বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন শুনানি এগিয়ে আনতে আবেদন করেছেন এক আইনজীবী।
বুধবার (১১ ডিসেম্বর) সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট রবীন্দ্র ঘোষ চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ মো. সাইফুল ইসলামের আদালতে এ আবেদন করে। তবে এদিন শুনানিতে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির কোনো সদস্য উপস্থিত ছিলেন না।
এ বিষয়ে চট্টগ্রামের এক আইনজীবী গণমাধ্যমকে বলেন, গত ৩ ডিসেম্বর চিন্ময় দাসের জামিন আবেদন শুনানির দিন ধার্য ছিল। কিন্তু ওইদিন চিন্ময়ের পক্ষে কোনো আইনজীবী আদালতে উপস্থিত ছিলেন না। পাশাপাশি রাষ্ট্রপক্ষও শুনানির জন্য সময়ের আবেদন করেন। এসবের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত জামিন শুনানির জন্য ২০২৫ সালের ২ জানুয়ারি ধার্য করেন।
কিন্তু এর মধ্যে আজ (বুধবার) আসামিপক্ষে ঢাকা থেকে আসা একজন আইনজীবী জামিন শুনানির তারিখ এগিয়ে আনার জন্য আবেদন করেন। তবে আবেদনে আসামিপক্ষের ওকালতনামা নেই এবং ফাইলিং আইনজীবীরও লিখিত অনুমতি নেই। তাই মহানগর দায়রা জজ আদালত আবেদনটি নট মেইন্টেইনেবল বলেছেন।
আদালতে আসামি চিন্ময়ের পক্ষে জমা দেওয়া আবেদনে আইনজীবী রবীন্দ্র ঘোষ উল্লেখ করেন, অভিযুক্ত চিন্ময় দাস একজন সন্ন্যাসী। তিনি সনাতনীদের পবিত্র তীর্ঘপীঠ শ্রী শ্রী পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ এবং বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের একজন প্রধান মুখপাত্র। মামলায় চিন্ময়ের বিরুদ্ধে বাদীর অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট এবং বিভ্রান্তিকর। তাছাড়া চিন্ময় দাস দীর্ঘমেয়াদি পাকস্থলী, কার্ডিওভাসকুলার, ডায়াবেটিস ও শ্বাসকষ্ট রোগে আক্রান্ত। তার পক্ষে নিয়োজিত আইনজীবীকে বিভিন্ন মাধ্যমে এ মামলা পরিচালনা তথা শুনানি না করার জন্য হুমকি দেওয়া হয়েছে। তাই শুনানিতে তিনি আদালতে উপস্থিত হতে পারেননি। এটি সম্পূর্ণ ন্যায়বিচার বহির্ভূত।
যেহেতু চিন্ময়ের পক্ষের আইনজীবী নিরাপত্তাজনিত কারণে এ মামলার জামিন শুনানির ধার্য তারিখে আদালতে উপস্থিত হতে পারেননি, সেহেতু ন্যায়বিচারের স্বার্থে এই ফৌজদারি মামলার ধার্য তারিখ অগ্রবর্তী পূর্বক শুনানি করা একান্ত আবশ্যক। না হয় অভিযুক্ত ব্যক্তি ন্যায়বিচার থেকে সম্পূর্ণ বঞ্চিত হবেন।
জানা গেছে, গত ২৫ নভেম্বর বিকেলে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে যাওয়ার সময় শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে বাংলাদেশ পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সদস্যরা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেপ্তার করে। পরদিন কোতোয়ালি থানায় দায়ের হওয়া রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাকে মহানগর ষষ্ঠ কাজী শরীফুল ইসলামের আদালতে হাজির করা হয়। আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এ নিয়ে বিক্ষোভ করেন ইসকন অনুসারীরা। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান বিক্ষোভকারীরা। দুপুরের পর বিক্ষোভকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে আদালত এলাকায় মসজিদ-দোকানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে হামলা চালান। এসময় বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেলও ভাঙচুর করা হয়।
একপর্যায়ে বিকেলে আদালতের প্রধান ফটকের বিপরীতে রঙ্গম কনভেনশন হলের গলিতে একদল ইসকন অনুসারীর হাতে খুন হন অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম নামে এক আইনজীবী। তিনি চট্টগ্রাম আদালতের আইনজীবী ছিলেন।
এ ঘটনায় ২৯ নভেম্বর দিবাগত রাতে নগরের কোতোয়ালি থানায় ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা করা হয়। ভুক্তভোগীর বাবা জামাল উদ্দিন বাদী হয়ে মামলাটি করেন। একই ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় আরও কয়েকটি মামলা দায়ের হয়।
এবি