বাংলার মাটিকে মুক্ত করতে পাক-হানাদার বাহিনীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে বাঙালী জাতি। সোনালি অর্জন ৯ মাস যুদ্ধে অর্জিত হয়। অধরা স্বপ্নগুলো ধরা দেয় গৌরবময় মাস ডিসেম্বরে। পাক হানাদার বাহিনীর সঙ্গে দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে ১৯৭১ সালের এই মাসে বাঙালীরা বিজয় লাভ করে।
মুক্তিযুদ্ধে জীবন উৎসর্গকারীদের রক্তের বিনিময়ে প্রতিষ্ঠিত হয় লাল-সবুজের পতাকা।তাই ডিসেম্বর এলেই পথে-প্রান্তরে, হাটে-বাজারে মুক্তিযোদ্ধাদের স্বপ্ন ফেরি করে বেড়ান ভ্রাম্যমাণ হকাররা। মনের মাঝে ভালোবাসা আর শ্রদ্ধা যেমন তৈরি করছে তেমনি জীবিকাও জোগাচ্ছে এ পতাকা।
ডিসেম্বর মাসকে কেন্দ্র করে কয়েক ফুট লম্বা বাঁশের ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে বড় থেকে ছোট আকারের লাল-সবুজের পতাকা সাজিয়ে পথে পথে ঘুরে পতাকা বিক্রি করছেন একদল মানুষ, যাদের আমরা বলি ‘পতাকার ফেরিওয়ালা’।
দেখা গেছে শুধু পতাকা নয়, মাথায় ও হাতের জন্য লাল-সবুজের ব্যাজ, বাচ্চাদের জন্য প্লাস্টিকের হাতলসহ পতাকাও বিক্রি করছেন তারা।
রবিবার (১৫ ডিসেম্বর) চট্টগ্রামের বারইয়ারহাট পৌরবাজারে দেখা মিলে নুর ইসলাম (৫০) এ মোজাম্মেল হক (১৮) নামের দু'জন পতাকা ফেরিওয়ালাকে।
তাদের মধ্যে নুর ইসলামের বাড়ি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থানার চৌমুহনী এলাকায়, অপরজন মোজাম্মেলের বাড়ি নরসিংদী জেলার মাধবদী এলাকায়। তারা জনেই জানান, দেশের বিভিন্ন দিবসগুলোতে এভাবে ভ্রাম্যমান কাপড়ের তৈরি পতাকা বিক্রি করেন।
নুর ইসলাম জানান, ২ ছেলে ও ৪ মেয়ের নিয়ে তার সংসার। ৫ হাজার টাকা খরচ করে পতাকা, হাতে এবং কপালে লাগানো বিজয়ের ব্যাজ নিয়ে আসেন। বিজয়ের স্বাদ সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে। এদিন তিনি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ১ হাজার টাকা বিক্রি করেন।
মোজাম্মেল জানান, স্বাধীনতাযুদ্ধ দেখিনি। তবে বাপ-দাদার কাছে অনেক কাহিনি শুনেছি। হৃদয়ে রয়েছে স্বাধীনতার চেতনা । তাই বিজয় ও স্বাধীন দিবসের মাস এলেই ফেরি করে পতাকা বিক্রি করার জন্য নেমে পড়েন।
তিনি বলেন, এ সময়টাতে পতাকা, মাথায় ও হাতে বাঁধার ব্যাজ হতো। তাতে পতাকা বিক্রি থেকে আয় হয় প্রায় ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা।
তাদের কাছে রয়েছে- ৬ ফুটের একটি পতাকা বিক্রি করছেন ১৫০ টাকা, ৫ ফুট ১০০ টাকা, সাড়ে ৩ ফুট ৮০ টাকা, আড়াই ফুট ৫০ টাকা, দেড় ফুট ৩০ টাকা আর ১ ফুট ২০ টাকা এবং ফিতা আর ব্যান্ড বিক্রি করছেন ১০ টাকা দরে।
পতাকা কিনতে দেখা যায় আরিয়ানা নামের এক দেশপ্রেমিককে। তিনি জানান, বিজয় দিবস আমাদের গৌরবের। পাক হানাদার বাহিনীর গুলিতে আমাদের লক্ষ লক্ষ যোদ্ধারা জীবন দিয়েছে। তাদের কাছে আমরা সবসময় ঋণী। এই দিন আসলে অন্য রকম ভালো লাগা কাজ করে।
তিনি আরও বলেন, আমি একটি পতাকা নিয়েছি। আমার ছোট ভাই-বোনসহ সবার জন্য ১০টা মাথা ও হাতের ব্যাজ নিয়েছি।
এমআর