মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডের রংধনু আবাসিক হোটেলে নিয়ে স্ত্রী রুকসানাকে (৩৬) গলাকেটে হত্যার ঘটনায় ঘাতক স্বামী রুবেলকে (৩৭) গ্রেফতার করেছে র্যাব-৪ (সিপিসি-৩)।
সোমবার (২৫ নভেম্বর) দিবাগত রাত পৌনে ১২টার দিকে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় রাজধানীর মিরপুর মডেল থানাধীন মাজার রোড এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
মঙ্গলবার বিকেলে র্যাবের লে: কমান্ডার মো. আরিফ হোসেন এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
গ্রেফতারকৃত রুবেল মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার মত্ত এলাকার মো. লাল মিয়ার ছেলে।
গ্রেফতার করার সময় আসামির কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত চাকু এবং ভিকটিমের মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।
র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামি রুবেল তার স্ত্রী রুকসানাকে হত্যার বিষয়টি স্বীকার করেন।
প্রেস বিজ্ঞপ্তি মতে, প্রায় ১৮ বছর পূর্বে নওগাঁ জেলার আত্রাই উপজেলার সাহাগোলা এলাকার মো. সাহেবের সাথে বিয়ে হয় নিহত রুকসানার। এরপর পারিবারিক বিষয় নিয়ে প্রায়শই স্বামীর সঙ্গে মনোমালিন্য হতো তার। এক পর্যায়ে বিবাহ বিচ্ছেদ হয় তাদের। এরপর রুকসানা জীবিকার তাগিদে ঢাকায় চলে আসেন এবং সাভারের গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে চাকরি নেন।
সেখানে সেবা নিতে আসা রুবেলের সাথে পরিচয় হয় রুকসানার। পরিচয়ের এক পর্যায়ে তারা প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন এবং অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে উভয়ের সম্মতিতে ২০২২ সালে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন তারা। বিবাহের পর থেকে স্বামী রুবেল কোনো জীবিকা নির্বাহ না করে রুকসানার জীবিকার উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। এ নিয়ে প্রায়ই দ্বন্দ্ব হতো তাদের। ঘটনার ৭ দিন পূর্বে স্বামী রুবেলকে আবারও জীবিকা নির্বাহের জন্য তাগিদ দেয় রুকসানা। কোন কাজ না করলে বিবাহ বিচ্ছেদের হুমকিও দেন রুকসানা।
এতে ক্ষুব্ধ হয়ে পূর্ব পরিকল্পনার অংশ হিসেবে গত রবিবার দিবাগত রাতে শ্বশুর বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে রাত দেড়টার দিকে রাত্রি যাপনের উদ্দেশ্যে রংধনু আবাসিক হোটেলের ৫২৬নং কক্ষে উঠেন তারা। আবাসিক হোটেলে পারিবারিক বিষয় নিয়ে ফের বাকবিতণ্ডা হয় তাদের। এক পর্যায়ে রুকসানা রাত সাড়ে তিনটার দিকে ঘুমিয়ে পড়লে স্বামী রুবেল তার সাথে থাকা ধারালো চাকু দ্বারা রুকসানাকে জবাই করে মৃত্যু নিশ্চিত করে ভিকটিমের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ও হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত চাকু নিজ হেফাজতে নিয়ে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।
এরপর গত সোমবার সকাল নয়টার দিকে হোটেলটির ম্যানেজার সেই কক্ষের সামনে ডাকাডাকি করলে কোন সাড়া শব্দ না পেয়ে চলে যায়। পরবর্তীতে হোটেল ম্যানেজার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে পুনরায় ডাকাডাকি করে শব্দ না পেয়ে কক্ষের দরজা ধাক্কা দিলে দরজা খুলে গেলে রুকসানার গলাকাটা মরদেহটি দেখতে পেয়ে স্থানীয় পুলিশ ও র্যাবকে অবহিত করেন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে মরদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজের মর্গে প্রেরণ করেন।
র্যাবের লে: কমান্ডার মো. আরিফ হোসেন বলেন, সিসিটিভি ফুটেজ, ঘটনাস্থলে থাকা পারিপার্শ্বিক আলামত ও তথ্যের ভিত্তিতে হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করা হয়েছে এবং অভিযুক্ত রুবেলকে রাজধানীর মাজার রোড এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত চাকু এবং ভুক্তভোগীর মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।
আটকের পর অভিযুক্ত রুবেল ঘটনার দায় স্বীকার করেছে। এ ঘটনায় সদর থানায় একটি হত্যা মামলা রুজু প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
গ্রেফতারকৃত আসামিকে মানিকগঞ্জ সদর থানায় হস্তান্তর প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
এআই