এইমাত্র
  • বরিশালে চলছে অনির্দিষ্টকালের নৌ ধর্মঘট
  • সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডে ৫ মন্ত্রণালয়ের নথি পুড়ে গেছে: আসিফ মাহমুদ
  • সেন্টমার্টিন থেকে ফেরার পথে জাহাজ বিকল, আটকা ৭১ যাত্রী
  • ভাঙছে ইন্ডিয়া জোট!
  • স্বর্ণ চোরাচালানের অভিযোগে চট্টগ্রামে উড়োজাহাজ জব্দ
  • ওমরাহ পালনকারীদের জন্য সু-সংবাদ দিলো সৌদি আরব
  • ভোলায় মাদ্রাসার ছাদ থেকে পড়ে ছাত্রের মৃত্যু
  • সাভারে বন্ধ টিএমআর কারখানা চালুর নির্দেশনা উপদেষ্টার
  • কনস্টাসকে ধাক্কা দিয়ে সাসপেন্ড হতে পারেন কোহলি
  • সাকিবের দেশে ফিরতে না পারাকে ব্যর্থতা হিসেবে দেখছেন সুজন
  • আজ শুক্রবার, ১৩ পৌষ, ১৪৩১ | ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪
    দেশজুড়ে

    পরিযায়ী পাখির কলরবে মুখর নলুয়ার বিল

    মো. জাহেদুল ইসলাম, সাতকানিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি প্রকাশ: ৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৩১ পিএম
    মো. জাহেদুল ইসলাম, সাতকানিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি প্রকাশ: ৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৩১ পিএম

    পরিযায়ী পাখির কলরবে মুখর নলুয়ার বিল

    মো. জাহেদুল ইসলাম, সাতকানিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি প্রকাশ: ৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৩১ পিএম

    চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার জলাভূমি নলুয়ার বিল এখন পরিযায়ী পাখির কলকাকলিতে মুখর। পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে পরিযায়ীরা আসর জমিয়েছে এখানে। দেশি—বিদেশি পাখির কিচিরমিচির ডাক ও ঝাঁক বেঁধে আকাশে ওড়ার বিমোহিত দৃশ্য দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করছে।

    এসব পাখির ছোটাছুটির দৃশ্য দেখতে প্রতিদিন ওই এলাকায় ছুটে আসছেন পাখিপ্রেমিরা। ঝাঁক বেঁধে পাখিগুলোর ছোটাছুটি, ওড়াউড়ি, কিচির—মিচির শব্দে মুখরিত অঞ্চলটি। কখনো জলাশয়ের স্বচ্ছ জলে, আবার কখনো গাছের মগডালে বসে সৃষ্টি করছে মনোরম পরিবেশ।

    জানা যায়, শীতকালে উষ্ণতার খোঁজে শীতপ্রধান বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশের জলাধারগুলোকে নিরাপদ আবাসস্থল হিসেবে বেছে নেয় পরিযায়ী পাখি। সবুজে ঘেরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত বিলগুলো শীত মৌসুমের অতিথিদের বরণ করে নিতে প্রস্তুতি নিয়ে থাকে।

    সাতকানিয়ার নলুয়ার বিলে প্রতিবছরের মতো এবারও এসেছে অসংখ্য পরিযায়ী পাখি। প্রতিদিন ভোরে কুয়াশার আঁচল ভেদ করে দল নিয়ে উড়ে চলা পাখির ডানার শো—শো শব্দ আর কলতানে ঘুম ভাঙে জলাধারের পাশের বাসিন্দাদের। এবারও বিলের কচুরিপানা ও জলজ উদ্ভিদের মাঝে খোলা পানিতে জলকেলিতে মেতে উঠেছে পাখিরা।

    শীতকালের এই সময়টাতে হাজার হাজার মাইল দূর থেকে উড়ে আসা পরিযায়ী পাখিরা যোগায় আনন্দের খোরাক। প্রতিদিন ভোর হতে সন্ধ্যা পর্যন্ত তাদের কলকাকলিতে মুখর হয়ে ওঠে বিলের আশপাশের এলাকা। গাছের ডালে বসে পাখিদের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি থাকে পানির দিকে। কখন একটা মাছ পানির ওপর ভেসে উঠবে কিংবা কখন গাছ থেকে একটা পোকামাকড় পানিতে এসে পড়বে—সেই আশায়। খাবার মিললেই ছোঁ মেরে নিয়ে দে ছুট।

    নানান রঙের পরিযায়ী পাখিরা দল বেঁধে বিলের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে বেড়ায় সারাক্ষণ। পানিতে পেখমের ঝাপটায় অবতারণা হয় অপরূপ দৃশ্যের। এই দৃশ্য দেখতে স্থানীয়রা প্রতিদিন ওই এলাকায় বসে সময় পার করেন। দুপুরের পর পাখিরা একসঙ্গে দল বেঁধে স্নান পর্ব সেরে নেয়। একঝাঁক পাখি বিলের পানিতে নেমে গা ভিজিয়ে নেয়, তারপর দেয় উড়ান। মুহূর্তেই পানিতে নেমে আসে আরেক ঝাঁক পাখির দল। কিছু মানুষ মাঝেমধ্যে পাখিদের ওড়াওড়ি দেখতে ঢিল ছুঁড়ে মারে। তখন পাখিগুলো উড়ে যায় দূর আকাশে।

    এদিকে, এক শ্রেণির শিকারি অভিনব কায়দার নানা ফাঁদ ফেলে পরযায়ী পাখি শিকার করছেন। কেউ কেউ এসব পাখি শিকার করে স্থানীয় বাজারে চড়া দামে বিক্রি করছেন।

    বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী, পাখি শিকার ও বিক্রি দণ্ডনীয় অপরাধ। ১৯৭৪ সালের বন্যপ্রাণী রক্ষা আইন ও ২০১২ সালে বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন অনুযায়ী, পাখি নিধনের সর্বোচ্চ শাস্তি এক বছরের জেল বা এক লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার কথা বলা হয়েছে। একই অপরাধ আবার করলে শাস্তি ও জরিমানা দ্বিগুণের বিধানও রয়েছে।

    বান্দরবান সরকারি কলেজের স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির শিক্ষার্থী ও পাখিপ্রেমি নাসিম জুবায়ের বলেন, এ দেশে এসে শিকারির ফাঁদে পড়ছে পরিযায়ী পাখি। তাই তাদের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। পাখি শিকার বন্ধের পাশাপাশি তারা যাতে নিরাপদে ঘুরে বেড়াতে পারে, সেদিকে সবার লক্ষ্য রাখা উচিত।

    পৃথিবীতে প্রায় ৫ লাখ প্রজাতির পাখি আছে। এসব পাখির মধ্যে অনেক প্রজাতিই বছরের একটি নির্দিষ্ট সময় অন্য দেশে চলে যায়। শুধু ইউরোপ আর এশিয়ায় আছে প্রায় ৬০০ প্রজাতির পাখি। কিছু কিছু পাখি তাই প্রতিবছর ২২ হাজার মাইল পথ অনায়াসে পাড়ি দিয়ে চলে যায় দূরদেশে।

    বরফ শুভ্র হিমালয় এবং হিমালয়ের ওপাশ থেকেই বেশিরভাগ পরিযায়ী পাখির আগমন ঘটে। এসব পাখিরা হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত তিব্বতের লাদাখ থেকে সেন্ট্রাল এশিয়ান ইন্ডিয়ান ফ্লাইওয়ে দিয়ে প্রবেশ করে। এ ছাড়া ইউরোপ, দূরপ্রাচ্য সাইবেরিয়া থেকেও এসব পাখি আসে। এরা কিছু সময় পর আবার ফিরে যায় নিজ দেশে।

    এসব পাখির মধ্যে বাংলাদেশের অতি পরিচিতি অতিথি পাখি নর্দান পিনটেইল। এছাড়া স্বচ্ছ পানির বালি হাঁস, খয়রা চকাচকি, কার্লিউ, বুনো হাঁস, ছোট সারস পাখি, বড় সারস পাখি, হেরন, নিশাচর হেরন, ডুবুরি পাখি, কাদাখোঁচা, গায়ক রেন পাখি, রাজসরালি, পাতিকুট, গ্যাডওয়াল, পিনটেইল, নরদাম সুবেলার, কমন পোচার্ড, বিলুপ্ত প্রায় প্যালাস ফিস ঈগল (বুলুয়া) ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

    এছাড়াও নানান রঙ আর কণ্ঠ বৈচিত্র্যের পাখিদের মধ্যে রয়েছে— ধূসর ও গোলাপি রাজহাঁস, বালি হাঁস, লেঞ্জা, চিতি, সরালি, পাতিহাঁস, বুটিহাঁস, বৈকাল, নীলশীর পিয়াং, চীনা, পান্তামুখি, রাঙামুড়ি, কালোহাঁস, রাজহাঁস, পেড়িভুতি, চখাচখি, গিরিয়া, খঞ্জনা, পাতারি, জলপিপি, পানি মুরগি, নর্থ গিরিয়া, পাতিবাটান, কমনচিল, কটনচিল প্রভৃতি।

    এমআর

    সম্পর্কিত:

    সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি

    Loading…