ময়মনসিংহের ৩টি রেলপথে ৮ জোড়া এবং ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ রেলপথে ভাওয়াল মেইল ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন স্থানীয় চাকরিজীবী, শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেণি পেশার মানুষ। সড়ক পথে গন্তব্যে যেতে তাদের সময় ও টাকা লাগছে বেশি। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।
গত ২ ডিসেম্বর মাইলেজ বন্ধের প্রতিবাদে রানিং স্টাফদের লাগাতার আন্দোলনে ৮ দিন ধরে লোকাল ট্রেনগুলোর চলাচল বন্ধ রয়েছে।
সোমবার (৯ ডিসেম্বর) বিকেলে ময়মনসিংহের রেলওয়ে স্টেশন ঘুরে দেখা গেছে এই চিত্র।
রাকিবুল ইসলাম নামে এক কলেজ শিক্ষার্থী বলেন, আমি লোকাল ট্রেনে নিয়মিত যাতায়াত করি কিন্তু ৮ দিন ধরে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়েছি। বাড়তি টাকা খরচ করে কলেজে যেতে হচ্ছে।
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী জলিল মিয়া বলেন, গ্রাম থেকে ট্রেনে করে পাইকারী দরে সবজি এনে শহরে বিক্রি করি কিন্তু লোকাল ট্রেন বন্ধ থাকায় অতিরিক্ত খরচে সবজি নিয়ে শহরে বিক্রি করে লাভ হয় না।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, রেলওয়ের ১৮৩২ সালের আইন অনুযায়ী ট্রেন চালক, সহকারী চালক, পরিচালক ও টিকিট কালেক্টরদের বিশেষ সুবিধা প্রদান করা হয়। ৮ ঘণ্টা কর্মদিবস হলেও রানিং স্টাফদের গড়ে ১৫-১৮ ঘণ্টা কাজ করতে হয়। এ জন্য তাদের দেওয়া হয় বিশেষ আর্থিক সুবিধা যাকে রেলওয়ের ভাষায় মাইলেজ বলে। সেই মাইলেজ সুবিধা বাতিল করার কারণে ৮ দিন ধরে নির্ধারিত ৮ ঘণ্টার বেশি দায়িত্ব পালন করছেন না রানিং স্টাফরা। সেজন্যেই লোকবল সংকটের কারণে লোকাল ট্রেনগুলো চালানো যাচ্ছে না।
এদিকে আন্তঃনগর, কমিউটার এবং মেইল ট্রেন চলাচল করলেও রানিং স্টাফরা অতিরিক্ত ডিউটি না করায় প্রত্যেকটি ট্রেন ১/২ ঘণ্টা করে বিলম্বে চলাচল করছে।
রানিং স্টাফরা জানান, ২০২২ সালে নিয়োগ পাওয়া চালক, টিটিসহ অন্যান্যদের মাইলেজ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে না। এছাড়া পরবর্তীতে যারা নিয়োগ পাবেন তারাও মাইলেজ সুবিধা পাবে না। স্টাফ এলএম গার্ড ও টিটিই সংকটের কারণে ময়মনসিংহ থেকে নেত্রকোনার জারিয়া, মোহনগঞ্জ ও জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ রেলপথে লোকাল ট্রেন ৮ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে।
ময়মনসিংহ অঞ্চলে ৮ জোড়া লোকাল ট্রেন এবং ঢাকা দেওয়ানগঞ্জ রেলপথে ভাওয়াল মেইল ট্রেন ১ ডিসেম্বর থেকে চলাচল বন্ধ। লোকাল ট্রেনগুলো বন্ধ থাকায় দুর্ভোগে পড়েছেন এসব ট্রেনে চলাচলকারী যাত্রীরা।
রেলওয়ে রানিং স্টাফ, শ্রমিক ও কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম জানান, দীর্ঘ ১৬০ বছরের বেশি সময় ধরে রেলওয়ে রানিং স্টাফদের মাইলেজ সুবিধা চালু ছিল। কিন্তু ২০২২ সালে নতুন নিয়োগপ্রাপ্তদের থেকে মাইলেজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে এর আগে নিয়োগপ্রাপ্তরা এখনো ও মাইলেজ সুবিধা পেলেও ২০২১ সালে অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি পরিপত্রে পেনশন ও আনুপাতিক পার্ট অব পে মাইলেজ সুবিধা বাতিল করা হয়। বৈষম্যমূলক এই সিদ্ধান্ত বাতিল করে সবার জন্য মাইলেজ সুবিধা, পেনশন এবং আনুপাতিক পার্ট অব পে মাইলেজ চালু করতে হবে।
তিনি জানান, এই দাবি নিয়ে তারা কর্মবিরতি পালন করছে। তাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবে বলেও ঘোষণা দিয়েছে। বন্ধ মাইলেজ চালুর দাবিতে সোমবার পর্যন্ত ৮ দিনের মতো কর্মবিরতি পালন করছেন রেলওয়ে রানিং স্টাফ, শ্রমিক ও কর্মচারী ইউনিয়ন।
ময়মনসিংহ রেলওয়ে স্টেশন সুপারিনটেনডেন্ট নাজমুল হক খান বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে লোকাল ট্রেনগুলো চলাচল বন্ধ করা হয়েছে। উপরের নির্দেশনা পেলেই চালু করা হবে।
এইচএ