ভবন ছাড়া কিছুই অবশিষ্ট নেই। নেই সেই আগের মত পাঠাগারে গিয়ে বই পড়া পাঠকের আনাগোনা। বলছি বরিশাল জেলার গৌরনদী শহীদ স্মৃতি পাঠাগারে কথা। এখন উইপোকা-ইঁদুরের নিরাপদ বাসস্থান। নিজ উপজেলাসহ পাশ্ববর্তী এলাকার শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রী, যুবকসহ বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষের জ্ঞান আহরনের জন্য একসময় সরব ছিল ঐতিহ্যবাহী শহীদ স্মৃতি পাঠাগারটি। ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের গৌরনদী বাসস্ট্যান্ড সংলগ্নে অবস্থিত এই পাঠাগারটি দীর্ঘদিনেও সংস্কার না হওয়া এবং সংরক্ষণের অভাবে নিজেই যেন এখন স্মৃতি হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মৃতি স্মরণে নির্মিত পাঠাগারটি এখন উইপোকা আর ইঁদুরের নিরাপদ বাসস্থান।
সরেজমিনে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মরণে ১৯৭৫ সালের ৭ মে সরকারী গৌরনদী কলেজ ও গৌরনদী কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মসজিদের সামনে পাঠাগারটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন স্থানীয় সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী আব্দুর রব সেরনিয়াবাত। প্রতিষ্ঠার পর থেকে পদাধিকার বলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার পাঠাগারের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক পদের দায়িত্ব পালন করতেন সরকারি গৌরনদী কলেজের যেকোন একজন শিক্ষক।
সূত্রে আরও জানা গেছে, প্রতিদিন প্রায় দুই থেকে তিনশ’ পাঠক এসে এখানে বই পড়তেন। এছাড়া প্রায় শতাধিক সদস্য নিবন্ধন করে বই পড়ার জন্য বাড়ি নিয়ে যেতেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এক সময়ের সরব এই পাঠাগারে ছিলো নিবন্ধিত বিভিন্ন ভাষার দুর্লভ বই ও প্রতিদিনের বাংলা-ইংরেজী এবং সাপ্তাহিক পত্রিকা। এই পাঠাগারে ছিলো পরিচালনা কমিটি ও সহস্রাধিক আজীবন ও সাধারণ সদস্য। আটটি বৈদ্যুতিক ফ্যান, ১৫০টি চেয়ার ও ১৫টি বড় টেবিলসহ তিন কক্ষ বিশিষ্ট এই পাঠাগারটির দেখভাল করতেন একজন সহকারি লাইব্রেরিয়ান ও একজন নাইটগার্ড। পাঠাগারের বৈদ্যুতিক বিল ও স্টাফদের বেতন দেয়া হতো সদস্যদের চাঁদা ও বিশিষ্টজনদের অনুদান এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বিশেষ অনুদানের মাধ্যমে। সরকারিভাবে বাংলাদেশ বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র থেকে প্রতিবছর সাত হাজার টাকার বই দেয়া হতো এই পাঠাগারে।
গৌরনদীর প্রবীণ কবি ও লেখক শিকদার রেজাউল করিম বলেন, প্রথমে এই পাঠাগারটির নাম গৌরনদী শহীদ স্মৃতি পাঠাগার হিসেবে নামকরণ করা হয়। পরবর্তীতে ক্ষমতার পালা বদলে এর নাম পরিবর্তন করে গৌরনদী পাবলিক লাইব্রেরী করা হলেও আবার পুনরায় এর নাম গৌরনদী শহীদ স্মৃতি পাঠাগার করা হয়।
তিনি আরও বলেন, এখানে বাংলা, ইংরেজী, আরবী, ফারসি ভাষার অনেক দুর্লভ গ্রন্থ ছিল। পাঠাগারটির বর্তমান অবস্থান থেকে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে জোর দাবি করছি।
সার্বিক বিষয়ে গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও পৌর প্রশাসক মো. আবু আবদুল্লাহ খান বলেন, গৌরনদীবাসীর স্মৃতি বিজরিত শহীদ স্মৃতি পাঠাগারটি সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি এটি একসময় খুবই প্রানবন্ত ও জমাজমাট ছিল। এখানে ছিলো অসংখ্য দুর্লভ গ্রন্থ। মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মৃতি স্মরণে নির্মিত এই পাঠাগারটি সংরক্ষণের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে অচিরেই আমরা গঠণতন্ত্র অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
পিএম