নেত্রকোনা মুক্ত দিবসে দিনব্যাপী নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পালিত হচ্ছে দিনটি। জেলা প্রশাসনের আয়োজনে শহরের মোক্তারপাড়া মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন থেকে একটি বর্ন্যাঢ্য আনন্দ র্যালি বের হয়।
সোমবার (০৯ ডিসেম্বর) সকালে র্যালিটি প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে কালেক্টরেট প্রাঙ্গণে গিয়ে শেষ হয়।
সেখানে বেলুন উড়িয়ে উদ্বোধন শেষে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে নির্মিত “প্রজন্ম শপথ” ভাস্কর্য্যে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় জেলাবাসী। প্রথমে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে নিয়ে জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস ও পুলিশ সুপার মির্জা সায়েম মাহমুদ শ্রদ্ধা জানান। পরে মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমান্ডের উদ্যোগে সাবেক কমান্ডারগণ পুস্পস্তবক অর্পন করেন।
এরপর উন্মুক্ত করে দিলে একে একে বিভিণœ প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন রাজনৈতিক দল সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়। এদিকে দীর্ঘ ১৭ বছর পর বিএনপির নেতৃবৃন্দ নেত্রকোনা মুক্ত দিবসে অংশ নিয়ে উৎফুল্লতা প্রকাশ করে জিয়ার সৈনিক দিতে থাকে। এরপর পাবলিক হল মিলনায়তনে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
এই দিনে মরণপন লড়াই করে নেত্রকোনা শহরকে পাক হানাদার মুক্ত করেছিলো বাংলা মায়ের দামাল ছেলেরা। ৮ ডিসেম্বর রাত থেকেই শহরের বর্তমান কৃষিফার্ম এলাকায় এম্বুশ পেতে অপেক্ষায় ছিলেন বাংলা মায়ের দামাল ছেলেরা। টাইগার খ্যাত বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু সিদ্দিক আহমদের নেতৃত্বে ভোরের আলো ফোটতেই শুরু হয় তুমুল যুদ্ধ। মরণপণ লড়াই করে নেত্রকোনা শহরকে মুক্ত করতে সন্মুখ সমরে শহীদ হয়েছিলেন আবু খাঁ, আব্দুস সাত্তার, আব্দুর রশিদ।
৮ ডিসেম্বর রাত থেকে শুরু করে রাজুরবাজার, চকপাড়া, সাতপাই, কাটলী, নাগড়া, কৃষিফার্ম এলাকা থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধারা ৯ ডিসেম্বর সকাল ১০ টা পর্যন্ত অবিরাম যুদ্ধ চালিয়ে পাকিদের ময়মনসিংহের দিকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করে।
তিনজন মুক্তিযোদ্ধার স্মরণে একটি স্মৃতিফলকও হয়েছিল। কিন্তু অযত্নে অবহেলায় পড়ে থাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের দাবির প্রেক্ষিতে স্বাধীনতার ৪৪ বছর পর তৎকালীন জেলা প্রশাসক তরুণ কান্তি শিকদার কালেক্টরেট প্রাঙ্গণেই নির্মাণ করেন প্রজন্ম শপথ।
বীরত্বগাথা দিবসটি স্মরণে ‘প্রজন্ম শপথ’ নামের ভাস্কর্য নির্মাণে খুশি হয়েছিলেন মুক্তিযোদ্ধারা। দিবসটির সঠিক ইতিহাস নিয়ে প্রজস্মের কাছে তুলে ধরতে হবে বলে জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে দিবসটি পালিত হয়।
যে কারণে জেলা প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানান সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা হায়দার জাহান চৌধুরী। তিনি বলেন, আমাদের ১৬ ডিসেম্বর যেমন আনন্দের ঠিক ৯ ডিসেম্বর নেত্রকোনাবাসীর কাছে তেমনি আনন্দের। শহর শত্রু মুক্ত হতেই চারদিক থেকে মানুষ হৈ হুল্লোড় করে আনন্দে বাড়ি ঘর থেকে বেরিয়ে আসে। আমাদেরকে অভিনন্দন জানায়। এ দিনটি আসলে আমরা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ি।
নেত্রকোনার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সূত্রে পাওয়া তথ্য মতে, স্বাধীনতা যুদ্ধে নেত্রকোনা জেলার ৩ হাজার ৪২৭ জন মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তার মধ্যে মুসলিম যোদ্ধা ২ হাজার ৯০৮ জন এবং হিন্দু ছিলেন ৪২৮ জন, আদিবাসী ছিলেন ৯১ জন। এর মধ্যে কোম্পানি কমান্ডার ছিলেন ৩৪ জন। শহীদ হয়েছেন মোট ৬৬ জন।
এআই