কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার বুরুদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নাজমুল হুদা রুবেলের বাবার জানাযায় অংশ নিতে প্যারোলে সাময়িক সময়ের জামিন আবেদন না মঞ্জুর করে বাবার লাশ নেয়া হয় কারাগারে। লাশ কারাগারে নেয়ার ঘটনাকে নজীরবিহীন উল্লেখ করে হতবাক হয়েছেন অনেকেই।
সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে জেলগেট থেকে মরদেহবাহী অ্যাম্বুল্যান্সটি কারাগারের ভেতরে নিয়ে যায় কারা কর্তৃপক্ষ। সেখানেই শেষবারের মতো বাবার লাশ দেখেন ইউপি চেয়ারম্যান।
এর আগে গতকাল রবিবার (২৯ ডিসেম্বর) রাতে ইউপি চেয়ারম্যান রুবেলের বাবা জিয়া উদ্দিন রাজধানীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালে মারা যান।
আসামি পক্ষের আইনজীবী ও তার স্বজনদের দেয়া তথ্যে জানা যায়, জেলার পাকুন্দিয়া উপজেলার রবুরুদিয়া ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান নাজমুল হুদা রুবেল পাকুন্দিয়া থানায় বিভিন্ন অভিযোগে দায়েরকৃত তিনটি মামলায় গত (০৩ নভেম্বর) থেকে কারাগারে আটক রয়েছেন। রুবেলের বাবা জিয়া উদ্দিন গতকাল (২৯ ডিসেম্বর) চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকার একটি হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন।
পরে সোমবার বিকালে রুবেলের গ্রামের বাড়ি পাকুন্দিয়ার পুটিয়াতে অনুষ্ঠিত বাবার জানাযার নামাজে অংশ নেয়ার জন্য রুবেলের পক্ষে গতকালই জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্বপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক বরাবরে প্যারোলে সাময়িক মুক্তির আবেদন করেন তার আইনজীবী সুজিত কুমার দে। তবে জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মিজাবে রহমতকে নির্দেশ প্রদান করেন। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট প্যারোলে সাময়িক মুক্তির আবেদন না মঞ্জুর করে পিতার লাশ কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। কারাগারের গেটে নাজমুল হুদা রুবেলকে লাশ বহনকারী গাড়িতে তার পতিার লাশ দেখানো হয়।
রুবেলের আইনজীবী সুজিত কুমার দে জানান, আমার পেশাগত জীবনে কারাগারে লাশ পাঠানোর আর দেখি নাই।
ইউপি চেয়ারম্যানের মা নূরজাহান বেগম বলেন, অনেক চেষ্টা করেও কিছুক্ষণের জন্য ছেলের মুক্তির ব্যবস্থা করা যায়নি। তাই জেলেই বাবার লাশ নিয়ে এসেছি ছেলেকে একনজর দেখানোর জন্য।
কিশোরগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সিনিয়র আইনজীবী শহীদুল আলম শহীদ জানান, মানবিক কারণে জামিনে বা প্যারোলে মুক্তি পাওয়াটা একজন বিচারাধীন আসামির নৈতিক অধিকার। আমার দীর্ঘ ৪০ বছরের আইন পেশার অভিজ্ঞতায় কারাগারে লাশ পাঠানোর কথা কখনো শুনিনি। এটা আইন সম্মত নয়। বর্তমানে দেশে আইনের অব্যবহার বা যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মিজাবে রহমতের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, গোয়েন্দা সূত্রে আইন শৃংখলা পরিস্থিতি অবনিতির আশংকা থাকায় প্যারোলে সাময়িক মুক্তি না দিয়ে জেল গেটে লাশ দেখানোর ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেয়া হয়।
তবে অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র জেল সুপার জাহাঙ্গির হোসেন জানান, প্রয়োজনে ডান্ডাবেরী পরিয়ে পর্যাপ্ত পুলিশি নিরাপত্তা দিয়ে জানাযায় অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেয়া প্রশাসনের দায়িত্ব। কারাগারে লাশ পাঠানোর ঘটনা সম্পূর্ণ আইন বিরোধী ও অমানবিক। আমার সম্পূর্ণ চাকুরি জীবনে এমন ঘটনা দেখিনি।
কিশোরগঞ্জ জেলা কারাগারের জেল সুপার রীতেশ চাকমা জানান, জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কার্যালয় থেকে পাঠানো পত্র মোতাবেক আমরা কারাগারের গেটে লাশ দেখানোর সুযোগ করে দেই। এ ধরণের অভিজ্ঞতা এটাই প্রথম।
উল্লেখ, গত (০২ নভেম্বর) আওয়ামী লীগ সমর্থক বুরুদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নাজমুল হুদা রুবেলকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগে তিনটি মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে। বর্তমানে তিনি জেল হাজতে বন্দি রয়েছেন।
এআই