রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার করমচাঁদপুর গ্রামের চাষি মোহাম্মদ লুৎফুর রহমান। গতবছর কৃষিবিপণন অধিদপ্তর থেকে পেঁয়াজ সংরক্ষণের জন্য মডেল ঘর পেয়ে ২শ মণ পেঁয়াজ সংরক্ষণ করে রাখেন তিনি। আশা ছিল নভেম্বর মাসে বেশি দামে বাজারে বিক্রি করবেন। অথচ তার সেই আশা পূরণ হলো না অনেক আগেই ধরছে পচন । ২শ’ মণ পেঁয়াজের অর্ধেকের বেশি পেঁয়াজ পচে গেছে বলে অভিযোগ তার। ফলে লোকসানের মুখে পড়েছেন তিনি।
মডেল ঘর থেকে পেঁয়াজ পচে যাওয়ার আরও অভিযোগ করলেন বালিয়াকান্দি উপজেলার চাষি হারুণ অর রশিদ ,কালুখালী উপজেলার এতেম আলী বিশ্বাস ও পরশ আলী খান। তাদের অভিযোগ সরকার থেকে পেঁয়াজ সংরক্ষনের জন্য মডেল ঘরের সুবিধা মেলেলি। সংরক্ষণে রাখার চার থেকে পাঁচ মাস পরেই পেঁয়াজে পচন ধরেছে। কৃষিবিপণন অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের আশ্বাস ছিলো মার্চ থেকে নভেম্বর পর্যন্ত এই ঘরে পেয়াজ ভালো থাকবে। অথচ আরও দুই তিন মাস আগেই পচন ধরেছে।
চাষি মোহাম্মদ লুৎফুর রহমান বলেন, সরকার থেকে পিজ রাখার জন্য আমাদের একটা ঘর দিয়েছিলো। নভেম্বর পর্যন্ত রাখার কথা বলেছিলো। যাতে বাড়তি দামে বিক্রি করা যায়।কিন্তু এখন পেঁয়াজে যে পরিমাণ পচন ধরেছে তাতে লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশি অর্ধেকের বেশি পচে গেছে। কৃষি বিপণন কর্মকর্তাদের কথা মত পেঁয়াজ রেখে এখনতো আমি ক্ষতির মুখে পড়ে গেছি।
মোহাম্মদ লুৎফুর রহমান আরও বলেন, মাচায় রাখা পেঁয়াজ থেকে পচা পেঁয়াজ আলাদা করেছি। দেখেন পচে তো গেছেই আবার গাছও জালিয়েছে। সব লস হওয়ার আগেই পচা পেঁয়াজ বেছে ভালো গুলো বিক্রি করে দিবো।
চাষি হারুণ অর রশিদ বলেন, কৃষিবিপণন অধিদপ্তর থেকে যে ঘর পাইছিলাম সেই ঘরে অনেক পেঁয়াজ সংরক্ষণ করে রাখা যায়। পেঁয়াজ ৩ থেকে ৪ মাস রাখার পরে যেভাবে ভালো থাকার কথা সেভাবে থাকে নাই। পচন ধরে যাওয়ায় পেঁয়াজ বিক্রি করে দিতে হয়েছে। যদি পেঁয়াজ নষ্ট না হতো তাহলে আরও দীর্ঘদিন সংরক্ষণে রেখে বাজারের চাহিদা মত বিক্রি করতে পারতাম।
কালুখালী উপজেলার এতেম আলী বিশ্বাস বলেন, কর্মকর্তারা তো বলেছিল ৯ মাস পেঁয়াজ ভালো থাকবে। ঘরে ২শ মণ পেঁয়াজ রেখেছিলাম। অর্ধেক পেঁয়াজ চার থেকে পাঁচ মাস আগে বেচে দিয়েছিলাম। আর অর্ধেকে দেখি পচন ধরেছে পরে সেগুলো বিক্রি করে ফেলেছি। সুবিধা তো পাচ্ছি না ঘরের। সংনক্ষণের ৪ থেকে ৬ মাসেই পচন ধরেছে।
একই উপজেলার পরশ আলী খান বলেন, আমি আরও দুই মাস আগে পেঁয়াজ বিক্রি করে দিয়েছি। সে সময় বেশি একটা পচন ধরেছিলো না। মনে করে মণ প্রতি ৫ কেজি ৭ কেজি করে নষ্ট হয়েছে। নভেম্বর মাস পর্যন্ত রাখলে বোঝা যেতো কতটা পচেছে।
রাজবাড়ী কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মাঠ কর্মকর্তা মোঃ রাজিব খান জানায়, ২০২২-২৩ ও ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে বালিয়াকান্দি ও কালুখালী উপজেলায় পেয়াজ সংরক্ষণের জন্য ৫০টি মডেল ঘর নির্মাণ করে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। প্রতিটি ঘর নির্মাণে খরচ হয়েছে সাড়ে ৪ লাখ টাকা। বাড়ির উঠান বা ফাঁকা জায়গায় মাত্র ১ শতাংশ জমিতে টিন-বাঁশ, লোহা ও কংক্রিটের সমন্বয়ে তৈরি করা ঘরে রয়েছে ৬টি তাপনিয়ন্ত্রণ ফ্যান ও তিন স্তরের মাচা। প্রতিটা ঘরে সংরক্ষণ করা যায় সাড়ে ৩শ’ থেকে ৪শ’ মণ পেঁয়াজ।
মোঃ রাজিব খান আরও জানায়, মডেল ঘরে ৯ মাস পর্যন্ত পেঁয়াজ ভালো থাকার কথা থাকলেও এবছর অতিরিক্ত গরম ও হাইব্রিড জাতের পেঁয়াজ সংরক্ষণের কারণে চাষিদের কিছুটা পেঁয়াজ নষ্ট হয়েছে। কৃষকেরা আগে যেভাবে পেঁয়াজ রাখতেন সে সময় ২০-৩০ শতাংশ পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যেতো। তবে আমাদের ঘরে যারা পেঁয়াজ সংরক্ষণ করেছে সেখানে পেঁয়াজ নষ্ট হয়েছে খুবই কম। আর ওজনের যে হ্রাস সেটা ৫-৭ শতাংশ কমেছে।
এইচএ