এইমাত্র
  • জয়পুরহাটে মানসিক ভারসাম্যহীন নারীর লাশ উদ্ধার
  • তৃতীয় বিয়ে করায় স্বামীর গোপনাঙ্গ কেটে দিলেন দ্বিতীয় স্ত্রী
  • কুমিল্লার ট্রেন দুর্ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন
  • 'স্বাভাবিক মৃত্যু'কে ফরেনসিকের কারিশমায় হত্যা প্রমাণের অভিযোগ
  • মামলা থেকে রেহাই পেলেন ট্রাম্প
  • শাপলা চত্বরে গণহত্যা: শেখ হাসিনাসহ ৫০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ
  • প্রেমের বিয়ের বিপক্ষে পাকিস্তানের বেশিরভাগ মানুষ
  • মঠবাড়িয়ায় সন্ত্রাসী হামলায় যুবদল নেতা আহত
  • ঢাকা ও চট্টগ্রামে ১০ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন
  • গণমাধ্যমের ওপর ক্ষোভ কেন তা জনগণের কাছে স্পষ্ট করা দরকার: নাহিদ ইসলাম
  • আজ মঙ্গলবার, ১২ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৬ নভেম্বর, ২০২৪
    দেশজুড়ে

    আশফাকুল হত্যা মামলা

    'স্বাভাবিক মৃত্যু'কে ফরেনসিকের কারিশমায় হত্যা প্রমাণের অভিযোগ

    সময়ের কণ্ঠস্বর রিপোর্ট প্রকাশ: ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৫০ পিএম
    সময়ের কণ্ঠস্বর রিপোর্ট প্রকাশ: ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৫০ পিএম

    'স্বাভাবিক মৃত্যু'কে ফরেনসিকের কারিশমায় হত্যা প্রমাণের অভিযোগ

    সময়ের কণ্ঠস্বর রিপোর্ট প্রকাশ: ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৫০ পিএম

    পাওনা টাকা আদায় করতে গিয়ে ৩৪ দিন আগে বাগবিতণ্ডায় উত্তেজিত হয়ে আশফাকুল আউয়াল (৩৫) নামে এক ব্যবসায়ী অসুস্থ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। ধারণা করা হয়, তিনি ব্রেন স্ট্রোক অথবা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। যদিও এ বিষয়ে নিহতের বড় ভাই বাদী হয়ে সিরাজগঞ্জ সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।

    নিহত আশফাকুল সিরাজগঞ্জ সদরের নলিছাপাড়া এলাকার হাজী আব্দুর রহিম ফ্লাওয়ার মিলের স্বত্বাধিকারী ছিলেন। মৃতের ভগ্নিপতি শহীদ এম মুনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক মোহসেনুল মোমিন ফিরোজের প্রভাবে ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ফরেনসিক বিভাগের প্রধান মুহাম্মদ আব্দুল্লাহিল কাফি কারিশমায় 'স্বাভাবিক' এ মৃত্যুকে হত্যায় রূপ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ আসামিপক্ষের। ফলে ময়নাতদন্তে স্বজনপ্রীতি ও হত্যা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন।

    আশফাকুল আউয়ালের মৃত্যুর পর মামলার বাদী এবং বিবাদীদের নানা কর্মসূচীর কারণে শুরু থেকেই বিষয়টি শহরবাসীর আগ্রহের জায়গায় ছিল। সবশেষ ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন ও দুইজন আসামি গ্রেফতারের কারণে আবারও স্থানীয়দের আলোচনায় এসেছে এই মামলা।

    জানা যায়, ঘটনার দিন গত ২৩ অক্টোবর আভিসিনা হাসপাতাল থেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দেওয়ান শহিদুজ্জামান শুভকে থানায় আনে পুলিশ, পরদিন বাদীপক্ষ এজাহারে শুভকে দুই নম্বর আসামি করলে গ্রেফতার দেখানো হয় তাকে। চারদিনের রিমান্ড শেষে বর্তমানে শুভ কারাগারে রয়েছেন।

    অন্যদিকে এ মামলার তিন নম্বর আসামি কামরুল ইসলামকে রাজধানীর ভাটারা থানাধীন খিলবাড়িটেক এলাকা থেকে গত ১২ নভেম্বর গ্রেফতার করে র‌্যাব। পরে দুইদিনের রিমান্ড শেষে তাকেও কারাগারে প্রেরণ করা হয়। এছাড়া সবশেষ মামলার চার নম্বর আসামি মো. লিটন শেখকে ঢাকার খিলক্ষেত খাঁপাড়া মসজিদ রোড এলাকা থেকে গত ১৮ নভেম্বর গ্রেফতার করা হয়। তবে মামলার প্রধান আসামি বাবুকে এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

    এদিকে সম্প্রতি পুলিশের কাছে আসা নিহত আশফাকুল আউয়ালকে শ্বাসরোধ করে হত্যার ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন নিয়ে আসামিপক্ষ এবং জনমনে নানা প্রশ্ন উঠেছে। জেলার অনেক আলোচিত হত্যাকাণ্ডের ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন গত ছয়মাসে আলোর মুখ না দেখলেও খুব তড়িঘড়ি করে মাত্র ১৩ দিনে আশফাকুল আউয়ালের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডাঃ মুহাম্মদ আব্দুল্লাহিল কাফি।

    আসামিপক্ষের অভিযোগ, নিহতের আপন ভগ্নিপতি শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রভাবশালী ডাক্তার মোহসেনুল মোমিন ফিরোজের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে একই হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডাঃ মুহাম্মদ আব্দুল্লাহিল কাফির। ফলে তাঁর দ্বারা প্রভাবিত হয়েই অল্প সময়ের মধ্যেই উদ্দেশ্যপ্রনোদিত হয়ে এ ধরণের মিথ্যা প্রতিবেদন দিয়েছেন ডাঃ কাফি

    আশফাকুল আউয়ালের লাশ কবর থেকে তুলে অন্য কোনো হাসপাতালে পুনরায় ময়নাতদন্ত করলে এটি যে হত্যাকাণ্ড নয় তা নিশ্চিত প্রমাণিত হবে, এ বিশ্বাস তাদের।


    (দুই নম্বর আসামি শহিদুজ্জামান শুভ'র জন্মদিনে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা। সেখানে লাল গোলাকার চিহ্নিত ব্যক্তি ডাক্তার মোহসেনুল মোমিন ফিরোজ )

    জানাযায়, নিহত ব্যবসায়ী আশফাকুল আউয়াল সিরাজগঞ্জ সদরের নলিছাপাড়ায় অবস্থিত হাজী আব্দুর রহিম ফ্লাওয়ার মিলের স্বত্বাধিকারী। ব্যবসায়ীক লেনদেনের কারণে প্রায়ই তিনি একই এলাকার এঞ্জেল ফুডস্ এন্ড বেকারীতে যাতায়াত করতেন। অন্যান্য দিনের মতো গত ২৩ অক্টোবর সন্ধ্যায় পাওনা টাকার জন্য গেলে বেকারীর মালিক বাবু মন্ডলের সঙ্গে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে দুজনের মধ্যে হাতাহাতি হয়। পরে হঠাৎই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন আশফাকুল আউয়াল।

    এসময় কারখানার ভেতরে অবস্থান করছিলেন অপর মালিক দেওয়ান শহিদুজ্জামান শুভ, ম্যানেজার লিটন, একরাম ও তাঁর প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা। তাৎক্ষণিক অসুস্থ আশফাককে উদ্ধার করে মাথায় পানি ঢালা, হাসপাতালে নেওয়াসহ বাঁচানোর সব চেষ্টাই করেন দেওয়ান শুভ।

    পরে শহরের আভিসিনা হাসপাতালের দায়িত্বরত ডাক্তার আশফাকুলকে মৃত ঘোষণা করলে শুভ মৃতের ভগ্নিপতি ও নিজের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ডাঃ মোহসেনুল মোমিন ফিরোজকে সার্বিক বিষয়ে অবগত করেন। পরে খবর পেয়ে পুলিশ এসে লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন।

    এ ঘটনায় পরদিন ২৪ অক্টোবর ব্যবসায়ী আশফাকুলের ভাই বাদী হয়ে সিরাজগঞ্জ সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যেখানে আসামি করা হয়েছে এন্জেল ফুডের তিন মালিকসহ দুই কর্মচারী এবং অজ্ঞাত আরও তিন চারজনকে।

    যদিও এই মামলায় কারখানার অপর এক মালিক কামরুল ইসলাম তালুকদার ঘটনার দিন কারখানায় উপস্থিত না থেকেই মামলার তিন নম্বর আসামি হয়েছেন! তিনি কাগজে কলমে মালিক থাকলেও নিয়মিত কারখানায় আসতেন না। সর্বশেষ কবে এসেছিলেন সেটিও মনে করতে পারছেন না সেখানে কর্মরত একাধিক কর্মী।

    সময়ের কণ্ঠস্বরের অনুসন্ধান:

    ব্যবসায়ী আশফাকুল আউয়াল নিহতের ঘটনার পর স্থানীয় জনতা, কারখানার শ্রমিক, লাশ কাটার কাজে নিয়োজিত ডোম, ফরেনসিক বিভাগের কর্মকর্তা এবং পুলিশ প্রশাসনের সাথে কথা হয় সময়ের কণ্ঠস্বরের। তাতে প্রাথমিকভাবে আশফাকুল আউয়ালকে হত্যার কোনো তথ্য মিলেনি অনুসন্ধানে।

    এ বিষয়ে প্রথমেই কথা হয় শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের হাসপাতালের লাশ কাটা ঘরের দায়িত্বে থাকা ডোম স্বপনের সঙ্গে। তিনি জানান, 'জীবনে বহু লাশ দেখেছি, কিন্তু এমন লাশ আগে কখনও পাইনি। এই লাশের গায়ে কোন আঘাতের চিহ্ন ছিলনা। এমনকী লাশ দেখে এটি হত্যাকান্ড এমনটাও বোঝা যায়নি। এখন স্যারেরা বলতে পারবে কী হয়েছে। আপনারা কাফি স্যারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাঁর হাতেই সব।'

    এ বিষয়ে বক্তব্য নিতে টানা দুইদিন একাধিকবার হাসপাতালে গেলেও ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডাঃ মুহাম্মদ আব্দুল্লাহিল কাফিকে পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে মুঠোফোনে একাধিক নম্বর থেকে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে অবশেষে গত ২৭ অক্টোবর বিকেল তিনটার দিকে তিনি মোবাইল রিসিভ করেন। এসময় সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পর হাইকোর্টের দোহাই দিয়ে আশফাকুল আউয়ালের ময়নাতদন্তের বিষয়ে কথা বলতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেন।

    অন্যদিকে ফরেনসিক বিভাগের কর্মরত ল্যাব ইনর্চাজ সজীবের সঙ্গে এ ময়নাতদন্তের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রথমে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। একপর্যায়ে বলেন, 'আপনাদের কাছে তথ্য দিলে তো নিউজ করবেন'। তিনি বলেন, 'এখানে তথ্য ফাঁস করার মতো একমাত্র সজীব আছে, আর কেউ নাই। তো আপনি যেটাই করেন আমি ফেঁসে যাব, আর এমন কিছু কইরেন না যে আমি ফেঁসে যাই।'

    এসময় সজীব আরও বলেন, 'তথ্য ফ্লাশ করা কিচ্ছু আসে যায় না, কিন্তু ফ্লাশটা হইল কীভাবে এটাই বড় কথা। আর এটি একটি সিক্রেট ব্যাপার।'

    পরে কৌশলে আশফাকুল আউয়ালের মৃত্যুর কারণ জানতে চাইলে সজীব বলেন, 'এটার অবশ্য ভিসেরা আছে। এটা ক্যামিকেল এনালাইসিসের জন্য রাজশাহীতে (রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল) চলে যাবে।'

    তিনি বলেন, 'কোনো ইনজুরি যদি না পায়, অর্থাৎ ডাক্তাররা কোনো ইনজুরি পায় নাই, তাহলে সেক্ষেত্রে কি ভিসেরায় যাবে না?। স্বাভাবিক কিন্তু। সে স্ট্রোক করে থাকলে ভিসেরাতে স্ট্রোকের আলামত কিছু পাবে। ওই রিপোর্ট অনুযায়ী আমরা আবার সার্টিফিকেট তৈরি করব। আর এখানে যদি দৃশ্যমান কিছু পায়, অর্থাৎ গলা কেটে হত্যা বা গুলি করে মারা হয় তাহলে কি আর রাজশাহীতে পাঠানোর প্রয়োজন আছে?। যেহেতু এখানে কোনো কিছু পায় নাই। সেক্ষেত্রে অবশ্যই ভিসেরায় চলে যাবে।'

    এসময় প্রতিবেদক 'ক্লিয়ার মেসেজ' বললে উত্তরে সজীব বলেন, 'হ্যাঁ, আমি কিন্তু অলরেডি বলেই দিছি'। প্রতিবেদক বলেন, আমার যেটা প্রয়োজন ছিল সেটি পেয়ে গেছি। তখন সজীব বলেন, 'বলেই দিছি।' এসব কথোপকথনের অডিও রের্কড সময়ের কণ্ঠস্বরের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে।

    একই বিষয়ে দশ দিনের ব্যবধানে ফের কথা বলতে গেলে ল্যাব ইনচার্জ সজীব কথা বলতে একদমই রাজি হননি। তিনি মুঠোফোনে বলেন, 'আমি এই ময়নাতদন্ত রিপোর্ট দেখি নাই, শুনেছি। এটা ক্রাইসিস তো, এটা নিয়ে ঝামেলা চলতেছে। এগুলোর মধ্যে আমরা না জড়াই।'

    পরে তাকে আগেরবারের ভিসেরার তথ্য প্রকাশের কথা স্মরণ করিয়ে দিলে তিনি মুহূর্তেই নিজের বক্তব্য পাল্টে ফেলেন। বলেন, 'তখন আমি উদাহারণ দেওয়ার জন্য ওটা বলেছিলাম। কী হইছে না হইছে সেটা আমি জানিও না, আমার জানার বিষয়ও না।'

    এদিকে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিরাজগঞ্জ সদর থানার এসআই মো. সোহাগের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, 'সুরতহালে নিহতের গায়ে কোথাও কোনো আঘাত নেই। ঘটনার দিন আভিসিনা হাসপাতালে নিহতের আপন ভগ্নিপতি ডা. মোহসেনুল মোমিন ফিরোজের সহায়তায় সুরতহাল প্রতিবেদন লেখা হয়। সেই নিজে লাশ উলট-পালট করে দেখেছে, বলেছে, তারপর আমি লেখেছি। সেখানে অসংখ্য লোকজন ছিল। শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নাই। শুধু গলার ডান পাশে হালকা লালচে দাগ ছিল। যেটি চুলকানির হতে পারে, দাড়ির ঘষাতেতে হতে পারে অথবা দু'পক্ষের বাকবিতণ্ডার সময়ও হতে পারে বলে মনে করেন এ তদন্ত কর্মকর্তা।

    অন্যদিকে, মাত্র ১৩ দিনে পুলিশের হাতে শ্বাসরোধে হত্যার ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন আসলে শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডাক্তার মুহাম্মদ আব্দুল্লাহিল কাফির সঙ্গে পুনরায় মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে সময়ের কণ্ঠস্বর। আগেরবার টানা দুইদিন তাকে কল দিয়ে না পাওয়া গেলেও এবার প্রথমবারই তিনি মোবাইল রিসিভ করেন।

    এসময় আউয়ালকে গলাটিপে শ্বাসরোধ করে হত্যার বিষয়টি তিনি নিশ্চিত করেন। গলাটিপে শ্বাসরোধ করলে একাধিক আঙুলের এবং গলার দুপাশেই ছাপ থাকার কথা এমন প্রশ্নে তিনি বিস্তারিত না বলে পুলিশের সুরতহালে লাশের গলায় লালচে দাগ ছিল বলে উল্লেখ করেন! তবে পুলিশের সঙ্গে আমার রিপোর্ট নাও মিলতে পারে।

    এসময় একই হাসপাতালের চিকিৎসক মোহসেনুল মোমিন ফিরোজের প্রভাবে ময়নাতদন্ত পরিবর্তনের অভিযোগ নিয়ে জানতে চাইলে মুহাম্মদ আব্দুল্লাহিল কাফি বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, যা দেওয়ার আমি রিপোর্টে দিয়ে দিয়েছি।

    হাসপাতাল সূত্রের বরাতে প্রাথমিকভাবে আশফাকুল আউয়ালের মৃত্যুর কারণ না পাওয়ায় ভিসেরার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর প্রক্রিয়ার যে তথ্য পেয়েছে সময়ের কণ্ঠস্বর, সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখানে আমার কথা ছাড়া অন্য কারও কথা গ্রহণযোগ্য নয়। আমি এবং আমার সহকর্মী ডাক্তার শুভ ছাড়া এ বিষয়ে কেউ কিছু বলতে পারবে না। আর আমার অনুমতি ছাড়া ডাক্তার শুভ'র মুখ থেকে কথা বের হওয়ারও কথা না।

    এসময় কে তথ্য প্রকাশ করেছে তাঁর নাম প্রতিবেদকের কাছে জানতে চান ডাক্তার কাফি।

    নিহত আশফাকুলের ময়নাতদন্তে অপর যেই ডাক্তার যুক্ত থাকার কথা বলেছেন মুহাম্মদ আব্দুল্লাহিল ডাঃ কাফি, তাঁর নাম সামাউননুর শুভ। পরে তাঁর সঙ্গে কথা বলতে ফোন দিলে তিনি এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি নয় বলেই ফোনটি কেটে দেন।

    সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত আশফাকুল আউয়ালের ভগ্নিপতি মোহসেনুল মোমিন ফিরোজ সময়ের কণ্ঠস্বরকে বলেন, 'ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পুলিশের কাছে হস্তান্ততের আগ পর্যন্ত আমি এ বিষয়ে কিছুই জানতাম না। পরিবর্তনের তো প্রশ্নই আসে না। আর যদি পরিবর্তন করে নিরপরাধ কাউকে ফাঁসানো হয় সেটি অবশ্যই ভুল।'

    এসময় তিনি প্রতিবেদককে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বলেন, 'আমার হৃদপিণ্ডটি যদি দুইভাগ করা হয়, একভাগ আশফাকুল, অন্যভাগ শহিদুজ্জামান শুভ। এজন্য আমি বা আমার পরিবার কি একটিবারের জন্যও বলেছি যে শুভ খুন করেছে?। শুভকে আমি ছোটবেলা থেকে চিনি, আমার চেয়ে ভালো কেউ তাকে চিনে না। শুভ কাউকে খুন করবে, এটি আমি কখনোই বিশ্বাস করি না।'

    তিন নম্বর আসামি কামরুল ইসলাম তালুকদার সেদিন ঘটনাস্থলে না থাকলেও আসামি করা হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মোহসেনিল মোমিন ফিরোজ বলেন, 'এক নম্বর আসামি বাবু বাদে শুভ ও কামরুল ভাইকে আমি খুব ভালোভাবে চিনি। কামরুল ভাই যদি ঘটনাস্থলে না থেকে থাকে বা এ বিষয়ে তার সম্পৃক্ততা না থাকে আশাকরি সেটি পুলিশের তদন্তে উঠে আসবে।'

    এসময় পুলিশের সুরতহাল প্রতিবেদনে বিষয়ে জানতে চাইলে মোহসেনুল মোমিন ফিরোজ ভিন্ন সুরে কথা বলেন। নিজে উপস্থিত থেকে লাশের সুরতহাল করলেও এখন তিনি বলছেন, 'নিহতের পর আশফাকুল আউয়ালের গলার দুই পাশে দাগ ছিল।' যদিও ঘটনার দিন সুরতহালের সময় পুলিশকে নিজেই বলেছিলেন একপাশে হালকা লালচে দাগ রয়েছে। যা পুলিশের বক্তব্য ও সুরতহাল প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

    এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিরাজগঞ্জের জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ মো. নুরুল আমীন বলেন, ময়নাতদন্তগুলো হাসপাতালের প্রসিডিউর মেনেই হয়। এ বিষয়ে সেখানকার পরিচালকের সঙ্গে কথা বলতে পারেন। এটি আমার এখতিয়ার বহির্ভূত।

    এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যদি ময়নাতদন্ত ইচ্ছেকৃতভাবে পরিবর্তন করেন এবং সেটি প্রমাণিত হয়, তাহলে বিএমডিসি অ্যাক্ট অনুযায়ী জড়িতরা সাজাপ্রাপ্ত হবে।

    পরে শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডাঃ মো. আনোয়ার হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি নিয়ে অভিযুক্ত ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডাঃ মুহাম্মদ আব্দুল্লাহিল কাফি ও মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।

    এ বিষয়ে শহীদ এম. মনসুর আলী মেডিকেল হাসপাতালের অধ্যক্ষ ডাঃ আমিরুল হোসেন চৌধুরীর সঙ্গে কথা বলতে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি মোবাইল রিসিভ করেননি।

    ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে আসামিপক্ষের অনাস্থা প্রকাশ:

    আসামিপক্ষের দাবি, ঘটনার শুরু থেকেই আশফাকুল আউয়ালের নিহতের বিষয়টিকে হত্যাকাণ্ড বলে প্রচার করে আসছিলেন নিহতের আপন ভগ্নিপতি ডাক্তার মোহসেনুল মোমিন ফিরোজ। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন প্রকাশের আগেই তিনি এলাকায় আউয়ালকে মাথায় আঘাত এবং গলাটিপে শ্বাসরোধ করে হত্যার কথা ছড়ান। বন্ধুবান্ধবসহ পরিচিতজনকে বলেন, নিহতের গলার দুই পাশে স্পষ্ট দাগ আছে। তিনি এও প্রচার করেন আশফাকুরের মাথার পেছনে হাত দিয়ে তিনি রক্ত পেয়েছিলেন।

    যদিও আশফাকুল আউয়াল নিহতের পর সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুতকালে তিনি নিজেই ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে পুলিশকে সহযোগিতা করেন। পরবর্তীতে ডাক্তার ফিরোজের এমন ভূমিকা আসামিপক্ষের কাছে বিষ্ময়কর মনে হয়েছে।

    তাদের দাবি, আশফাকুল আউয়ালকে শ্বাসরোধ করে হত্যার ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনটি নিহতের ভগ্নিপতি ডা. ফিরোজ কর্তৃক প্রভাবিত হয়ে তার সহকর্মীরা প্রস্তুত করেছেন। তাদের মতে, যে ব্যক্তি কথা কাটাকাটির সময় মোবাইলে কাউকে ফোন দিতে গিয়ে ঢলে পড়েছেন তিনি কীভাবে শ্বাসরোধে হত্যার শিকার হতে পারেন?

    ঘটনার সময় যারা উপস্থিত ছিলেন তাদের সঙ্গে কথা বললেই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যাবে, বলে মনে করেন তাঁরা। এছাড়া নিরীহদের হয়রানি না করে প্রকৃত সত্য জানতে মরদেহ উত্তোলন করে অন্য কোনো হাসপাতালে পুনরায় ময়নাতদন্তের দাবি জানান।

    এ বিষয়ে তিন নম্বর আসামি কামরুল ইসলামের ছেলে নূর নবী বলেন, আমার বাবা দীর্ঘদিন ধরে এঞ্জেল ফুডস্ এন্ড বেকারীতে যান না। ঘটনার দিন তিনি শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত নিজের আরেকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কামরুল স্টোরে অবস্থান করছিলেন। যার প্রমাণস্বরূপ সিসিটিভি ফুটেজ তদন্ত কর্মকর্তা নিয়ে গেছেন। অথচ আমার বাবাকে মিথ্যা এই হত্যা মামলায় তিন নম্বর আসামি করা হয়েছে।

    দেওয়ান শহিদুজ্জামান শুভ'র স্ত্রী আকলিমা খাতুন পপি বলেন, যেই ব্যক্তি বাঁচানোর চেষ্টা করলেন তিনিই হয়ে গেলেন হত্যা মামলার আসামি। এই ঘটনায় তাঁর কোনো সম্পৃক্ততা নেই। নিহতের পরিবারও জানে শুভ কেমন মানুষ। তাঁরাও বলেছে শুভ খুন করেনি।

    তিনি বলেন, একটি চক্র এই মামলায় শুভকে ফাঁসিয়ে আমাদের কাছ থেকে বিভিন্ন আর্থিক সুবিধা আদায়ের চেষ্টা চালাচ্ছে। এই ধরনের মিথ্যা মামলা ও হয়রানি থেকে মুক্তি পেতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

    এলাকাবাসীর বক্তব্য:

    মাসুমপুর উকিলপাড়া এলাকার বাসিন্দা আখতার হোসেন বলেন, শহিদুজ্জামান শুভ শুধু সিরাজগঞ্জ শহরে মানবিক কাজ করেন না, তিনি জেলার আনাচ-কানাচে যেখানে অসহায় দুস্থ মানুষ আছে সেখানেই দুইহাত ভরে সহযোগিতা করতেন। তার মতো একজন মানুষ কখনোই এই ঘটনায় সম্পৃক্ততা থাকতে পারেন না। এজন্য অভিযোগের সত্যতা যাচাই করে তার নিঃশর্ত মুক্তি দেওয়া উচিৎ।

    এলাকাবাসী রাজ্জাক, ইউসুফ ও ওয়ারেস বলেন, নিহত আশফাকুল আওয়ালও একজন ভালো মানুষ ছিলেন। যেকোনো কারণেই তার মৃত্যু হয়ে থাকুক না কেন, তার সঠিক তদন্ত হওয়ার দরকার। আর নিহতের ঘটনায় কোনো নিরপরাধ মানুষ শাস্তি পাক, এটিও কারোরই কাম্য নয়।

    পুলিশের বক্তব্য:

    ময়না তদন্তের প্রতিবেদনের এবং সুরতহালের প্রতিবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে সিরাজগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হুমায়ুন কবির বলেন, এ বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত তদন্ত কর্মকর্তা ভালো বলতে পারবেন।

    পরে এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মো. সোহাগ বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে আঘাতের কোন চিহ্ন না পাওয়ায় এবং মৃত্যুর সঠিক কারণ জানতে লাশ ময়নাতদন্তের জন্যে প্রেরণ করি। আমরা ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পেয়েছি। শ্বাসরোধ করে আউয়ালকে হত্যা করা হয়েছে এমন প্রতিবেদন আমাদের হাতে এসেছে। এই প্রতিবেদন এবং পুলিশের তদন্তের ওপর ভিত্তি করেই মামলার পরবর্তী কার্যক্রম চলমান থাকবে।

    সম্পর্কিত:

    সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি

    সর্বশেষ প্রকাশিত

    Loading…