসলাম, শিক্ষক শফিকুল ইসলাম, অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য আবুল কালামসহ এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
এআই