টানা চার দিনেও সুরাহা হয়নি সৃষ্ট জটিলতার। বেনাপোল থেকে ঢাকাসহ দুরপাল্লার পরিবহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। পরিবহন না পেয়ে অতিরিক্ত অর্থ দিয়ে গন্তব্যে যেতে হচ্ছে তাদের। প্রশাসনের সাথে পরিবহন মালিক শ্রমিকদের বৈঠকে কোন সুরাহা না হওয়ায় পরিবহন চলাচল বন্ধ রেখেছে ঢাকা, যশোর পরিবহন মালিক সমিতি। এদিকে সোমবার থেকে সাতক্ষীর-নাভারন-ঢাকা রুটের পরিবহন বাস বন্ধ করে দিয়েছে পরিবহন মালিক শ্রমিকরা। ফলে ভারত ফেরা যাত্রীরা বেনাপোল এসে পড়ছেন চরম দুর্ভোগে।
যানজট নিরসনের নামে চেকপোস্ট থেকে যে সব পরিবহন ছাড়ছিল সেসব বাস চেকপোস্টে প্রবেশ বন্ধ করে দেয়াসহ অধিক রাতে যাত্রীদের বাধ্যতামূলক চেকপোস্ট থেকে অন্তত দুই কিলোমিটার দুরে নামিয়ে দেয়ার কারণে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এ কারণে বেনাপোল থেকে দুরপাল্লার পরিবহন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
চারদিন পেরিয়ে গেলেও সমস্যার সুরাহা না হওয়ায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পরিবহন বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। যাতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন পাসপোর্টযাত্রীরা। এদিকে এ বিষয়ে রোববার জেলা প্রশাসনের সাথে বৈঠক হলেও সমস্যার কোন সুরাহা হয়নি বলে জানিয়েছেন পরিবহন কর্তৃপক্ষ। শুক্রবার রাত থেকে অনির্দিস্টকালের জন্য এ ধর্মঘটের ডাক দেয় পরিবহন ব্যবসায়ী সমিতি।
তাদের বক্তব্য, ঢাকা যশোরসহ সর্বত্র দেখা যায় পরিবহনগুলো টার্মিনাল থেকে কাউন্টারে আসে, সেখান থেকে যাত্রী নিয়ে গন্তব্যে যায়। আবার সেখানে এসে যাত্রী নামিয়ে টার্মিনালে চলে যায়। বেনাপোলের ক্ষেত্রে নতুন নিয়ম কার স্বার্থে সেটিই বোধগম্য হচ্ছে না। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক এই চেকপোস্টে পাসপোর্টযাত্রীদের কথা বিবেচনা করে এখানে পরিবহনের জন্য বাড়তি ছাড় দেয়া উচিত ছিল। সেটি না করে উল্টো নিয়ম করায় এই বিড়ম্বনার সৃষ্টি হয়েছে।
পরিবহন সূত্রে জানা গেছে, বেনাপোলে যানজট নিরসনে পৌর বাস টার্মিনাল ব্যবহারে নির্দেশনা দেয় জেলা প্রশাসন। পরিবহন কর্তৃপক্ষ পৌর বাস টার্মিনাল ব্যবহারে সহমত পোষন করে দিনের বাসগুলো ছাড়ছিল সেখান থেকেই। যাত্রীদের নিরাপত্তা ও সুবিধায় রাতের বাস চেকপোস্ট টার্মিনালে এসে যাত্রী নামিয়ে দিয়ে বাস যাচ্ছিল পৌর টার্মিনালে। এরই মধ্যে হঠাৎ করে ২২ নভেম্বর গভীর রাতে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা বাসের যাত্রী পৌর বাস টার্মিাালে নামিয়ে নেওয়া হয়। বাস প্রবেশে দেওয়া হয বাধা। এরই প্রতিবাদে বাস চলাচল বন্ধ রাখে মালিক সমিতি। টানা চার দিন দুর পাল্লার পরিবহন চলাচল বন্ধে ভারত বাংলাদেশ যাতায়াতকারী যাত্রীরা পড়ছেন সীমাহীন ভোগান্তিতে। এর সুরাহা চান ভুক্তভোগী যাত্রীরা।
ভারত ফেরা দু ‘দেশের যাত্রীরা বলেন, বাংলাদেশে পরিবহন বন্ধ জানত না তারা। ফলে বেনাপোলে এসে পড়েছেন ভোগান্তিতে। রোগীরা পড়ছেন দুর্ভোগে। সৃষ্ট জটিলতা সমাধানে রোববার বিকেলে যশোর জেলা প্রশাসনের সাথে বৈঠক করেছেন পরিবহন শ্রমিক নেতারা। বৈঠকে কোন ফলপ্রশু আলোচনা বা সমাধান হয়নি। ফলে টানা চার দিনের মতো তারা পরিবহন চলাচল বন্ধ রেখেছেন বলে জানান বেনাপোল পরিবহন শ্রমিক সংগঠনের সভাপতি বাবলুর রহমান বাবু।
বেনাপোল চেকপোস্টে শ্যামলী এনআর বাস কাউন্টারের স্টাফ মনজিল হোসেন বলেন, যাত্রী ভোগান্তি ও ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ না থাকার কারনে ঢাকার মালিকদের নির্দেশে চার দিন ধরে বেনাপোল রুটে কোন যাত্রীবাহী পরিবহন বাস ছাড়েনি। তারা পরবর্তীতে নির্দেশ দিলে পরিবহন সেবা আবারো শুরু করা হবে।
তবে খুলনা বিভাগ ও যশোর জেলা বাস মালিক সভাপতির মুসলিম উদ্দিন পাপ্পু জানান. বেনাপোল চেকপোস্টে বন্দর ভেহিক্যাল টার্মিনাল চালু হওয়ায় কমে গেছে গাড়ির জট। বাস চলাচলে হয়না যানজট। ভারত বাংলাদেশের আমদানি রফতানি বাহী ট্রাকের কারনে সৃষ্টি হতো যানজটের। দুর পাল্লার যাত্রীদের নিরাপত্তা ও দুর্ভোগের বিষয়টি কর্তৃপক্ষের বিশেষ বিবেচনার দাবী জানান মুসলিম উদ্দিন পাপ্পু।
শার্শা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ড. নাজীব হাসান বলেন, কী কারণে তারা (পরিবহন মালিক-শ্রমিক) ধর্মঘট ডেকেছে, আমরা সে বিষয়ে ওয়াকিবহাল নই। তাদের কোনো কিছু বলার থাকলে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করতে পারে। নৌ-পরিবহন উপদেষ্টা সাহেবের নির্দেশে এটা করা হয়েছে। উপদেষ্টা সাহেবের নির্দেশ ব্যতিত আমাদের পক্ষে কোন কিছু করা সম্ভব নয়। পৌর টার্মিনাল থেকেই যাত্রী ওঠাতে হবে এবং নামাতে হবে।
এমআর